১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ভিসি-শিক্ষক দ্বন্দ্বের শিকার শিক্ষার্থীরা

-

- কুবির ৫ বিভাগে আটটি চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত
- বিশ্ববিদ্যালয় কবে খুলবে জানেন না কেউ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ভিসি ও শিক্ষক সমিতির দ্বন্দ্বে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে ক্যাম্পাস। এতে ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব ধরনের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। স্থগিত হয়েছে ৫টি বিভাগের অন্তত আটটি চূড়ান্ত পরীক্ষা। কিন্তু শিক্ষকদের এই দ্বন্দে শিক্ষার্থীদের কোনো সম্পৃক্ততা না থাকলেও সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এতে ক্রমেই সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি সেশনজটের শঙ্কা। এ দিকে সমস্যা সমাধানে শিক্ষক সমিতি কিংবা ভিসি কাউকেই নমনীয় হতে দেখা যায়নি। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ভিসি ও শিক্ষক সমিতির ক্ষমতার দ্বন্দ্বে বলি বানানো হচ্ছে তাদের। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ম ভিসি হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন। শুরুতে গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রশংসা কুড়ালেও তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, প্রশাসনিক পদে জ্যেষ্ঠদের পাশ কাটিয়ে কনিষ্ঠ শিক্ষকদের দায়িত্ব দেয়া, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব দেয়াসহ নানা অভিযোগে শিক্ষকদের সাথে বিরোধ চলছিল। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি নবনির্বাচিত শিক্ষক সমিতি নেতৃবৃন্দ ভিসির কক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় ও বিভিন্ন দাবি দাওয়ার বিষয়ে কথা বলতে গেলে প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে ভিসিপন্থী কর্মকর্তা ও কিছু অছাত্র কর্তৃক হেনস্তার শিকার হন শিক্ষকরা। এ নিয়ে শিক্ষক সমিতি ভিসি কার্যালয়ে হামলার বিচার নিশ্চিতকরণ এবং প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীর অপসারণ, ঢাকায় গেস্ট হাউজ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য অবমুক্ত করা, অধ্যাপক গ্রেড-১ ও অধ্যাপক গ্রেড-২ পদে পদোন্নতির জন্য আবেদনকারী শিক্ষকদের অবিলম্বে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও অনুষদের ডিন নিয়োগসহ সাতটি দাবি তুলে ধরেন। কিন্তু ভিসি তাতে সাড়া না দিলে শিক্ষকরা প্রথমে তিন দফায় ক্লাস বর্জন করেন। এরপর ভিসি, কোষাধ্যক্ষ ও প্রক্টরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তিন দফতরে তালা দিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে থাকেন। কর্মসূচিতে ভিসি ড.আবদুল মঈনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একাংশ ও সাবেক শিক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলা করা হয়। এ হামলার জেরে শিক্ষক সমিতি ও বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন কুমিল্লার সদর দক্ষিণ মডেল থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দায়ের করেন। এছাড়া ভিসি ট্রেজারারের পদত্যাগ বা অপসারণ চেয়ে এক দফা দাবি ঘোষণা করেন।

