১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বৈরী আবহাওয়ায় লবণ উৎপাদন বন্ধ

উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৫ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন
পটিয়া ইন্দ্রপোল লবণ শিল্প এলাকায় ট্রাক থেকে অপরিশোধিত লবণ আনলোড করছেন শ্রমিকরা : নয়া দিগন্ত -


হঠাৎ করে বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়েছে দেশের লবণ উৎপাদন। থেমে থেমে কালবৈশাখীর ঝড় ও বৃষ্টির কারণে ২ মে থেকে একটানা ৫ মে পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উপকূলে লবণ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে চলতি লবণ উৎপাদন মৌসুমে (২০২৩-২০২৪) লবণ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৫ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিকটনের বিপরীতে ১ মে পর্যন্ত লবণ উৎপাদন হয়েছে ২৩ লাখ ৩১ হাজার ৭৯৮ মেট্রিক টন। গত মৌসুমে (২০২২-২০২৩) ১ মে পর্যন্ত লবণ উৎপাদন হয়েছিল ২০ লক্ষ ৪৫ হাজার ৫৮৭ মেট্রিক টন। বেসিক লবণ প্রকল্পের জেনারেল ম্যানেজার জাফর ইকবাল ভূঁইয়া দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত ২ মে থেকে ৫ মে পর্যন্ত সব ধরনের লবন উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
এ দিকে চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার উপকূলে লবণ উৎপাদন বন্ধ থাকলেও চট্টগ্রামের মাঝিরঘাট ও পটিয়া ইন্দ্রপোল লবণ শিল্প এলাকায় পাইকারি অপরিশোধিত লবণ নৌকা ও ট্রাকযোগে পরিবহন করা লবণ আলো করতে দেখা গেছে।
অপর দিকে গত ২৮ এপ্রিল উপকূলে এক দিনেই সর্বোচ্চ ৩৮ হাজার ৯৭০ মেটিক টন লবণ উৎপাদনসহ গত মৌসুমে লবণ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জিত ২২ লাখ ৩২ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদনের ৬২ বছরের নয়া রেকর্ড ছাড়িয়ে ২২ লাখ ৩৪ হাজার ৬৫৮ মেট্রিক টন উৎপাদন করে লবণ উৎপাদনের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড স্থাপন করে। গত মৌসুমে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত লবণ উৎপাদন হয়েছিল ১৯ লাখ ১৭ হাজার ৫৯৮ মেট্রিক টন)
পিসিকে লবণ প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর চট্টগ্রামের বাঁশখালী পটিয়া আনোয়ারা ও কক্সবাজারসহ ৬৮ হাজার ৩৫৭ একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। যা গত মৌসুমে ছিল ৬৪ হাজার ৪২৪ একর। চলতি বছর লবণ উৎপাদনে জড়িত রয়েছেন ৪০ হাজার ৬৯৫ জন চাষি। গত মৌসুমে উৎপাদনে ছিল ৩৯ হাজার ৪৬৭ জন চাষি।

এ দিকে উপকূলে লবণ উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে লবণ চাষিরা উৎপাদিত লবণের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কিছু লবণ মজুদদার ও মাঠ পর্যায়ে পাইকারি লবণ ব্যবসায়ীদের কারণে। বর্তমানের প্রতি মণ লবণ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৩১২ টাকা করে। অথচ প্রতি মণ লবণ উৎপাদনে গড়ে ৩৩০ থেকে ৩৪০ ও ৩৫০ টাকার উপরে উৎপাদন খরচ পড়ছে বলে চাষিরা জানিয়েছেন।
বিসিক লবণ প্রকল্পের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) জাফর ইকবাল ভূঁইয়া গতকাল বিকেলে নয়া দিগন্তকে জানান, তাপদাহ বা তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় লবণ উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও হঠাৎ করে গত ২ মে থেকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে লবণ উৎপাদন মূলত বন্ধ রয়েছে। চলতি মৌসুমে সাগর উপকূলে লবণ উৎপাদনে চাষিরা আগাম প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামলেও ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী ঘন কুয়াশা ও মাঝেমধ্যে বৃষ্টিপাত হওয়াসহ বৈরী আবহাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে দেশের উপকূলে লবণ উৎপাদন মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হয়ে আসছিল। তবে সেই অনিশ্চয়তা কেটে এখন জোরে সোরে চলছিল লবণ উৎপাদন হলেও বেরী আবহাওয়ার কারণে গত চার দিন ধরে লবণ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
যে কারণে লবণ উৎপাদনে চাষিরা আগ্রহে ওঠেন।

জানা গেছে, এক সময়ে দেশে প্রতি বছর সোডিয়াম সালফেটের আড়ালে লাখ লাখ মেট্রিক টন সোডিয়াম সালফেট আমদানি করত অসাধু ব্যবসায়ীরা, এ ছাড়া মিস ডিলারেশনের মাধ্যমেও লাখ লাখ মেট্রিক টন লবণ আমদানি করত সে কারণে দেশে লবণ উৎপাদন করে চাষিরা লাভের মুখ দেখত না- এ নিয়ে দৈনিক নয়া দিগন্তে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার লবণ শিল্প ও চাষিদের স্বার্থ সমুন্নত রাখতে বিদেশ থেকে লবণ আমদানির উপরে শুল্কহার ৩২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮৯ শতাংশ করেছে।
আমদানিকৃত লবণের দাম বেশি হওয়ার কারণে আমদানিকারকরা অতিরিক্ত লবণ আমদানিতে নিরুৎসাহিত হওয়ায় দেশে লবণ শিল্পে প্রাণ ফিরে আসে। বিদেশ থেকে লবণ আমদানি শুল্ককর বৃদ্ধি করার কারণে আমদানি করা লবণের চেয়ে দেশে উৎপাদিত লবণের কদর বেড়েছে ।
সে কারণে দুই বছর ধরে উপকূলের চাষিরা আগাম প্রস্তুতি নিয়ে লবণ উৎপাদনে মাঠে নামা শুরু করেছেন।
জানা গেছে, প্রতি বছর লবণ উৎপাদনের অফিসিয়ালি ১৫ নভেম্বর থেকে পরের বছরের ১৫ মে পর্যন্ত লবণ উৎপাদন মৌসুম ধরা হয়।
বিসিক লবণ সেলের প্রধান সারোয়ার হোসনে বলেন বিসিকের প্রচেষ্টায় লবণ শিল্প এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন চলতি মৌসুমের আরো অন্তত ১০ দিন রয়েছে। মৌসুমের শেষ সময় পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছড়িয়ে যাবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।


আরো সংবাদ



premium cement