১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
বন কর্মকর্তার হত্যার প্রতিবাদ

ঢাকায় ২৩ পরিবেশবাদী সামাজিক ও নাগরিক সংগঠনের সমাবেশ

-


বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা), স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), পরিবেশ উদ্যোগ, বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্র, অরণ্যক ফউন্ডেশন, নাগরিক উদ্যোগ, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট, গ্রিন ভয়েস, গ্রিন সেভার্স, বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ফরেস্টার অ্যাসোসিয়েশন, বারসিক, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট, সেন্টার ফর গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেনট (সিজিইডি), পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন, ইয়ুথনেট ফর কাইমেট জাস্টিস, প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ ফরেস্ট সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ ফরেস্টার অ্যাসোসিয়েশন, আরডিআরএস, পরিবেশ ও জলবায়ু আন্দোলন এবং জন উদ্যোগসহ ২৩টি পরিবেশবাদী, সামাজিক ও নাগরিক সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায়, ‘বন কর্মকর্তার হত্যার বিচার। বন ও পাহাড় খেকোদের গ্রেফতার এবং বন-পাহাড় রায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার’ পাঁচ দফা দাবিতে বন ভবনের সামনে (আগারগাঁও, ঢাকায়) এক নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি, অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় উক্ত নাগরিক সমাবেশে বিভিন্ন পরিবেশবাদী, সামাজিক ও নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদা পারভীন, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার, পরিবেশ, নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী পরিচালক, জাকির হোসেন, অরণ্যক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক, রকিবুল হাসান, গ্রিন ভয়েসের সহ-সমন্বয়ক হুমায়ুন কবির সুমন, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের মহাসচিব, মাহবুল হক, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক আমিনুর রসুল, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশের পরিচালক, গাউস পিয়ারী, আরডিআরএসের চেয়ারম্যান, মোহাম্মদ এজাজ, গ্রিন সেভার্সের সভাপতি, আহসান রনি, বারসিকের সমন্বয়কারী, জাহাঙ্গীর আলম, পরিজার সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল, জন উদ্যোগের তারিক হোসেন মিঠু, সিজিইডির সভাপতি মো: আব্দুল ওহাব এবং মরহুম সাজ্জাদুজ্জামানের পরিবার (বাবা, মা, বড় ভাই, স্ত্রী ও তার ৮ মাসের কন্যাসন্তান)।

পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠনগুলোর মূল বক্তব্যে বলা হয় গত রোববার কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বন বিটের কর্মকর্তা সাজাদুজ্জামানের নির্মম অপহত্যায় জড়িতদের অতিসত্বর আইনের আওয়ায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে আজকের পরিবেশবাদী ও নাগরিক সমাজের এই মানববন্ধন কর্মসূচি।
বক্তারা বলেন, গত রোববার দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জর দোছড়ি বন বিটের কর্মকর্তা সাজাদুজ্জামানের নির্মম মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, যা দেশের মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী ৩১ মার্চ, প্রয়াত সাজাদুজ্জামান ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের আওতাভুক্ত রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা এলাকায় বনের জমি রক্ষা করতে গিয়ে ভূমিদস্যুদের নির্মমতার শিকার হন। উখিয়া রেঞ্জের হরিণমারা অংশ থেকে পাহাড় কেটে বালু সরবরাহ করার সময় একটি মিনি ট্রাক (ডাম্পার) সাজাদুজ্জামানকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। এ ঘটনায় আহত হন আরো একজন বন কর্মকর্তা।
দেশজুড়ে একের পর এক বন, পাহাড় ধ্বংস ও হাতিসহ নানা বন্যপ্রাণী হত্যা ও বন উজাড় রোধে যখন কিছু সৎ নিষ্ঠাবান মানুষ কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে যায় তখনি তাদের নানা নির্যাতন ও হত্যার শিকার হতে হয়।
কিছু দুর্বৃত্ত, ভূমিদস্যু, পাহাড় ও বন খেকোর আগ্রাসনে প্রায় নিঃশেষিত জাতীয় বনভূমির রক্ষায় সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি অনুয়ায়ী দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নির্মম আক্রমণের শিকার হন এ বনকর্মকর্তা। যা তার মাত্র আট মাস বয়সের সন্তানকে করেছে অভিভাবকহীন। নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সাজাদুজ্জামানের অপহত্যার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে তার শোকসন্তপ্ত পরিবার ও সহকর্মীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।
এর আগে গত ০৭ আগস্ট, ২০২০ মো: ইউসুফ উদ্দীন নামের মহেশখালী বন রেঞ্জ কর্মকর্তা পাহাড় ও বন খেকোর হাতে অপহত্যার শিকার হয়েছিলেন। সে ঘটনারও সঠিক ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার এখনো হয়নি। পাহাড় ও বনখেকোদের দমন করতে না পারার ক্রমাগত ব্যর্থতা এসব অপরাধীকে দুর্র্ধর্ষ ও বেপরোয়া করে চলেছে যার ধারাবাহিকতায় মো: ইউসুফের পর সাজাদুজ্জামানকে আবার অপহত্যার শিকার হতে হলো।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, বন, পাহাড় ও পরিবেশ রক্ষা না হলে মানুষ বাঁচতে পারে না। তাই দেশের বন-পাহাড় ও পরিবেশকে বাঁচাতে হবে। মুষ্টিমেয় লোকের হাতে দেশের বন-পাহাড়-নদী জিম্মি। এই জিম্মিদশা থেকে দেশের বন-পাহাড় ও পরিবেশকে মুক্ত করতে হবে। তিনি আরো হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন চলবে।


আরো সংবাদ



premium cement