অটোরিকশা মিটারে না চালালে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
ডিএমপিকে বিআরটিএ’র চিঠি : গণপরিবহনে অস্থিরতার আশঙ্কা- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
সিএনজি বা পেট্রোলচালিত অটোরিকশায় মিটারের চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করলে চালককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হতে পারে। হতে পারে ৬ মাসের জেলও। একই সাথে বিআরটিএ থেকে দেয়া রুট পারমিট অনুযায়ী যাত্রীর চাহিদা মতো চালক যে কোনো জায়গায় যেতে বাধ্য থাকবে। অন্যথায় চালককে শাস্তির আওতায় আনা হবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। গত সোমবার বিআরটিএ পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) শীতাংশু শেখর বিশ্বাসের স্বাক্ষরিত একটি পত্র ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছে দেয়া হয়েছে।
পত্রে বলা হয়েছে, গ্যাস বা পেট্রোল চালিত ৪-স্ট্রোক থ্রি-হুইলার অটোরিকশার জন্য সরকার নির্ধারিত মিটারের ভাড়ার অতিরিক্ত আদায়ের অভিযোগের বিষয়ে মামলা রুজু করার নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
পত্রে আরও বলা হয়েছে, সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ধারা ৩৫(৩) অনুযায়ী কোনো কন্ট্রাক্ট ক্যারিজের মালিক বা চালক রুট পারমিট এলাকার মধ্যে যেকোনো গন্তব্যে যেতে বাধ্য থাকবেন এবং মিটারে প্রদর্শিত ভাড়ার অতিরিক্ত অর্থ দাবি বা আদায় করতে পারবেন না। এর ব্যত্যয় ঘটলে আইনের ধারা ৮১ অনুযায়ী অনধিক ৬ মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে দোষসূচক এক পয়েন্ট কর্তন করার বিধান রয়েছে। এ অবস্থায়, গ্যাস বা পেট্রোল চালিত ৪-স্ট্রোক থ্রি-হুইলার অটোরিকশার জন্য সরকার নির্ধারিত মিটার হারের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট মোটরযান চালকের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন যে, তাদের প্রতি যে ধরনের নির্দেশনা আসবে সে ভাবেই তারা ব্যবস্থা নিবেন। তবে সংশ্লিষ্ট অনেকে বলছেন, এ সময় হঠাৎ করে এ নির্দেশনা জারির ফলে অটোরিকশা চালকরাও আবার আন্দোলনে নেমে যেতে পারেন। সম্প্রতি রাজধানীতে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাউন্টার থেকে নির্ধারিত টিকিটে গাড়ি চালানো নিয়ে চালক-মালিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। এতে বাসের সংখ্যা কমে যাওয়ায় যাত্রীদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এর মধ্যে সিএনজি চালিত রিকশা চালকরা যদি ধর্মঘটে যায় তবে নগরবাসীর দুর্ভোগ চরমে উঠে যাবে।
রাজধানীতে সিএনজি অটোরিকশা চালকদের বিরুদ্ধে মিটারের চেয়ে বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ নতুন নয়। অনেক দিন ধরেই চালকরা মিটারের পরিবর্তে গন্তব্য অনুযায়ী আগে ভাড়া ঠিক করে তার পরে যেতে রাজি হয়। যাত্রীরা তাদের কাছে এক রকম জিম্মি। অটোরিকশাতে মিটার লাগানো থাকলেও চালকরা মিটার অনুযায়ী ভাড়া নেন না। সব সময় সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চাইতে বেশি নিয়ে থাকেন। এ নিয়ে অবশ্য আগে যাত্রী ও চালকদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হলেও এখন অনেকটা গা সওয়া হয়ে গেছে। বিষয়টি পুলিশ সদস্যরাও জানে।
অভিযোগ রয়েছে বর্তমানে ঢাকায় চালিত অনেক অটোরিকশার মালিক পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। বিশেষ করে ধূসর বা রূপালি রঙের অটোরিকশাগুলোর গায়ে প্রাইভেট লিখে তা ভাড়ায় চালানো হয়। ভাড়ায় চালানোর জন্য রাজধানীতে রুট পারমিট নিতে প্রতিটি অটোরিকশার জন্য তার দামের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি অর্থ খরচ করতে হয় বলে অনেকে পুলিশকে ম্যানেজ করে প্রাইভেট লিখে চালিয়ে থাকে। একজন মালিক বললেন, অটোরিকশার দাম যদি হয় ৫ লাখ টাকা তবে রুট পারমিট নিতে খরচ করতে হয় প্রায় ২৫ লাখ টাকা।
জানা যায়, বর্তমানে অটোরিকশার মালিকের জন্য দৈনিক জমা নির্ধারিত আছে ৯০০ টাকা। তবে চালকরা বলছেন, মালিকরা দিনে দুই বেলা হিসাব করে চালকের কাছে অটোরিকশা ভাড়া দিয়ে ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করেন।
অটোরিকশার বর্তমান সর্বনিম্ন (প্রথম দুই কিলোমিটার) ভাড়া ৪০ টাকা; অর্থাৎ একজন যাত্রী চাইলে ৪০ টাকায় অটোরিকশা ভাড়া করার সুযোগ পাবেন। যাত্রীদের অভিযোগ, ১৫০ টাকার নিচে স্বল্প দূরত্বে যাতায়াত করা যায় না। দুই কিলোমিটারের পরের প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১২ টাকা নির্ধারিত থাকলেও তা কেউ মানেন না।
২০০৩ সালের দিকে রাজধানী ঢাকা ও বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে ডিজের চালিত বেবিট্যাক্সি তুলে দিয়ে সিএন জিচালিত অটোরিকশা চালু করে তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকার। মিটারে নির্ধারিত ভাড়া ও যাত্রীদের চাহিদা মতো গন্তব্যে চলাচল করতে বাধ্য থাকা ছিল মূল শর্ত। কিন্তু নগরবাসী বলছেন, প্রথম দিকে কিছুটা মানা হলেও অনেক দিন ধরেই শর্তগুলো আর মানা হয় না। ভাড়া নির্ধারিত হয় চালকের ইচ্ছে মতো। নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে চাইলে অনেক ক্ষেত্রেই চালকরা অনীহা দেখান।
সিএনজি চালিত অটোরিকশার নীতিমালা অনুসারে, মালিকরা অটোরিকশা কিনে চালকদের চালাতে দেবেন। বিনিময়ে সরকার নির্ধারিত হারে দৈনিক জমা পাবেন তারা। আর চালকরা মিটারে নির্ধারিত ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করবেন। বাস্তবে কোনো পক্ষই আর আইনের তোয়াক্কা করেন না। চালকদের দাবি যানজট আর জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তাদের পক্ষে সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় গাড়ি চালিয়ে সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।