বেনজীরকে স্ত্রী-সন্তানসহ দুদকে তলব, বিও হিসাব জব্দ
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৯ মে ২০২৪, ০১:৪৭
পুলিশের সাবেক মহাপরিচালক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ এবং তার স্ত্রী ও তিন মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল মঙ্গলবার তাদের তলব করা হয়। দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো নোটিশে বেনজীর আহমেদকে আগামী ৬ জুন এবং তার স্ত্রী ও সন্তানদের ৯ জুন দুদকে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব জব্দ করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তলবের বিষয়ে দুদকের কমিশনার জহিরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার দরকার হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হয়, তার বক্তব্য জানতে হয়। আইনও সেটা বলে।
বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। দুদক বলছে, বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যরা দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিপুল জমি ও কোম্পানির শেয়ারের মালিকানা অর্জন করেছেন।
সম্প্রতি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অনুসন্ধানে কমিটি করে দুদক। দুদক বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের স্থাবর সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আবেদন করে। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার আদালত গত বৃহস্পতিবার বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক স্বজনের নামে থাকা ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি ক্রোক বা জব্দের আদেশ দেন। একই দিন বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে থাকা ৩৩টি ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্ট) অবরুদ্ধ করার আদেশ দেয়া হয়।
এরপর গত রোববার আদালত বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জিশান মির্জার নামে থাকা মাদারীপুরে ২৭৬ বিঘা (৯১ একর) জমি এবং বেনজীর পরিবারের নামে থাকা গুলশানের চারটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন। একই দিন বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে থাকা ১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও তিনটি বিও হিসাব (শেয়ার ব্যবসা করার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) এবং ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র অবরুদ্ধ করার আদেশ দেয়া হয়। সাভারে তাদের কিছু জমিও পড়েছে একই আদেশের মধ্যে। সোমবার থেকে বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের স্থাবর সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ কার্যকর করা শুরু হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাব এবং র্যাবের সাবেক ও বর্তমান যে সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাদের মধ্যে বেনজীর আহমেদের নামও ছিল। তখন তিনি আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন।
বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের বিও হিসাব জব্দ
পুলিশের সাবেক এই আইজি ও তার পরিবারের সদস্যদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব জব্দ করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিও অ্যাকাউন্টগুলো জব্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএসইসির এই নির্দেশনা পাওয়ার পর পুঁজিবাজারের ইলেকট্রনিক্স শেয়ার সংরক্ষণাগার সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী জিশান মির্জা, বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর এবং ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে থাকা বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব ফ্রিজ করে দেয়। মূলত সিডিবিএল বিও অ্যাকাউন্টের শেয়ার ও অন্যান্য সিকিউরিটিজ হস্তান্তর ও নিষ্পত্তি করে থাকে।
এর আগে, গত সপ্তাহে ঢাকার আদালত বেনজীরের সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়ার পর বিএসইসির কাছে বিও অ্যাকাউন্ট জব্দের অনুরোধ জানায় দুদক।
সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ গত ২৩ ও ২৬ মে দুই দফায় বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামের বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দেন। এর মধ্যে স্থাবর সম্পদের ক্ষেত্রে জব্দ ও অস্থাবর সম্পদের ক্ষেত্রে অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে আদালতের আদেশের কপির সাথে চিঠিও পাঠানো হয়। চিঠিতে ওই আদেশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এসব সম্পদ তার নিজের স্ত্রী এবং দুই সন্তানের নামে নিবন্ধিত।
দুদকের নথি অনুযায়ী, পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রধান থাকাকালে বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যরা এসব সব জমি কিনেছেন।
বিএসইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কোর্টের সংশ্লিষ্ট আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচটি ব্রোকারেজ হাউজে ছয়টি বিও হিসাব পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত ফ্রিজ করার নির্দেশ দেয়া হলো। আদালতের আদেশ মোতাবেক ওই হিসাবগুলোর ওপর ফ্রিজ আদেশ কার্যকর থাকা অবস্থায় শেয়ার বিক্রি করা যাবে না। আইএফআইসি সিকিউরিটিজ লিমিটেড ও ড্রাগন সিকিউরিটিজ লিমিটেডে বেনজীর আহমেদের বিও হিসাব রয়েছে। সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস লিমিটেড ও ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডে তার স্ত্রী জিশান মির্জা, ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডে তার বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর এবং ডাইনেস্টি সিকিউরিটিজ লিমিটেডে তার ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে বিও হিসাব রয়েছে। জানা গেছে, কোম্পানির শেয়ার স্থানান্তর বন্ধে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসিতে আদালতের রায়ের কপি পাঠানো হয়েছে। কোম্পানির মালিকানা হস্তান্তর বন্ধে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদফতরে আদালতের ওই আদেশ পাঠানো হয়। একই সাথে ব্যাংকে জমা থাকা টাকা উত্তোলন বন্ধে অবরুদ্ধের আদেশ সোনালী ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা