বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে : ডা: তাহের
- চট্টগ্রাম ব্যুরো
- ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:১৪
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ মাত্র ২-৩%। তাই আমাদের দেশে রোগীদেরতো হাসপাতালের ফ্লোরেই থাকতে হবে। উন্নত বিশ্বে স্বাস্থ্য খাতে বাজেট ৮-১২%। বরাদ্দটা ৮% থাকলে সরকারিভাবে মোটামুটি মানের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা যায়। চট্টগ্রামে একটি হাসপাতালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এ কথা বলেছেন। হাসপাতালের মূল হচ্ছে সেবা। রোগীদের বিদেশমুখী হওয়ার অন্যতম কারণও এটি। তাই বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোকে অবশ্যই সেবানির্ভর হতে হবে। ব্যবসানির্ভর মানসিকতা হাসপাতালের সাথে যায় না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালের নবনির্মিত ভবনে বিশ্বমানের স্পেশালাইজড হসপিটাল ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ডায়াগনস্টিক ল্যাবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগমের থাকার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে তিনি উপস্থিত হতে পারেননি। হাসপাতালের চেয়ারম্যান দেশের খ্যাতিমান গ্যাস্ট্রো এন্টারোলজিস্ট প্রফেসর ডা: এ কিউ এম মোহসেনের সভাপতিত্বে নগরীর জিইসি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এ অনুষ্ঠান ও মেজবানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ও চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা: শাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা: এ কে এম ফজলুল হক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের (সিআইএমসি) অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা: মো: টিপু সুলতান, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ মো: মোরশেদ হোসাইন, হাসপাতালের পরিচালক আমেনা শাহীন প্রমুখ।
ডা: তাহের বলেন, মেট্রোপলিটন হাসপাতালের আজকের যে সম্প্রসারণ এবং তাদের ৩৫-৪০ বছরের অভিজ্ঞতায় আমি খুবই উৎসাহিত বোধ করছি। মেট্রোপলিটন হাসপাতালকে কোন কোন ক্ষেত্রে সুপার স্পেশালাইজড হসপিটাল বললেও বেশি হবে না বলে।
তিনি বলেন, লন্ডনে একজন চিকিৎসক এক রোগীর ২৫ মিনিট কথা শোনার পর আরো কথা আছে নাকি জিজ্ঞেস করে। আমাদের এখানে এ রকম হয় না। বাংলাদেশের চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের এটিচিউড, ম্যান্টালিটি, অবজেকটিভ এগুলো চেঞ্জ করতে হবে, এটাকে দায়িত্ব মনে করতে হবে। মেডিক্যাল প্রফেশনে ইথিক্যাল প্র্যাকটিস করতে হবে। শরিয়াহভিত্তিক হাসপাতাল সেবার ধারণাও দেন তিনি। ডা: তাহের বলেন, বাংলাদেশের মূল সমস্যা হচ্ছে নৈতিকতা সম্পন্ন, সৎ ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্বের অভাব। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা বারবার রক্ত দিয়েছি, কিন্তু সৎ এবং যোগ্য নেতৃত্ব পাইনি। আমাদের প্রথম নেতাই বলেছিলেন, আমার সামনে, পেছনে, ডানে বামে সব চোর।
৭২’র সংবিধান প্রসঙ্গে জামায়াতের এই নেতা বলেন, এটা একটা অবৈধ সংবিধান। ৭২-এর সংবিধান যারা রচনা করেছিলেন তারা পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। পাকিস্তানের সংবিধানের আওতায় যে নির্বাচন সে নির্বাচনের মাধ্যমে তারা নির্বাচিত। তারপরও একটি রেফারেন্ডামের মাধ্যমে করা হলে সেটা গ্রহণযোগ্য হতো। এরকম একটি নড়বড়ে ভিত্তির ওপর একটি জাতি অগ্রসর হতে পারে না।
