১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

খুলনায় পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ ইজিবাইক চালকদের

-


খুলনা মহানগরী ও জেলা এলাকায় ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক এখন ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজির একটি বড় উৎস বলে অভিযোগ উঠেছে। নগরীতে সিটি করপোরেশন প্রদত্ত লাইসেন্স নবায়ন না করার অভিযোগ তুলে বাইকচালকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়। আর নগরীর বাইরে লাইসেন্সিং ব্যবস্থা না থাকায় পুলিশকে চাঁদা দিয়েই এসব ব্যাটারিচালিত বাইক চালাতে হয়।
খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) লাইসেন্স অফিসার (যানবাহন) রবিউল আলম জানান, এ মহানগরীতে ৮ হাজার লাইসেন্সধারী ইজিবাইক রয়েছে। লাইসেন্সের মেয়াদ শেষে হয়ে গেলে কেসিসির লাইসেন্স (যানবাহন শাখা) শাখায় নির্ধারিত ফি জমা দিলে এক দিনের মধ্যেই রিনিউ করে দেয়া হয়। দু-চারজন আছে ব্লু বুক হারিয়ে ফেলে আবেদন করে ডুপ্লিকেট লাইসেন্স বই নিয়ে নগরীতে চলাচল করছে। এ ছাড়া নিয়মিত পুলিশি অভিযান চলার কারণে বর্তমানে নগরীতে লাইসেন্সবিহীন ইজিবাইক চলাচল করতে পারে না। তবে এর ফাঁকে দুই একটা চলে বলেও তাদের ধারণা। বর্তমানে ইজিবাইক লাইসেন্স নবায়নের নির্ধারিত ফি দুই হাজার টাকা এবং হারিয়ে ফেলা লাইসেন্সের ডুপ্লিকেট ফি ১০ হাজার টাকা। শেষোক্ত ফি ১৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব বিবেচনায় রয়েছে।

ইজিবাইক চালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নগরীতে লাইসেন্স নবায়নের জন্য ফি জমার রসিদ থাকলে অথবা হারানো ব্লু বুকের পরিবর্তে ডুপ্লিকেট হলেও ইজিবাইক চালকদের নামে মামলা করা হচ্ছে। খুলনা মেট্রোপলিন পুলিশের (কেএমপি) ট্রাফিক শাখা অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ইজিবাইকচালক ফিরোজ আহমেদ জানান, আট মাস আগে আমার বাইকের লাইসেন্স হারিয়ে যায়। এর ক’দিন পর কেসিসির লাইসেন্স শাখায় এ ব্যাপারে ১০ হাজার ৫৮ টাকা জমা দিয়ে আবেদন করলে তারা আমাকে একটি ডুপ্লিকেট লাইসেন্স দেয়। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশ সেটা মানে না। গাড়ি ধরে, আর আটকিয়ে দিয়ে এক হাজার টাকার একটি সিøপ হাতে ধরিয়ে দেয়। সাথে ডেকার বিল বাবদ দিতে হয় ৫০০ টাকা, ৫০ টাকার স্ট্যাম্প কিনতে হয় ৮০ টাকা দিয়ে, তারপর লাইসেন্সবিহীন চালাব না- মর্মে ট্রাফিক পুলিশকে হলফনামা লিখে দিয়ে আসতে হয়। যা হোক ডুপ্লিকেট লাইসেন্স নেয়া থেকে এ পর্যন্ত পুলিশ আমার গাড়ি দু-তিনবার আটক করেছে। ভয়ে এখন আর গাড়ি বাইরে বের করি না। গ্যারেজে থেকে আমার গাাড়ি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখন আমার সংসার অচল হতে বসেছে।

