২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ২১ শাবান ১৪৪৬
`
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন

ব্যাংকে ৬ মাসে ফিরে এসেছে ১৪ হাজার কোটি টাকা

-


স্বৈরাচারী হাসিনার পতনের পর ব্যাংকিং খাতের ওপর গ্রাহকের আস্থা ফিরে আসছে। এস আলম, বেক্সিমকোর সালমান এফ রহমান, এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ ব্যাংক লুটেরাদের আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ব্যাংকগুলো থেকে অনৈতিকভাবে টাকা বের হওয়া থেমে গেছে। এরই সুবাদে যারা এতদিন ব্যাংকে টাকা রাখতে আস্থার সঙ্কটে ভুগতেন তারা আবার ব্যাংকে টাকা জমা রাখা শুরু করেছেন। গত ৬ মাসে ব্যাংকবহির্ভূত এমন ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকিং খাতে ফিরে এসেছে। এতে ব্যাংকে বেড়ে গেছে আমানত প্রবাহ। ৬ মাসে আমানত বেড়েছে ৩৪ হাজার কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর প্রান্তিকের বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ বেড়ে গেলে সেটি অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হয়। কারণ ব্যাংকের বাইরে থাকলে টাকার হাতবদল হওয়া কমে যায়, যা দিনশেষে ‘মানি ক্রিয়েশন’ কমিয়ে দেয়। মানুষের হাতে থাকা টাকা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ব্যাংকে ফিরলে একদিকে যেমন ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি ভালো হয়, অন্য দিকে ঋণ দেয়ার মতো তহবিলের পরিমাণ বাড়ায় দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। এরপর থেকে প্রতি মাসেই এর পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই শেষে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ সর্বোচ্চ ২ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছায়। সেপ্টেম্বর থেকে ব্যাংকে ফিরতে শুরু করে বাইরে থাকা টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকের বাইরে মানুষের ঘরে বা হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণও কমে এসেছে। এসব অর্থের বড় অংশই ব্যাংকে ফিরে এসেছে। গত বছরের জুন শেষে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৯০ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে তা কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭৬ হাজার ৩৪১ কোটি টাকায়। সেই হিসাবে ৬ মাসের ব্যবধানে ব্যাংকের বাইরে থাকা প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকে ফিরে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, দেশের ব্যাংক খাতে গত জুন শেষে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ৪২ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে তা প্রায় ২ শতাংশ বা ৩৪ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা বেড়েছে। ডিসেম্বর শেষে ১৭ লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকার আমানতের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৭ লাখ ২ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে, আমানতের প্রায় ৯৬ শতাংশই ঋণ হিসেবে বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো।

এ দিকে ব্যাংক খাতের আস্থা ফেরায় ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম ১৫ দিনে ১৩১ কোটি ২২ লাখ ৩০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে) যার পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার ৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
এর আগে নতুন বছরের প্রথম মাসের (জানুয়ারি) পুরো সময়ে ২১৯ কোটি (২.১৯ বিলিয়ন ডলার) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। গত ডিসেম্বর মাসে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার বা ২৬৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। অর্থবছরের হিসাবে গত আগস্ট থেকে টানা ৬ মাস দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীরা।


আরো সংবাদ



premium cement