ধুলা আর যানজটে ভোগান্তিতে মানুষ
- আবু সালেহ আকন
- ৩১ মার্চ ২০২৪, ০২:০৫
- ছুটির দিন শনিবারেও স্বস্তি নেই
- খোঁড়াখুঁড়ির কারণে অনেক রাস্তা বন্ধ
- ঘন কুয়াশার মতো ধুলাচ্ছন্ন রাস্তা
ব্রাদার্স ক্লাবের মোড় থেকে ১ আর কে মিশন রোডের মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন ভবন। হেঁটে আসতে বড়জোর আধা মিনিট সময় লাগে। আর এই রাস্তাটুকু মোটরসাইকেলে পার হতে সময় লেগেছে আধা ঘণ্টা। এই ছিল রাজধানীর গতকাল শনিবারের যানজটের চিত্র। এক দিকে যানজট, অন্য দিকে রাস্তায় ঘন কুয়াশার মতো ধুলা। অস্থির হয়ে উঠেছিলেন রাজধানীর পথচারীরা। বিশেষ করে রোজাদারদের দুর্ভোগের সীমা ছিল না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহনে বসে থেকে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
গতকাল ছিল শনিবার সরকারি ছুটির দিন। এই দিনে রাজধানীতে এমন যানজট হবে তা অনেকে ভাবতেই পারেননি। বেলা ১১টায় ডেমরার বাসা থেকে হন মাহমুদা। সিএনজি অটোরিকশায় ৫-৬ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যান কাজলার পাড় এলাকায়; এরপর শুরু হয় ভোগান্তি। যাত্রাবাড়ীর মোড় থেকে কাজলার পাড় পর্যন্ত যানজট। গাড়ি আর নড়ে না। মাহমুদা জানান, যাত্রাবাড়ী মোড় পার হতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। অথচ কাজলার পাড় থেকে ওই মোড় পর্যন্ত পৌঁছাতে সময় লাগার কথা ২-৩ মিনিট। আবারো যানজটে পড়েন সায়েদাবাদ জনপদ মোড়ে। সেখানে আবার ভোগান্তি। আবার যানজটে পড়েন বিশ্ব রোডে ঢুকে। ডেমরা থেকে আধা ঘণ্টার রাস্তা রাজধানীর সেগুনবাগিচা যেতে তার সময় লাগে তিন ঘণ্টা। সরেজমিন যাত্রাবাড়ী এলাকা ঘুরে দেখা যায় এখানে যতটা না গাড়ির চাপ তার চেয়ে বেশি সমস্যা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার। পুলিশের এএসআই ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে পায়চারী করছেন আর মোবাইলে কথা বলছেন। আর দু’জন কনস্টেবল লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। সামনেই মোড়ের মধ্যে বাস থামিয়ে তাতে জোরে জোরে হাঁক দিয়ে যাত্রী তোলা হচ্ছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, যাত্রাবাড়ী-ডেমরা, যাত্রাবাড়ী-চিটাগাং রোড, যাত্রাবাড়ী-পোস্তগোলা, যাত্রাবাড়ী-মতিঝিল, শহীদ ফারুক সড়ক প্রতিটি মোড়ে বাস, মিনিবাস, আর লেগুনা থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো হয়। যে কারণে এই মোড় দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা যানজট লেগে থাকে।
গতকাল সরকারি ছুটির দিনে এমন যানজট হবে তা অনেকে কল্পনাও করতে পারেননি। স্বাভাবিক সময়ে এ দিনটিতে অন্তত রাজধানীবাসী একটু স্বস্তি পেয়ে থাকেন। শুক্র-শনিবারে রাস্তায় যানজট দেখা যায় না। অথচ গতকাল সরকারি এই ছুটির দিনটিও ছিল যন্ত্রণাদায়ক। এর সাথে যুক্ত হয়েছিল তীব্র ধুলার যন্ত্রণা। কোন কোন এলাকায় ধুলার তীব্রতা এতটাই ছিল যে ভারী কুয়াশাচ্ছন্ন মনে হয়েছে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার রফিক জানান, মানুষ শুক্র-শনিবারে একটু স্বস্তিতে রাস্তায় চলাচল করে। কিন্তু এখন আর এ সুযোগও নেই। হয়তো ঈদের আগ পর্যন্ত এভাবেই ভোগান্তি পোহাতে হবে। তিনি বলেন, রাজধানীর এই যানজট বাড়িয়েছে বিভিন্ন এলাকার খোঁড়াখুঁড়ি। তিনি বলেন, আগে পথচারীরা যাত্রাবাড়ীতে যানজট দেখলে সুতিখালপাড় রাস্তা হয়ে গোলাপবাগ পর্যন্ত আসত। সুতিখালপাড় রাস্তাটি কেটেকুটে বন্ধ করে রেখেছে; যে কারণে প্রধান সড়ক ছাড়া আর কোনো পথ এখন খোলা নেই। দিনভর সেখানে আটকে থাকলে বিকল্প কোনো উপায় নেই। রাজধানী সুপার মার্কেটের পাশে দূর পাল্লা বাসের কয়েকটি কাউন্টার গড়ে উঠেছে। যে কাউন্টারগুলোর সামনে দিনভর দু-চারটি গাড়ী দাঁড়িয়ে থাকে; যে কারণে মতিঝিল বা গুলিস্তান হয়ে আসা গাড়িগুলো ঠিকঠাকভাবে ফ্লাইওভারে উঠতে পারে না। আর এ জন্যই গুলিস্তান ও মতিঝিল থেকে টিকাটুলি রাজধানী সুপার মার্কেটের ফ্লাইওভারের গোড়া পর্যন্ত দিনভর যানজট লেগে থাকছে।
রাজধানীর শাহবাগ থেকে এলিফ্যান্ট রোড, মিরপুর রোড, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, গুলিস্তান, সদরঘাট, পুরাণ ঢাকার বিভিন্ন এলাকা, ওয়ারী, নয়াপল্টন, ফার্মগেট, বসুন্ধরা সিটিসহ বিভিন্ন এলাকায় গতকাল তীব্র যানজট লক্ষ করা গেছে। কোন কোন যানজট আবার মার্কেট ও বিপনী বিতানকেন্দ্রিক। বিশেষ করে শান্তিনগর, পল্টন, রাজারবাগসহ কয়েকটি এলাকায় দেখা গেছে বিপণিবিতানগুলোর সামনে এলোপাতাড়ি গাড়ি রাখার কারণে দু’পাশের রাস্তায় তীব্র যানজট। অনেক মার্কেটেরই পার্কিং ব্যবস্থা নেই। কিন্তু সেকেন্ডে সেকেন্ডে ওই মার্কেটের সামনে গাড়ি এসে থামছে।
আবুল হাশেম নামের এক পথচারী গতকাল জানান, এক দিকে যানজট অন্য দিকে তীব্র ধুলা। একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল আর শ্বাস নিতে পারছেন না। খুবই কষ্ট হয়েছে বলে উল্লেখ করেন আবুল হাশেম। এ দিকে রাজধানীর ট্রাফিক বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির জন্য এই যানজট আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে। ইত্তেফাক মোড়ে দায়িত্বরত এক ট্রাফিক কনস্টেবল বলেন, তারা যে ধুলাবালু আর রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে ডিউটি করেন তাদেরও তো কষ্ট হয়। ওই কনস্টেবল বলেন, খোঁড়াখুঁড়ির কারণে কোনো কোনো এলাকায় যানজট আরো বেড়েছে। তাদের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল ঈদের আগে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি না করার জন্য। কিন্তু কেউ তাদের কথা শোনেনি। ওই কনস্টেবল বলেন, ইত্তেফাক মোড়ের আশপাশের সব ক’টি সরুগলিতে কাটাকাটি করা হয়েছে। যে কারণে ওই রাস্তাগুলো বন্ধ। মানুষের এখন প্রধান সড়ক ছাড়া কোন উপায় নেই। যে কারণে প্রধান সড়কে দিনভর যানযট।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা