উচ্চপদস্থরা তদন্তে বাধা দেয়ায় ১৩ বছরেও প্রতিবেদন জমা হয়নি
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার বাদির আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেছেন, এ মামলার তদন্ত অতীতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা বাধাগ্রস্ত করেছে। এ কারণে ১৩ বছর পার হলেও তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমান সরকার আসার পর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ মামলাটি তদন্তের জন্য উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করেছে। আগামী ৪ এপ্রিলের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের কথা রয়েছে। টাস্কফোর্সে যারা রয়েছেন, তারা মামলার বাদি, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তদন্ত অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তদন্ত কমিটির সংশ্লিষ্টরা আমাদের জানিয়েছেন, আগের সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে তদন্তে বাধা দেয়া হতো, এ কারণে তদন্ত আগায়নি। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় মামলার বাদি নওশের রোমান, সাগর-রুনির ছেলে মাহির সারওয়ার মেঘ উপস্থিত ছিলেন।
আইনজীবী শিশির মনির বলেন, যতটুকু আমরা জানতে পেরেছি বেশকিছু ডেভেলপমেন্ট (অগ্রগতি) হাতে এসেছে। সময়ের ব্যবধানে এই ডেভেলপমেন্ট নিয়ে হাইকোর্ট বিভাগে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। অতীতে মামলাটিকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে দেয়া হয়নি; এই মর্মে তদন্ত রিপোর্টে কিছু তথ্য-উপাত্ত এসেছে। অতীতে এই তদন্ত প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে, আইনি পদ্ধতিতে চলতে দেয়া হয়নি। আশা করি স্বল্পতম সময়ের মধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তারা একটি গ্রহণযোগ্য বিচার পরিচালনা করার মতো উপযুক্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করবেন।
শিশির মনির বলেন, কিছু ইন্ডিকেশন (আলামত) আসছে যে, অতীতে তদন্তকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্টারেস্ট ইম্পিলিমেন্টের জন্য তদন্ত প্রক্রিয়াকে সঠিক আইনি পথে পরিচালিত হতে দেয়া হয়নি। এগুলো তদন্তের অংশ হবে। কারা কারা ছিলেন, কারা বাধা দিয়েছেন, কীভাবে দিয়েছেন। যারা রিট করেছেন তারা কেন রিট করেছেন। কেন র্যাবকে সেই দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। র্যাবতো কোনো তদন্তকারী সংস্থা না। সেটিও খতিয়ে দেখছে তদন্ত সংস্থা। শিশির মনির আরো বলেন, অতীতে উচ্চ পর্যায় থেকে এখানে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। এই উচ্চ পর্যায় চিহ্নিত করে তদন্ত রিপোর্টে দেখানো হবে। আপাতত বলাটা সমীচীন নয়।
রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, তদন্ত তো আমরা বুঝি না। তারপরও সবকিছু দেখে কিছুটা আশার আলো দেখতে পাই। আমরা আশা করবো যেহেতু আগের সরকার নেই, আমরা সব সময় মনে করতাম যে, আগের সরকারের সংশ্লিষ্ট কেউ বা সরকার স্বয়ং এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত। কারণ যত ধরনের নাটক হয়েছে, যেমন ডিএনএ টেস্ট থেকে শুরু করে আমাদের হয়রানি এবং নানা সময় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী কথাবার্তা বলেছেন। যেমন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বেডরুম পাহারা দেয়ার দায়িত্ব তার না। এসব থেকে আমরা মনে করি তৎকালীন সরকার বা তাদের সংশ্লিষ্ট কেউ এটার সঙ্গে জড়িত। সরকার আন্তরিক হলে ১২ বছর ধরে তদন্ত চলতো না। র্যাবের মতো একটা বাহিনী যারা তদন্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত না। এতবার আশাভঙ্গ ঘটেছে, যার ফলে আমরা আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু পাচ্ছি না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা তদন্ত রিপোর্ট কী আসছে সেটা জানতে পারছি।
মাহির সরওয়ার মেঘ বলেন, আগে তো কিছু হতো না। এখন তো দেখছি যে ওরা কাজ করছে। তো একটু হলেও আমরা আশাবাদী। আশা করা যাচ্ছে পজিটিভ কিছু একটা শুনতে পাবো।