হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগে বয়স ৪৮, অবসর ৭০ করার সুপারিশ
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট- হাবিবুর রহমান
- ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:৪৫
সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক নিয়োগে প্রার্থীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং বয়স অন্যূন ৪৮ বছর হতে হবে। আর বিচারকদের অবসরের বয়স বিদ্যমান ৬৭ বছরের পরিবর্তে ৭০ করার সুপারিশ করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, যা ভবিষ্যতে নিযুক্ত বিচারকদের জন্য প্রযোজ্য হবে। এ ছাড়া বিদ্যমান ১০ বছরের পেশাগত অভিজ্ঞতার পরিবর্তে ১৫ বছরের পেশাগত বাস্তব অভিজ্ঞতার বিধান অন্তর্ভুক্তের সুপারিশ করেছে কমিশন। সংবিধানে নতুন বিধান ৯৫ক অনুচ্ছেদ সংযোজনের মাধ্যমে বিচারপতি নিয়োগ কমিশনের বিধান করার সুপারিশ করেছে তারা।
তবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক নিয়োগে প্রার্থীর বয়স ৪৫ এর নিচে হবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গত ২১ জানুয়ারি জারি করা অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, ‘কাউন্সিল, এই অধ্যাদেশ অনুসারে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক উপযুক্ত ব্যক্তিকে বাছাইপূর্বক সুপ্রিম কোর্টের বিচারক পদে নিয়োগের সুপারিশ প্রণয়ন করিবে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৫ ও ৯৮ এর অধীন সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ও অতিরিক্ত বিচারক পদে নিয়োগের লক্ষ্যে কাউন্সিল সংবিধানে বর্ণিত যোগ্যতার সম্পূরক হিসাবে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ বিবেচনা করিবে:- প্রার্থীর বয়স, যা কোনোক্রমেই ৪৫ এর নিচে হবে না। প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশাগত দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, প্রকাশনা ও প্রশিক্ষণ। আইনের কোনো নির্দিষ্ট শাখায় প্রার্থীর বিশেষ জ্ঞান ও দক্ষতা। প্রার্থীর সামগ্রিক জ্ঞান, প্রজ্ঞা, সততা, সুনাম, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয়। কোনো ফৌজদারি মামলায় প্রার্থীর দণ্ড সম্পর্কিত তথ্য। কাউন্সিল কর্তৃক নির্ধারিত অন্যান্য বিষয়।,
এর আগে ২০১৪ সালে এ বয়সসীমা বাড়িয়ে ৭৫ করার প্রস্তাব করেছিল আইন কমিশন। কিন্তু সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি। তবে ১০ বছর পর এসে এবার ৭০ করার সুপারিশ করলো সংস্কার কমিশন।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি কমিশনের প্রধান আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানের নেতৃত্বে বিচার বিভাগ সংস্কারের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন, হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি এমদাদুল হক, ফরিদ আহমেদ শিবলী, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, মাসদার হোসেন, সিনিয়র অ্যাডভোকেট তানিম হোসেইন শাওন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক সুপন ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আরমান হোসাইন।
সংবিধানের ৯৬ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে বর্তমান বিচারপতিদের বয়সসীমা ৬৭ বছর।
এর আগে ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর সংবিধানের সপ্তম সংশোধনীতে বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ করা হয়। সর্বশেষ ২০০৪ সালের ১৬ মে চতুর্দশ সংশোধনীতে বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা ৬৫ থেকে ৬৭ করা হয়।
এর ১০ বছর পর এসে ২০১৪ সালের ১৯ আগস্ট আইন কমিশন বিচারপতি পদে নিয়োগে কমপক্ষে ৫০ বছর বয়স এবং অবসর গ্রহণের বয়স ৭৫ বছর নির্ধারণ করলে অভিজ্ঞ বিচারক দক্ষতার সঙ্গে অধিক সময় বিচারিক দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবেন বলে একটি প্রস্তাব সংবলিত সুপারিশ আইন কমিশন আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।
এর দুই বছর পর ২০১৬ সালে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপিতে দ্বিমত পোষণকারী বিচারপতি মো: আশরাফুল কামাল বলেন, যেহেতু অভিজ্ঞ বিচারকের সঙ্কট দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে, সেহেতু আমি মনে করি সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বয়স ৭৫ বছরে উন্নীত করা একান্তভাবে প্রয়োজন এবং অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। সেই লক্ষ্যে আমি জাতীয় সংসদের কাছে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের (১) উপধারা সংশোধনপূর্বক বিচারকদের বয়স ৬৭ এর স্থলে ৭৫ করার প্রস্তাব করছি।
প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারকের নিয়োগের সাথে সংশ্লিষ্ট সংবিধানের বিধানগুলো সংশোধন, যার মধ্যে রয়েছে: অনুচ্ছেদ ৪৮ (৩) (রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাকে সীমিত করে নিয়োগ কমিশনকে ক্ষমতায়িত করা), ৫৫(২) (প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতা থেকে প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারকের নিয়োগের বিষয়কে পৃথক করা), ৯৪ (বিচারকদের সংখ্যা নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির মতকে প্রাধান্য দেয়া এবং আপিল বিভাগের ন্যূনতম বিচারক সংখ্যা ৭ (সাত) জন করা), ৯৫ (রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারককেই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন, অর্থাৎ, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতির কোনো স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা থাকবে না বা নির্বাহী বিভাগের কোনো প্রভাব থাকবে না।