বিশ^বিদ্যালয় ও হল বন্ধ ঘোষণায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ
এ দিকে ২৮ তারিখের ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন শুরু করলে ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে অস্ত্র ও অর্থ চালানের অভিযোগ তুলে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে ১ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলো বন্ধ করে দেয়। কোনো ধরনের গোয়েন্দা প্রতিবেদন ছাড়া এমন অভিযোগের নিন্দা জানিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কয়েক দফা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন। পরে প্রাধ্যক্ষরা হল বন্ধের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা পোষণ করেন। এছাড়া শিক্ষকরা এক দফা দাবির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার জন্য প্রায় প্রতিদিনই অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
তদন্ত কমিটি গঠন : অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তপূর্বক তথ্য উদঘাটন ও শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা শিক্ষক সমিতি মৌখিকভাবে প্রত্যাখ্যান করে। তাদের ভাষ্য, তদন্ত কমিটিতে যাদের রাখা হয়েছে তাদের অধিকাংশই ভিসির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। এ কমিটি গঠনের আগে তাদের সাথে আলোচনা করার কথা থাকলেও কোনো আলোচনা করা হয়নি।
দীর্ঘমেয়াদি সেশনজটের শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা : বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন অচলাবস্থায় ক্রমেই সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘমেয়াদি সেশনজটের শঙ্কা। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দফতর সূত্রে জানা যায়, নির্ধারিত সময়ে নেয়া যায়নি পাঁচ বিভাগের আটটি পরীক্ষা। এগুলো হলো- অর্থনীতি, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা এবং মার্কেটিং বিভাগ। এছাড়া, সাতটি বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষার রুটিন ঠিক থাকলেও নির্ধারিত সময়ে তা প্রকাশ না হওয়ায় পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে। এ দিকে ক্যাম্পাসের এই অচলবস্থা দূর করে কবে ক্যাম্পাস খুলবে তা জানেন না কেউ। এ বিষয়ে শিক্ষার্থী মো: আবির রায়হান বলেন, করোনার সময়ে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়েছি। এখন আবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দুই পক্ষের কেউ সমাধানে আসছেন না। এভাবে আর কত দিন? যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও শিক্ষকরা আমাদের অভিভাবক। অথচ তারা আমাদের কথা ভাবছেনই না। সমস্যা সমাধানে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখছি না।

তিন মাস পর আলোচনার আহ্বান: শিক্ষক সমিতি যা বলছে
সার্বিক বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো: আবু তাহের বলেন, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কর্মকর্তা ও ২৮ এপ্রিল ভিসি নিজে ও অছাত্র দিয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলা করিয়েছেন। ফলে তিনি ভিসির আসনে থাকার নৈতিকতা হারিয়েছেন। আমরা তার পদত্যাগ ও অপসারণের এক দফা দাবিতে গিয়েছি। তিনি আরো বলেন, শিক্ষকরা যে সব দাবি তুলে ধরেছেন তা বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আজ পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বিষয়টি এখন উচ্চ মহলে (শিক্ষা মন্ত্রণালয়) পৌঁছেছে। যে তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে তারা নিজেদের কাজ করবে। তবে তিনি আচার্যের কাছে কুবি ভিসি অপসারণের অনুরোধ জানান।
ভিসি ও শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কেন ক্ষতির সম্মুখীন হবে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, শিক্ষক সমিতি শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে ক্লাস ও পরীক্ষায় ফিরে গিয়েছিল। কিন্তু ২৮ তারিখের ঘটনায় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছে। তবে শিক্ষকরা এই ক্ষতি পুষিয়ে দিবেন। শিক্ষার্থীদের কোনো সেশনজটে পড়তে দিবেন না বলে তিনি জানান।
কুবি প্রশাসনের বক্তব্য : কুবি প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সমস্যা নিরসনে দুটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। আশা করি শিগগিরই ক্যাম্পাস খুলে যাবে। আর খোলার পরে কত দিন ক্যাম্পাস বন্ধ ছিল তার ওপর ভিত্তি করে আমরা রিকভারি প্ল্যান করব। সার্বিক বিষয়ে জানতে ভিসি অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।


আরো সংবাদ



premium cement
শিবচরে ভারতীয় আগ্রাসন ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বাশার আল-আসাদের পতনে সিরিয়ানদের ভাগ্যে যা ঘটতে পারে গাজায় একদিনে আরো ৫০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করল ইসরাইল ৬ বছর পর রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন খালেদা জিয়া রৌমারীতে সড়ক দুর্ঘটনায় বৃদ্ধ নিহত কিশোরগঞ্জ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাবের সভাপতি আশরাফ, সম্পাদক আল আমিন ইসরাইলি পাইলটদের যুদ্ধবিমান না চালানোর আহ্বান সাবেক আইন কর্মকর্তার আমতলীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মা নিহত, ছেলে-মেয়েসহ আহত ৬ এবার ব্রিটিশ ব্যাংকে ‘ফ্রিজ’ করা হলো বাশারের ৫৫ মিলিয়ন পাউন্ড নোয়াখালীতে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত বিজয় দিবস উদযাপনে প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ

সকল