সাইফুল ইসলাম নামে আরেকজন ইজিবাইকচালক বলেন, তার গাড়ির লাইসেন্স নবায়নের জন্য কেসিসির লাইসেন্স (যানবাহন শাখা) শাখায় কাগজপত্র জমা দেয়া রিসিপ্টও ছিল। কিন্তু তার পরও ট্রাফিক পুলিশ তার গাড়ি আটক করে। পরে এক হাজার টাকা নিয়ে তাকে গাড়িসহ ছেড়ে দেয়। এখন পুলিশের ভয়ে ইজিবাইক নিয়ে রাস্তায় বের হতে পারি না। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে অতি কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে।
নগরীর সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনালের পাশের রাস্তায় অবস্থানরত কয়েকজন ইজিবাইকচালক জানান, রাস্তায় জটলার অভিযোগ তুলে ট্রাফিক পুলিশ তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে। ঈদ বা বিশেষ পর্ব উপলক্ষে পুলিশের চাঁদা আদায়ের গতি বেড়ে যায়। অপরদিকে নগরীর গল্লামারী থেকে ডুমুরিয়া উপজেলা সদর ও খর্নিয়া হয়ে চুকনগর পর্যন্ত খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে চলাচলকারী ইজিবাইকগুলোকে খর্নিয়া হাইওয়ে পুলিশ থানাকে মাসিক ভিত্তিতে ৩০০ টাকা দিয়ে টোকেন নিতে হয়। এ রুটের চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ডুমুরিয়া ও খর্নিয়া এলাকার শ’ তিনেক ইজিবাইক ওই রুটে চলে। এগুলোর লাইসেন্স বিআরটিএ দেয় না। মহানগরী এলাকায় কেসিসি লাইসেন্স দেয়ার ব্যবস্থা করলেও জেলার অন্যত্র লাইসেন্স ছাড়াই ইজিবাইক চলে। তবে খুলনা-চুকনগর সড়কে হাইওয়ে পুলিশের টোকেনই লাইসেন্সের কাজ করে। অবশ্য পুলিশ নিজেদের নামে টোকেন দেয় না। পুলিশের নিযুক্ত কয়েকজন দালাল টাকা আদায় এবং ডুমুরিয়া ও খর্ণিয়া মালিক সমিতির নামে ছাপানো টোকেন দিয়ে থাকে। কোনো কারণে টোকেন হারিয়ে গেলে বা আনতে ভুলে গেলে পুলিশ মামলা দেয়। সে মামলা থেকে ছাড়া পেতে দুই হাজার ৬০০ টাকা গচ্চা যায়। প্রায় প্রতিদিনই সড়কের কোনো না কোনো জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়ে পুলিশ টোকেন চেক করে। এমনিতে বাইকে আয় ইনকাম কম, কষ্টে-সৃষ্টে জীবন চলে। তারপর এসব চাঁদা দিতে দিতে আমাদের পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে ।

এ ব্যাপারে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিসি ট্রাফিক) মনিরা সুলতানা বলেন, ইজিবাইকগুলো প্রায়ই ডুপ্লিকেট লাইসেন্স দিয়ে চালায়। ওরা ব্লু বুক হারিয়ে গেছে বলে থানায় একটি জিডি করে কপি নিয়ে সিটি করপোরেশনে দেয়। এরপর সিটি করপোরেশন তাদেরকে একটা কাগজ দেয়। এই ডুপ্লিকেট লাইসেন্স দেখিয়েই তারা ইজিবাইক চালাতে থাকে। এখন আমরা খুব কড়াকড়ির মধ্যে আছি। তবে কেউ কেসিসির কাগজপত্র দেখালে আমরা তাদের ছেড়ে দিচ্ছি। কিন্তু যাদের কাগজপত্র নেই তাদের বিরুদ্ধে রাস্তা অবরোধের কারণে এক হাজার টাকার একটি মামলা দেয়া হচ্ছে। চাঁদাবাজির অভিযোগ সম্পর্কে ডিসি ট্রাফিক মনিরা সুলতানা বলেন, এ অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে দেওয়া সহজ। তবু বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া হবে।
খর্নিয়া হাইওয়ে থানার ওসি আবদুল হামিদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এখানে কয়েকদিন হলো জয়েন করেছি। আমি এসব ব্যাপারে এখনো ভালোভাবে জানতে পারিনি। তবে আমি কোন অনিয়ম-দুর্নীতি হতে দেবো না। হাইওয়েতে ব্যাটারি গাড়ি চলবে না। আমি ধরতেছি আর মামলা দিতেছি। কোনো দালাল আমার প্রশ্রয় পাবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement
বাংলাদেশে মুসলিম কৃষকের ধানে আগুনকে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার বলে প্রচার শিক্ষানুরাগী এস এম খলিলুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী আজ সিরিয়ার নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাষ্ট্র! ইতিহাসের প্রথম : ৪০০ বিলিয়ন ডলারের মালিক মাস্ক ২০৩৪ ফুটবল বিশ্বকাপ সৌদি আরবে সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর সচল ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম-হোয়াটসঅ্যাপ ভারতীয় মিডিয়াতে ইসকনের ওপর হামলার খবর ভুয়া : সিএ প্রেস উইং ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন মির্জা ফখরুল টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা ঢাকা সফর নিয়ে ভারতের এমপিদের ব্রিফ করলেন বিক্রম মিশ্রি রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন দুর্নীতি তদন্তে অগ্রাধিকার পাবে

সকল