বুটেক্স স্টেশনারি স্থানান্তরের পরিকল্পনা, কিন্তু বাস্তবায়ন কবে?
- বুটেক্স প্রতিনিধি
- ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:৪৪
হাসিবের সকাল ৮টায় ল্যাব শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন ৮টা বেজে ১০ মিনিট। বিজয় সরণির সিগন্যালের কারণে মসলিন বাস ১০ মিনিট দেরি করে ক্যাম্পাসে এসেছে।
বাস থেকে নেমে অ্যাকাডেমিক ভবনের নিচতলায় স্টেশনারি দোকানের কাছে আসতেই তার মাথায় হাত। শিক্ষার্থী গিজ গিজ করছে দোকানের সামনে। বন্ধুকে তৎক্ষণাৎ কল দিয়ে জানতে পারলো স্যার আজ বরাবর ৮টায় ল্যাব শুরু করে দিয়েছে। শুরুতেই তিনি ল্যাব রিপোর্ট জমা নিয়েছেন।
হাসিবের মাথায় যেন বাজ পড়ল। সে এমনিতেই ১০ মিনিট দেরি করে ক্যাম্পাসে এসেছে। তার উপর তার ল্যাব রিপোর্টের কভার পৃষ্ঠা লিখা বাকি। স্টেশনারির জ্যাম ঠেলে যদি সে কভার পৃষ্ঠা কিনতে যায় তাহলে আজকে ল্যাবটাও মিস হওয়ার আশঙ্কা আছে। কোনো কিছু না ভেবে সে ল্যাবে দৌড় দিল। ভাগ্যিস ল্যাবে গিয়ে দেখলো তার আরেক বন্ধু অতিরিক্ত একটা কভার পেজ নিয়ে এসেছিল।
হাসিবের মতো সবার ভাগ্যে এমন হয় না বুটেক্সে। কারো হয়তো ল্যাবের অ্যাটেনডেন্স কাটা পড়ে। আবার কারো হয়তো নামের পাশে লাল দাগ। বুটেক্সের যে স্টেশনারি দোকানটি রয়েছে, তা যদি আরেকটু বিস্তৃত হতো তাহলে অনেকে হয়তো এমন পরিস্থিতির স্বীকার হতো না।
বুটেক্সের স্টেশনারি দোকান নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে নানান অভিযোগ। দাঁড়ানোর পর্যাপ্ত জায়গা না থাকা, দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা, অতিরিক্ত ভিড় সামলানোতে হিমশিম খাওয়া, দোকানের কার্যক্রম ধীরগতিতে চলা, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দোকানে মজুদ না থাকাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত এই স্টেশনারি।
বেশির ভাগ সময় শিক্ষার্থীরা এখান থেকে বিভিন্ন কোর্সের বই, নোট, শিট প্রিন্ট করানো এবং ফটোকপি করে থাকে। স্টেশনারিতে পণ্যগুলোর দাম সাধারণত বাইরের দোকানের তুলনায় তুলনামূলকভাবে কম থাকায় এখানে আসেন তারা। তা ছাড়া দোকানটি ক্যাম্পাসে অবস্থিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্লাসের ফাঁকে বা দ্রুত কেনাকাটা করতে এখানে আসে।
কিন্তু পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে এই স্টেশনারি শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কারণ। জায়গা স্বল্পতার কারণে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার কারণে শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময় অপচয় হয়। তা ছাড়া পর্যাপ্ত কর্মী না থাকায় অতিরিক্ত ভিড় সামলানো স্টেশনারি দোকানিদের জন্যও কষ্টসাধ্য।
স্টেশনারি দোকানের পরিচালক মো: কামরুল হাসান বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় এখানে শিক্ষার্থীদের চাপ স্বাভাবিকভাবেই বেশি। বিশেষ করে সকালের দিকে জায়গার অভাবে শিক্ষার্থীদের অনেক সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। জায়গার অভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণ সামগ্রী স্টেশনারিতে রাখা যায় না। কম্পিউটার সেবার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের চাপ অনেক সময় বেশি থাকে, আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ কম্পিউটার থাকা সত্ত্বেও জায়গার অভাবে আমরা কম্পিউটারগুলো স্টেশনারিতে স্থাপন করতে পারছি না। এ ক্ষেত্রে যদি স্টেশনারির জায়গা বাড়ানো যায় তাহলে তা সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো হবে। তিনি আরো বলেন, ছাত্র কল্যাণ পরিচালক ড. মো: রিয়াজুল ইসলামে সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন স্টেশনারি সম্প্রসারণের ব্যাপারটা তার পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে। এই ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে ড. মো: রিয়াজুল ইসলাম বলেন, আমাদের পরিকল্পনা আছে বর্তমানের স্টেশনারির জায়গা পরিবর্তন করে সেটাকে নতুন ক্যান্টিনের পাশে নেয়া এবং বর্তমানের স্টেশনারির জায়গাকে উন্মুক্ত রাখা। যেহেতু নতুন ক্যান্টিনের কাজ সম্পন্ন হয়নি তাই স্টেশনারি সম্প্রসারণের কাজ এখন সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। পরে নতুন ক্যান্টিনের কাজ সম্পন্ন হলে স্টেশনারি সম্প্রসারণের কাজও পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা হবে।
ডাইস অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো: মাশরাফি বলেন, স্টেশনারিতে দু’জন মাত্র লোক, ২টা ফটোকপি মেশিন আর ৩টা প্রিন্টার প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে, যেটা খুবই দুঃখজনক ও শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময়ের অপচয় ও অ্যাকাডেমিক ভোগান্তির কারণ। দ্রুত এই সমস্যা সমাধান ও ভোগান্তি নিরসনে কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
টেক্সটাইল ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রফিকুল বারি শীতল বলেন, আমার মনে হয় আমাদের স্টেশনারিতে যথেষ্ট পরিমাণ সরঞ্জাম আছে যা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য কাজে দেয়। ক্লাসের ফাঁকে বিরতির সময়গুলোতে যখন শিক্ষার্থীদের অনেক চাপ থাকে তখন আসলে ওখানকার ২-৩ জন কর্মচারী মিলে সামাল দেয়াটা যথেষ্ট কঠিন। স্টেশনারি সেখান থেকে সরিয়ে বড় কোনো জায়গায় নিয়ে গেলে অথবা আরো ১-২টা অতিরিক্ত জানালা স্টেশনারির সাথে সংযুক্ত থাকলে আশা করা যায় শিক্ষার্থীদের এই চাপ সামাল দেয়া যাবে।
অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো: আব্দুল্লাহ আল রাফি বলেন, পর্যাপ্ত কর্মীর অভাব থাকায় বিভিন্ন সেবা যেমন- প্রিন্টের সেবা পেতে অনেক সময় লেগে যায়। ৫-৬ জনের বেশি শিক্ষার্থী স্টেশনারিতে দাঁড়াতেও পারে না, যার কারণে বাধ্য হয়ে আমাদের ক্যাম্পাসের বাইরে গিয়ে কাজ করিয়ে নিতে হয়। যা একটা ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাচ্ছি।