জবির ইমামকে অব্যাহতি সমালোচনার মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
- জবি প্রতিনিধি,
- ৩০ মে ২০২৪, ০০:৩৩
উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম মো: ছালাহ উদ্দিনকে অব্যাহতি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। নারীদের নামাজের স্থানে এক ছাত্রীর ঘুমিয়ে পড়াকে কেন্দ্র করে তাকে সাময়িক অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মসজিদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন ইমাম। এ দিকে শিক্ষার্থীদের দাবি, মহিলা ভিসির মসজিদে প্রবেশ নিয়ে প্রতিবাদ করায় ইমামকে উদ্দেশ্যমূলক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
মসজিদের মুয়াজ্জিন শফিকুল ইসলাম ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ মে শারীরিক অসুস্থতাবোধ করায় জবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী কেন্দ্রীয় মসজিদের নারী শিক্ষার্থীদের নামাজের স্থানে ঘুমিয়ে পড়েন। মসজিদের মুয়াজ্জিন যখন বিষয়টি লক্ষ করেন তখন তিনি ইমামকে জানান। এরপর দু’জন সিকিউরিটি গার্ডের মাধ্যমে তাকে ডেকে তোলা হয়। ততক্ষণে ঘটনাস্থলে ইমাম এসে পৌঁছান এবং তিনি প্রক্টরকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানান। ওই শিক্ষার্থী ইমামকে জানান তিনি জবির বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হলের আবাসিক ছাত্রী। ইমাম তখন হলের হাউজ টিউটর সাজিয়া আফরিনের সাথে ওই ছাত্রীকে কথা বলিয়ে দেন এবং তাকে হলে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মসজিদে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ তুলে ইমামকে মৌখিক অব্যাহতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ বিষয়ে গত ২৭ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক আইনুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে পাঁচ সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মো: লুৎফর রহমানকে আহ্বায়ক ও সহকারী প্রক্টর খালিদ সাইফুল্লাহকে সদস্য সচিব করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. পারভীন আক্তার জেমী, আইসিটি সেলের পরিচালক ড. আমিনুল ইসলাম ও অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এ এন এম আসাদুজ্জামান ফকির। অফিস আদেশে রাত ১১টা ২০ পর্যন্ত মসজিদে ছাত্রীর অবস্থানে ইমামের দায়িত্ব অবহেলার বিষয়ে কমিটির কাছে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন চাওয়া হয়।
এ দিকে ইমামের অব্যাহতির বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ ও সমালোচনার ঝড় তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, মূল ঘটনার সূত্রপাত ১৭ মার্চ থেকে। সেদিন জাতীয় শিশু দিবস এবং জবি আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার মৃত্যুতে মাগফেরাত কামনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই মাহফিলে মসজিদের মিম্বরের পাশে নারী-পুরুষ সবাইকে একসাথে বসিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন মহিলা ভিসি সাদেকা হালিম। এ ঘটনায় কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন মসজিদের ইমাম ছালাহ উদ্দিন। ওই সময় মহিলা ভিসির মসজিদে প্রবেশের ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছিল। এ ঘটনার জেরেই ইমামকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলে শিক্ষার্থীদের ধারণা।
দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও ছাত্রী হলের হাউজ টিউটর সাজিয়া আফরিন সেই রাতের ঘটনা সম্পর্কে বলেন, ‘হ্যাঁ, সে আমাকে ফোন দিয়েছিল। আমাকে ঘুমিয়ে পড়ার বিষয়টি বলে। তার সাথে কথা বলে বুঝতে পারি, সে হলে নতুন হওয়ায় ভয় পাচ্ছিল। পরে আমি তাকে হলে ফেরার ব্যবস্থা করে দেই। নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে হলে দিয়ে আসে।’
কোনো অভিযোগ করেছিল কিনা- প্রশ্নের উত্তর তিনি বলেন, ‘না, সে কোনো অভিযোগ দেয়নি।
এ বিষয়ে মসজিদের ইমাম ছালাহ উদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। অন্য দিকে মসজিদে ঘুমিয়ে থাকা শিক্ষার্থীর সাথে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
মসজিদে ছাত্রী ঘুমানো ও ইমামের অব্যাহতির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমি তো ইমামের বা মেয়ের দোষ দিচ্ছি না। বিষয়টি হলো, মসজিদে একটা মেয়ে ঘুমাবে, কিন্তু ইমাম জানবে না, এটা তো হতে পারে না। এটা কি তার দায়িত্বে অবহেলা নয়! এজন্য তাকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। নামাজ পড়ানো থেকে নিষেধ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. এ কে এম লুৎফর রহমান বলেন, আমি গতকাল (সোমবার) জানতে পারলাম আমাকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। এর আগে এ ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না। সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কথা বলে দেখা হবে। তাই তদন্ত শেষ না হতে বিষয়টি নিয়ে বলা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিমের কাছে মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি অফিসে গিয়ে বক্তব্য নেয়ার কথা বলেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা