৯৬ লাখের বেশি শিশুর রক্তে অতিরিক্ত মাত্রায় সিসা
এসডো ও ইউনিসেফ বাংলাদেশের কর্মশালা- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
বাংলাদেশে ৯.৬ মিলিয়নেরও (৯৬ লাখ) বেশি শিশুর রক্তে অতিরিক্ত মাত্রায় সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যার বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০ মিলিয়ন আইকিউ পয়েন্ট। সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, সীসার সংস্পর্শে আসার ফলে শিশুদের বুদ্ধিমত্তার অবনতি ঘটছে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর পর্যটন ভবনে পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা-এসডো এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বাংলাদেশে শিশুদের সীসা বিষক্রিয়া মোকাবেলা শীর্ষক ইন্সেপশন ওয়ার্কশপে এ তথ্য উঠে আসে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারের উখিয়ায় সংরক্ষিত বনের পাহাড় কেটে ‘মাটি পাচারকারীদের ড্রাম্প ট্রাকের চাপায়’ বনবিট কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দানে প্রয়োজনীয় আইনানুগ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং এজাহারভুক্ত এক আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মন্ত্রণালয়ের প্রত্যাশা নৃশংস হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।
কর্মশালায় পরিবেশমন্ত্রী বলেন, সীসা বিষক্রিয়ার ঝুঁকি কমাতে এবং বাংলাদেশের শিশুদের স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সরকার ও তার মন্ত্রণালয় সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, এ কাজে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা এবং অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের মাধ্যমে প্রকল্প বাছাই ও বরাদ্দ প্রদানে নতুন নীতিমালা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে নীতিমালা অনুসরণ করে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে, ফলে বিসিসিটির অতীতের ভুলভ্রান্তি পরিহার করা সম্ভব হবে।
কর্মশালায় থিমাটিক প্রেজেন্টেশনটি উপস্থাপন করেন এসডোর রিসার্চ অ্যান্ড ক্যাম্পেইন অ্যাসোসিয়েট সাদমিন সাদাফ জাহান। সেখানে উল্লেখ করা হয়, সীসা দূষণ একটি গুরুতর পরিবেশগত সমস্যা, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশেষ করে শিশুরা এই সীসা বিষক্রিয়া দ্বারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এটি তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ, শারীরিক বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক সুস্থতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই দূষণ মোকাবেলায় দেশে নানান প্রচেষ্টা চলমান থাকা সত্ত্বেও, শিল্প কারখানা থেকে নিঃসৃত দূষিত পানি এবং সীসাযুক্ত রঙ দ্বারা শিশুরা সীসা বিষক্রিয়ার শিকার হচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, এর কারণে বাংলাদেশ আনুমানিক ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে যা কি না ২০১৯ সালের দেশের মোট জিডিপির প্রায় ৩.৫ শতাংশের সমান। অতএব, সীসা বিষক্রিয়া প্রতিরোধের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
এসডোর চেয়ারপারসন ও সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, বিশ্বব্যাপী অন্যান্য অঞ্চলের মতো বাংলাদেশেও শিশুরা সীসার সংস্পর্শে আসায় ক্ষতিকারক প্রভাবের মুখোমুখি হচ্ছে। সীসা বিষক্রিয়ার সমস্যা মোকাবেলায় দ্রুত উদ্যোগ নেয়ার ওপর তিনি জোর দেন।
পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আব্দুল হামিদ বলেন, যা কিছুই শিশু স্বাস্থ্যকে ঝুঁঁকির মুখে ফেলে তা থেকে তাদের নিরাপদ রাখায় আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের মহাপরিচালক কেয়া খান শিশুদের সীসা বিষক্রিয়া নিয়ে নিজের উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সার্বিক সহযোগিতা করার আশা ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক আনজির লিটন বলেন, আমাদের সম্মান এবং জাতির স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধির জন্য পরিবেশ রক্ষায় সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম বলেন যে, সীসা দূষণ একটি উদ্বেগজনক সমস্যা। আমরা এসডো এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের উদ্যোগকে সমর্থন করি এবং তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে চাই। এসডো দ্বারা পরিচালিত গবেষণার মাধ্যমে বিএসটিআই সীসা দূষণ নিয়ন্ত্রণে নিরাপদ মাত্রা নির্ধারণ করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
এসডোর সেক্রেটারি জেনারেল ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, মানুষের সুস্থ ও সুন্দর জীবনের জন্য একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশের প্রয়োজন। তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা উল্লেখ করেন, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আমরা সীসার ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে আমাদের শিশুদের নিরাপদ রাখার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছি। তাই এই প্রকল্পটি আমাদের দেশের শিশুদের টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চয়তার লক্ষ্যে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা