৬৫৪ কোটি টাকার ২০ সেট ডেমু ট্রেন কাজে আসছে না
- ওমর ফারুক চট্টগ্রাম ব্যুরো
- ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কেনা ২০ সেট ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডেমু) ট্রেনের জায়গা হয়েছে ওয়ার্কশপে। এর আগে কয়েকবার অর্থ খরচ করে মেরামতের পরে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ডেমু ট্রেনগুলো কেনায় ৬৫৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল রেলের। বাংলাদেশ রেলওয়ে চীন থেকে আমদানি করা ডেমু ট্রেন দেশের রেলপথে ২০১৩ সালে চলাচল শুরু করলেও ৫-৬ বছর যাবৎ ওয়ার্কশপে শিকলবন্দী অবস্থায় পড়ে আছে। ২০ সেট ডেমু ট্রেনের মধ্যে ১৮ সেটই এখন অচল।
রেল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিদেশী সফটওয়ার ও প্রযুক্তির ফলে রেলের দক্ষ লোকের অভাবে তা চালাতে পারছে না। ফলে এই প্রকল্পে খরচ করা ৬৫৪ কোটি টাকা হাতে ধরেই গচ্ছা দিয়েছেন তৎকালীন কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন শুধু মোটা অংকের কমিশন আদায়ের জন্য ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা না করেই এই প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল।
জানা যায়, আরামদায়ক কম দূরত্বে ভ্রমণের জন্য চীন থেকে আমদানি করা হয় এই ডেমু ট্রেন। ট্রেনগুলোর সামনে-পেছনে দুই দিকেই আছে ইঞ্জিন। স্বল্প দূরত্বে দ্রুত চলাচলের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ট্রেনগুলো রেলওয়েতে সংযোজন করা হয়। কেনার সময় চুক্তিতে প্রতিশ্রুতি ছিল টানা ২০-২৫ বছর ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু ২০১৩ সালের মাঝামাঝি ঢাকঢোল পিটিয়ে উদ্বোধন করার পরপরই যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। এর পর থেকে নানা যান্ত্রিক ত্রুটি লেগেই ছিল ২০ সেট ট্রেনে। চলাচল অযোগ্য এসব ট্রেনে আয়ের চেয়ে মেরামত খাতে ব্যয় বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে ২০১৯ সাল থেকে ডেমু ট্রেনে যাত্রী পরিবহন সেবা বন্ধ হয়ে যায়।
রেলওয়ের মেকানিক্যাল বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০ সেট ডেমু ট্রেনের মধ্যে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী লোকোশেডে আছে ১০ সেট। আট সেট ডেমু ট্রেন ঢাকার কমলাপুর লোকোশেডে, দুই সেট ডেমু ট্রেন পার্বতীপুর লোকোশেডে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের লোকোশেডে থাকা ১০ সেটের মধ্যে এক সেট সচল আছে। আর ঢাকার লোকোশেডে থাকা এক সেট ডেমু ট্রেন সচল আছে।
ঢাকার সচল ডেমুটি চলত ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথে। চট্টগ্রামের ডেমুটি চলত চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রেলপথে। দুটি ট্রেন পরিচালনার জন্য লোকোমাস্টার বা এলএম নেই। নেউ গার্ড ও ক্রু। তাই দুই সেট ডেমু ট্রেন কারিগরিভাবে সচল থাকলেও চালানো যাচ্ছে না।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, ৬৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ সেট ট্রেন যাচাই-বাছাই না করেই কেনা হয়, যা আমাদের দেশের আবহাওয়া উপযোগী নয়। ট্রেনগুলো এ পর্যন্ত যা আয় করেছে তার চেয়ে মেরামত খাতে ব্যয় হয়েছে বেশি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের পাহাড়তলী কর্মব্যবস্থাপক ( ডিজেল) এতেসাম মো: শফিক জানান, দক্ষ লোকবল সঙ্কটের কারণে এগুলো মেরামত ও অপারেটিং করা যাচ্ছে না। তবে এগুলো মূলত ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরত্বের যোগাযোগ সুবিধার জন্য উপযোগী। কিন্তু বেশ কিছু অজানা কারণে এবং হঠকারিতায় এসব ট্রেন ১৫০ কিলোমিটার দূরত্বেও নিয়ে গেছে কর্তৃপক্ষ। মূলত এ কারণেই ট্রেনগুলো অল্প দিনে বিকল হয়ে পড়ে।
তিনি আরও বলেন,পুরো ট্রেনে বিদেশী সফটওয়্যার থাকায় মেরামত করেও সুবিধা করতে পারছেন না দেশের প্রকৌশলীরা। তাই বেশির ভাগ ডেমু এখন মুমূর্ষু অবস্থায় ওয়ার্কশপে।
এ দিকে ডেমু ট্রেনগুলো একে একে বিকল হয়ে পড়ার বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ‘ডেমু ট্রেন মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’ শীর্ষক রেলওয়ের এক প্রতিবেদন উপস্থাপনায় বলা হয়, এসব ট্রেনে উচ্চপ্রযুক্তির সফটওয়্যার নির্ভর মডিউলসহ ইলেকট্রিক যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এ সম্পর্কে বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীদের কোনো ধারণা ছিল না।
এমনকি এসব মডিউল, যন্ত্রাংশ দেশের বাজারে পাওয়া যায় না। মূল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তা সংগ্রহ ও সফটওয়্যার প্রোগ্রাম করে ডেমুতে সংযোজন করার প্রয়োজন হয়, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা