১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

হারানোর দেড় মাস পর বাবার বুকে ফিরল ৭ বছরের শিশু

-

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের হরিণটানা থানা নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানা এলাকা থেকে হারিয়ে যাওয়া একটি শিশুকে দেড় মাস পর গত বুধবার তার বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে। মাতৃহীন শিশুটিকে তার পিতা ও আত্মীয়স্বজন ফিরে পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন।
কেএমপি সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ মার্চ কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন হতে ট্রেনে উঠে মো: ইয়ামিন (০৭) নামের শিশুটি সন্ধ্যায় খুলনা স্টেশনে এসে পৌঁছায়। সে স্টেশন থেকে বেরিয়ে খুলনা মহানগরীতে ঘুরতে ঘুরতে রাত ৯টার দিকে হরিণটানা থানাধীন গল্লামারী এলাকায় গিয়ে কান্নাকাটি করতে থাকে। পথচারীরা হরিণটানা থানা পুলিশকে বিষয়টি জানালে থানার এসআই (নি:) মো: মাসুম বিল্লাহ ফোর্সসহ সেখানে হাজির হয়ে ইয়ামিনকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন যে তার বাড়ি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের আশপাশে। তারপর শিশুটিকে হরিণটানা থানায় নেয়া হয়। পরবর্তীতে থানা পুলিশ কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের আশপাশের থানাগুলোতে যোগাযোগ করে শিশুটির বাড়ি বা অভিভাবকের সন্ধান না পেয়ে বটিয়াঘাটা উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের জিম্মায় দেয়া হয়। তাকে গত ২০ মার্চ থেকে বটিয়াঘাটা শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখা হয়। এরপর থেকে পুলিশ এবং উপজেলা সমাজসেবা অফিসার শিশুটির অভিভাবকের সন্ধানে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে এবং কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের আশপাশসহ ডিএমপির বিভিন্ন থানায় যোগাযোগ অব্যাহত রাখে। কিন্তু কোনো ফল মেলে না। পরবর্তীতে শিশুটি তাকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে নিয়ে গেলে তার বাড়ি চিনিয়ে দিতে পারবে বলে জানায়। সে মোতাবেক কেএমপির পুলিশ কমিশনার মো: মোজাম্মেল হক নির্দেশে হরিণটানা থানা, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার এবং বটিয়াঘাটা শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের পাঁচ সদস্যের একটি টিম গত বুধবার সকাল ৬টায় শিশু ইয়ামিনকে নিয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। তারা বেলা ১১টায় ঢাকা পৌঁছে বিভিন্নভাবে আশপাশের এলাকায় শিশুটির পরিবারের সন্ধান করতে থাকে। দুপুর ১টার দিকে ইয়ামিন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা নারায়ণগঞ্জ রুটের একটি ট্রেন দেখিয়ে বলে এই ট্রেন যেখান থেকে আসছে তাকে সেখানে নিয়ে গেলে তার বাড়ি চিনিয়ে দিতে পারবে। তখন তারা ওই ট্রেনে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওয়ানা হলে পথিমধ্যে ট্রেনের একজন যাত্রী শিশুটিকে দেখে তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানাধীন লালপুর গ্রামে এবং তার পিতার নাম মো: সাইফুল ইসলাম বলে জানান। তখন ওই টিমের সদস্যরা ফতুল্লা স্টেশনে নেমে ইয়ামিনকে নিয়ে লালপুর গ্রামে তার বাড়িতে হাজির হলে শিশু ইয়ামিনের পিতাকে বাড়িতে পেয়ে তার বুকের ধন বুকে জড়িয়ে ধরলে একটি আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তাদের প্রতিবেশীরাসহ তার খেলার সাথীরা তাকে দীর্ঘদিন পর কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। টিমের সদস্যরা ইয়ামিনকে তার পিতার জিম্মায় প্রদান করে খুলনায় ফিরে আসে।
টিম সদস্যরা জানতে পারেন, ভূমিষ্ট হওয়ার পরপরই ইয়ামিনের মা মারা যান। তার পিতা সাইফুল ইসলাম আর বিয়ে করেননি। ইয়ামিন তার চাচা ও ফুফুদের সাথে ওই গ্রামে থাকে। শিশুর বাবা পরিবহন শ্রমিক হওয়ায় তার তেমন খোঁজখবর রাখতে পারেন না। ইয়ামিন তার মাকে খুঁজতে প্রায়ই নিরুদ্দেশ হয়। তার শিশুমন বিশ্বাস করতে পারে না যে তার মা পৃথিবীতে আর নেই।


আরো সংবাদ



premium cement