১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কারণ শনাক্তের পরও বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতি নেই

-

কারণ চিহ্নিত বা শনাক্ত করা হলেও ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো অগ্রগতি নেই। করোনা মহামারীর পর থেকে রাজধানী ঢাকা বায়ুদূষণে বিশে^র শীর্ষ তালিকায় অবস্থান করে আসছে। এ নিয়ে সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা সব সময় নানান উদ্বেগের কথা বলে আসলেও তার বাস্তবায়ন চোখে পড়েনি। যার কারণে বৃষ্টিতেও নগরীর বায়ুদূষণ কমছে না।
পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, নির্মাণকাজের সৃষ্ট ধুলা, ইটভাটা, রান্নার চুলা, যানবাহন ও অন্যান্য ধোঁয়া, শিল্প-কলকারখানাসহ নানাবিধ কারণে দেশে ভয়াবহ বায়ুদূষণ ঘটছে। আর শীতকালে সারা দেশের বাতাসের মান বেশি খারাপ থাকে। আর বর্ষা মৌসুমে কিছুটা উন্নতি হয়। বছরের জুন, জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ঢাকায় বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। এসব কারণে তখন ঢাকার বাতাস অনেকটা নির্মল থাকার কথা। কিন্তু সময় যত যাচ্ছে পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে। যে সময় দূষণ কম থাকার কথা সে সময়ও মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক দিন টানা খরা শেষে বৃষ্টির পর গতকালও বায়ুদূষণে বিশে^ ঢাকা ছিল তৃতীয় স্থানে। যাতে বাতাসের মানও ছিল অস্বাস্থ্যকর। এর আগে গেল বছরের শেষ মাসে ঢাকায় ছিল বছরের সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ। বিদায়ী বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষণ নিয়ে বিশ্বের ১০০ শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল প্রথম। শীতের শুরুতে নভেম্বরের শেষ দিকে বায়ুদূষণের মাত্রা কম থাকলেও ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে এসে আবারও শীর্ষে উঠে আসে ঢাকা।

এমতাবস্থায় চলতি বছরের শুরুতে ডিএসসিসি বলছিল, উন্নয়ন প্রকল্প কিংবা নির্মাণ কাজের জন্য বায়ুদূষণ হলে তারা ব্যবস্থা নেবে। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জারি করা অনুমোদিত আদেশে বলা হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন নির্মাণ বা মেরামত কাজের জন্য বায়ুদূষণ হলে সেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সে সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সচিব আকরামুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, ডিএসসিসির আওতাধীন বা মেরামত কার্যক্রমের জন্য রাস্তা ও ফুটপাথ খোঁড়াখুঁড়ি, বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ এবং সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্পে যারা জড়িত তাদের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে বায়ুদূষণ সৃষ্টি হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। অথচ এই নির্দেশ বাস্তবায়নে তেমন কোনো অগ্রগতি লক্ষ করা যায়নি। এ বিষয়ে পরিবেশ বিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রব নয়া দিগন্তকে বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত নগরীর মধ্যে ১০ থেকে ২০ নাম্বারের মধ্যে ঢাকার অবস্থান। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন শহর থেকে মানুষ ঢাকায় এসে স্থায়ী হচ্ছে। তাদের আবাসনে উঁচু ভবন বাড়ার সাথে ঢাকার ওপর প্রতিদিন নতুন করে চাপ বাড়ছে। এ ছাড়া সবুজায়ন যেখানে ২৫ শতাংশ এবং পর্যাপ্ত জলাধার নদী নালা খাল বিল থাকার কথা তা উজাড় করে অপরিকল্পিভাবে নতুন নতুন বাণিজ্যিক ভবন, হাসপতাল, স্কুল-কলেজ, ভবন নির্মাণ হচ্ছে। এতে করে শব্দদূষণ পরিবেশ দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এতে করে প্রতিটি ক্ষেত্রে ঢাকা একটা বিস্ফোরণুন্মুখ পরিস্থিতিতে পড়েছে। ফলে আগামীতে ঢাকায় একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে।

অন্যদিকে বায়ুদূষণের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার নয়া দিগন্তকে বলেন, দূষণে ঢাকার এমন অবস্থা সত্যিই উদ্বেগজনক। বায়ুদূষণের বর্তমান প্রধান কারণ রাস্তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাস্তায় নানা সময়ে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলতেই থাকে। পাশাপাশি ফিটনেসবিহীন যানবাহন বাতাসে দূষণ ছড়ায়। যদিও সিটি করপোরেশন কিছু এলাকায় পানি ছিটাচ্ছে কিন্তু তা পর্যাপ্ত না। এর নিয়ন্ত্রণে উচিত সারা শহরেই পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলোর বিষয়ে আরো কঠোর হওয়া। এর বাইরে ইটভাটা বন্ধ করে নির্মাণকাজে ইটের পরিবর্তে কংক্রিটের ব্লক ব্যবহারে সরকারি নির্দেশনা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মোতালিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বায়ুদূষণে স্থানীয় পর্যায়ের উৎসগুলোর কথা আমরা স্বীকার করি না। কিন্তু ঢাকাসহ বাংলাদেশের বায়ুদূষণে উপমহাদেশীয় বায়ুপ্রবাহের একটা ভূমিকা আছে। যদিও শীতকালে পরিবেশ দূষণে এর ভূমিকা থাকে মূল দূষণের প্রায় ৫০ শতাংশ। এর বাইরে কলকারখানার ধোঁয়া, যানবাহন ও ইটের ভাটা দূষণ অন্যতম কারণ।
অন্য দিকে পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) মো: জিয়াউল হক সাংবাদিকদের বলেন, বায়ুদূষণের উৎসগুলো চিহ্নিত। এর আলোকে দূষণ বন্ধে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে এ কাজটি শুধু পরিবেশ মন্ত্রণালয় এককভাবে করতে পারবে না। সব মন্ত্রণালয়, সরকারি দফতর, অধিদফতর এবং বেসরকারি পর্যায় থেকেও দূষণ প্রতিরোধে কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement