গ্রামীণ স্থানীয় সরকারের একক আইনের সুপারিশ
- বাসস
- ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
গ্রামীণ স্থানীয় সরকারের তিনটি প্রতিষ্ঠানকে তিনটি পৃথক আইনের বদলে একটি একক আইন এবং নগর স্থানীয় সরকারের দু’টি প্রতিষ্ঠান পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনকে আরেকটি একক আইনের অধীনে এনে কাঠামোগত সামঞ্জস্যতা বিধান করার প্রস্তাব করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন।
গত ১৮ নভেম্বর সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি প্রজ্ঞাপনে প্রফেসর তোফায়েল আহমেদকে প্রধান করে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব করার লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠিত হয়।
কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ সংস্কার কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘যেহেতু কাজ পরিপূর্ণভাবে শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে, তাই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন শেষ করতে আরো কিছু সময় প্রয়োজন হবে।
ইতোমধ্যে সরকার ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে জাতীয় নেতৃবৃন্দের সাথে সংস্কার বিষয়ে আলোচনা করছে। তাই স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন আলোচনা ও ঐকমত্যে উপনীত হওয়ার প্রক্রিয়াকে সহজতর করার জন্য এ কমিশনের তৈরীকৃত প্রাথমিক কিছু মৌলিক সুপারিশ এখনই সরকার ও ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার জন্য উপস্থাপন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। প্রাথমিক সুপারিশের সাথে আরো দু’টি অধ্যায় বিশেষত সারা দেশে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মাধ্যমে ৪৬৬৮০ জন উত্তরদাতার মধ্যে পরিচালিত মতামত জরিপ এবং নির্বাচনবিষয়ক একটি অধ্যায় যুক্ত করা হয়েছে।’
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন আইন কাঠামো বিষয়ে দেয়া সুপারিশে বলেছেন, বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত সারা দেশে স্থানীয় সরকারের পাঁচটি মৌলিক আইন রয়েছে। এগুলো হলো- ইউনিয়ন পরিষদ আইন, উপজেলা পরিষদ আইন, জেলা পরিষদ আইন, পৌরসভা আইন ও সিটি করপোরেশন আইন। আইনগুলো ভিন্ন ভিন্ন থাকার কারণে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদ কাঠামো অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
গ্রামীণ স্থানীয় সরকারের তিনটি প্রতিষ্ঠানকে তিনটি পৃথক আইনের বদলে একটি একক আইন ও নগর স্থানীয় সরকারের দু’টি প্রতিষ্ঠান যথা পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনকে আরেকটি একক আইনের অধীনে এনে কাঠামোগত সামঞ্জস্যতা বিধান করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ রকম দু’টি আইন বলে পাঁচটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামো হবে একই ধাচের সংসদীয় পদ্ধতির। ফলে দেশের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তথা ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানে পাঁচ বছরে মাত্র একবার সর্বাধিক দেড় থেকে দুই মাস সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। এতে করে নির্বাচন ব্যবস্থাটিও ব্যয় সাশ্রয়ী ও সময় সাশ্রয়ী হবে বলে সুপারিশে বলা হয়।
অভিন্ন বা সমন্বিত দু’টি স্থানীয় সরকার আইন এর খসড়া এ কমিশন প্রস্তাব আকারে পেশ করছে, যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অধ্যাদেশ আকারে প্রণয়ন করতে পারে। অথবা পরবর্তীকালে নির্বাচিত সরকার আইন আকারে প্রণয়ন করতে পারে।
স্থানীয় সরকার কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ সদস্য, নারী সদস্য ও চেয়ারম্যান প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হলেও উপজেলায় চেয়ারম্যান, সাধারণ আসনের ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত নারী আসনের ভিন্ন পদধারী তিনজন একই আকারের নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচিত হন। আবার জাতীয় সংসদ সদস্যেরও নির্বাচনী এলাকা প্রায় ক্ষেত্রে অভিন্ন। এই চার প্রতিনিধির মধ্যে রাজনৈতিক সঙ্ঘাত তাই অনিবার্য হয়ে ওঠে। এখানে নির্বাচন ব্যবস্থা ও এখতিয়ারের ক্ষেত্র পরিবর্তন প্রয়োজন।
অপরদিকে জেলা পরিষদে জনগণের ভোটদানের কোনো ব্যবস্থা নেই। আকার ও ভোটার সংখ্যা বিবেচনায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হওয়া প্রায় অসম্ভব। সে ক্ষেত্রে ওয়ার্ড সদস্যদের সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বর্তমানে জেলা ও উপজেলায় কোনো ওয়ার্ড নেই। উপজেলায় নারী সদস্য নির্বাচনের বিধান থাকলেও তা অকার্যকর। তাই ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় প্রত্যক্ষ ভোটে ওয়ার্ড সদস্য নির্বাচনের বিধান প্রস্তাব করা হয়।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে পৃথক অধিদফতর গঠনের সুপারিশ
স্থানীয় সরকারের সব কার্যক্রম, পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন, আর্থিক অডিট, পারফরমেন্স অডিট ও কমপ্লায়ান্স অডিট পরিচালনার জন্য একটি পৃথক অধিদফতর গঠনের সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন।
গত ১৮ নভেম্বর সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি প্রজ্ঞাপনে প্রফেসর তোফায়েল আহমেদকে প্রধান করে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব করার লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠিত হয়।
কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ সংস্কার কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘যেহেতু কাজ পরিপূর্ণভাবে শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে, তাই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন শেষ করতে আরো কিছু সময় প্রয়োজন হবে। ইতোমধ্যে সরকার ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে জাতীয় নেতৃবৃন্দের সাথে সংস্কার বিষয়ে আলোচনা করছে।
তাই স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন আলোচনা ও ঐকমত্যে উপনীত হওয়ার প্রক্রিয়াকে সহজতর করার জন্য এ কমিশনের তৈরীকৃত প্রাথমিক কিছু মৌলিক সুপারিশ এখনই সরকার ও ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার জন্য উপস্থাপন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। প্রাথমিক সুপারিশের সাথে আরো দু’টি অধ্যায় বিশেষত সারা দেশে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মাধ্যমে ৪৬৬৮০ জন উত্তরদাতার মধ্যে পরিচালিত মতামত জরিপ এবং নির্বাচনবিষয়ক একটি অধ্যায় যুক্ত করা হয়েছে।’
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি পৃথক অধিদফতরের কার্যক্রম বিষয়ে বলা হয়, স্থানীয় সরকার বিভাগে বর্তমানে কার্যরত পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন অধিদফতরকে অধিকতর শক্তিশালী করে পুনর্গঠিত একটি নতুন অধিদফতর গঠন করার সুপারিশ করা হলো।
এ অধিদফতরে পেশাদার আমলার সাথে আর্থিক নিরীক্ষা, পারফরম্যান্স অডিট, কমপ্লায়ান্স অডিট, মনিটরিং ও প্রকল্প কর্ম মূল্যায়নের দক্ষতা সম্পন্ন পেশাজীবী নিয়োগ করা হবে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি করপোরেশন পর্যন্ত সব প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম এ অধিদফতরের আওতাধীন হবে। স্থানীয় সরকার কমিশন ও স্থানীয় সরকার বিভাগ এ অধিদফতরের প্রয়োজনীয় আইন কানুনের খসড়া তৈরি করবে।
বিভাগীয় কমিশনার অফিসের পরিচালক স্থানীয় সরকার এবং ডেপুটি কমিশনার অফিসের সাথে সংযুক্ত উপপরিচালক স্থানীয় সরকারের পদগুলো বিলুপ্ত হবে। একজন উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার অধীনে অন্যূন ১০ জনের একটি সংগঠন ওপরে বিবৃত অধিদফতরের অধীনে প্রতিটি জেলায় কাজ করবে। এ অধিদফতর সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আয় ব্যয় ও সেবাকর্মের ওপর প্রতি বছর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করবে বলে সুপারিশমালায় উল্লেখ করা হয়।