নিজের এমপি থাকাকালীন একটি দুর্নীতির তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, মন্ত্রীসহ সব জেলার সিভিল সার্জনরা মিলে ১০৫ কোটি টাকার পুরোটাই সাবাড় করেছিলেন। যে দেশের মন্ত্রী এবং সিভিল সার্জনরা পুরো বরাদ্দটাই ভাগবাটোয়ারা করে নেয় সে দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নতি কিভাবে হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশের সর্বশেষ যে পরিবর্তন হয়েছে তার ফলে জাতিকে আজ ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দল এখানে বড় কথা নয়, স্লেøাগান এখানে বড় কথা নয়। আমি কে আপনি কে এটা বড় কথা নয়। দেশের জন্য সবচেয়ে বড় হচ্ছে, নেতৃত্বকে অঙ্গীকার করতে হবে যে, আমি যদি জনগণের দায়িত্ব পাই, আমি দুর্নীতি করব না, লুটপাট করব না, আমি এ দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করব। তবেই স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে মাথা উঁচু করে আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারব।
চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা: শাহাদাত হোসেন বলেন, ২৫০ শয্যার স্পেশালাইজড হসপিটাল হিসেবে মেট্রোপলিটন হাসপাতালের নতুন যাত্রাকে স্বাগত জানাচ্ছি। ডা: ফজলুল হকের নেতৃত্বে এই হসপিটালের নতুন যাত্রায় মেয়র হিসেবে অত্যন্ত আনন্দিত। ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের রোগীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভারতমুখী এবং তাদের ভিসা দিতে হিমশিম খেতে হয়। এটা আমাদের জন্য লজ্জার। কেন রোগীরা ভারতমুখী তা আমাদের পর্যালোচনা করা উচিত। রোগীদের কেন আমরা ধরে রাখতে পারছি না? আমদের তো মেট্রোপলিটনের মতো ভালো হসপিটাল আছে। তিনি বলেন, সবাইকে সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে চিন্তা করতে হবে। দেখতে হবে কী কারণে তারা ভারত যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমি এটুকু বলতে পারি যে, বাংলাদেশের ডাক্তাররা অনেক অভিজ্ঞ। ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর দিকেও নজর দিতে হবে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ইন্ডিয়াতে একটা ওষুধে তিনটি ওষুধের কম্বিনেশন থাকে। ফলে ওই ওষুধ খেয়ে রোগী আরাম ফিল করছে। কিন্তু আমাদের দিতে হচ্ছে তিনটি পৃথক ওষুধ। ফলে রোগীদের ধারণা হচ্ছে ইন্ডিয়ার ওষুধ ভালো। ওষুধের গুণগত মান কতটুকু আছে সে বিষয়েও নজরদারি জরুরি মন্তব্য করে তিনি বলেন, এমন কোনো ল্যাব চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত হয়নি। এটাকে আমরা ঠিক করতে পারলে আমাদের রোগী আমাদের কাছেই থাকবে। সমন্বিত একটি চিকিৎসাব্যবস্থা করতে পারলে দেশ সমাজ উপকৃত হবে।
সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী মেট্রোপলিটন হাসপাতালে নিজের হার্টের বাইপাস সার্জারির কথা স্মরণ করে হাসপাতালের সেবায় নিজের সন্তুষ্টির কথা ব্যক্ত করেন। এখানে অপারেশন করে আমি আল্লাহর রহমতে এখন খুব ভালো আছি। আগামীদিনে এই হাসপাতাল আরো ভালো করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা: এ কে এম ফজলুল হক বলেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালের বিএমআরই (ব্যালেন্সিং, মডার্নাইজেশন, রিহেবিলিটেশন অ্যান্ড এক্সপানশন) প্রকল্প হাসপাতালের উন্নয়নের একটি নতুন মাইলফলক। এটি আধুনিক চিকিৎসা সেবার পরিধি বাড়িয়ে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যসেবাকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমাদের সেবার মান উন্নত করতে ও রোগীদের আরো ভালো চিকিৎসা সুবিধা দেয়ার জন্য ২০ তলাবিশিষ্ট মেডিক্যাল গ্রেড একটি নতুন ভবন নির্মাণ করেছি, যা আধুনিক প্রযুক্তি ও সুযোগ সুবিধার সমন্বয়ে তৈরি। তিনি বলেন, এখানে আমরা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ বিশ্বমানের ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপন করেছি, যা আধুনিক চিকিৎসাসেবার নতুন এক দ্বার উন্মোচন করল।
সভাপতির বক্তৃতায় হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা: এ কিউ এম মোহসেন বলেন, মেট্রোপলিটন হাসপাতালের সমস্ত সেবা রোগীদের সুযোগ-সুবিধার জন্য। বছরের পর বছর লোকসান দিয়েও হাসপাতালের কার্ডিয়াক সেন্টার চালু রাখা হয়েছে রোগীদের কথা চিন্তা করেই। আমরা নিজের দেশ রেখে কেন প্রতিবেশী দেশে চিকিৎসার জন্য যাই সে জন্য সে দেশের ডাক্তাররা আমাদের লোকজনকে কিন্তু বোকাই ভাবেন। ভারত যাওয়ার আগে তাদেরকে ভাববার আহ্বান জানান তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা