১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

আজ থেকে ৬৫ দিন সমুদ্রে মাছ ধরা নিষিদ্ধ

-


আজ সোমবার থেকে আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত, মোট ৬৫ দিন বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে। মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন বৃদ্ধি, সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য আহরণের লক্ষ্যে সরকার সামুদ্রিক জলসীমায় মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
সামুদ্রিক মৎস্য আইন, ২০২০ এর ধারা ৩ এর উপধারা ২ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ২০২২ সালের ২৪ এপ্রিল এ নিষেধাজ্ঞার প্রজ্ঞাপন জারি করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ ৬৫ দিন দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় সব রকম মৎস্য নৌযান দিয়ে যেকোনো প্রজাতির মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, নিষিদ্ধ সময়ে সমুদ্রযাত্রার প্রবেশপথগুলোতে মনিটরিং জোরদার করা হবে এবং মৎস্য নৌযানের সমুদ্রযাত্রা শতভাগ বন্ধ রাখা হবে। সামুদ্রিক মৎস্য পরিবহন বন্ধের লক্ষ্যে সমুদ্র তীরবর্তী বরফকলগুলো সীমিত পর্যায়ে চালু রাখা হবে ও সমুদ্রে মৎস্য আহরণকারী নৌযান নোঙরস্থলে আবদ্ধ রাখা হবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, মৎস্য আহরণে বিরত থাকা মৎস্যজীবীদের আপৎকালীন বিকল্প আয় বা খাদ্যসহায়তা হিসেবে দুই কিস্তিতে ৬৫ দিনের জন্য ৮৬ কেজি হারে তিন লাখ ১১ হাজার ৬২টি জেলে পরিবারকে ভিজিএফ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া সমুদ্রে কোনো রকম নৌযান দিয়ে অবৈধ মৎস্য আহরণ বন্ধে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও বাংলাদেশ নৌপুলিশ এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতা চেয়ে যথাক্রমে জননিরাপত্তা বিভাগে ও সশস্ত্রবাহিনী বিভাগে চিঠি দিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রচার-প্রচারণা চালাবেন সংশ্লিষ্টরা।

জেলেদের দুশ্চিন্তা
কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, নিষেধাজ্ঞার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়ার দুশ্চিন্তায় পড়েছেন হাজার হাজার জেলে। তারা বলেন, বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে বিভিন্ন ধাপে ১৪৭ দিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ায় জেলে পরিবারসহ ব্যবসায়ীদের মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। জেলেরা সরকারিভাবে যে সহায়তা পান, তা সামান্য। ফলে তাদের জীবন কাটে চরম দুর্দশায়। মা ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা, মার্চ-এপ্রিল ৬০ দিনের অভয়াশ্রমের শেষ হতে না হতেই আবার ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
সাতভাই ফিসের পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, পটুয়াখালীর সবচেয়ে বড় দু’টি মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুর। এখান থেকে কোটি কোটি টাকার মাছ চালান হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে গত কয়েক বছর যাবৎ বছরে দু’বার নিষেধাজ্ঞা, বৈরি আবহাওয়া, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি। সব মিলিয়ে এ পেশা এখন হুমকির মুখে।

ট্রলারের মালিক বাহাদুর বলেন, কোম্পানির কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা দাদন নিয়ে একটা ট্রলার তৈরি করেছি। দুই বছরে এখন পর্যন্ত লাভের মুখ দেখিনি। এর ওপর আবার নিষেধাজ্ঞা, এখন এ পেশায় টিকে থাকা আমাদের মতো মানুষের পক্ষে সম্ভব না। জেলে মাঝি কুদ্দুস মিয়া বলেন, ৬৫ দিনের অবরোধকালে আমরা মাছ ধরা বন্ধ রাখলেও পার্শ্ববর্তী ভারতীয় জেলেরা আমাদের দেশের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ শিকার করে। কিন্তু সরকার এখনো এর কোনো প্রতিকার করতে পারল না। আমাদের দাবি, এ সময়ে আমাদেরও মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হউক, অন্যথায় অবৈধভাবে ভারতীয় জেলে ট্রলারগুলো বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ বন্ধ করা হোক।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, ‘জেলেদের দাবি ঊর্ধŸতন কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও জেলেদের ঋণসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির পরিকল্পনাও চলছে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল