আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সাময়িক বরখাস্তের প্রতিবাদ
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:৪৪
প্রশাসন ক্যাডার কর্তৃক পক্ষপাতিত্বপূর্ণ ও বৈষম্যমূলকভাবে সাময়িক বরখাস্তের প্রতিবাদে এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের প্রতিক্রিয়ায় সংবাদ সম্মেলন করেছে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ। গতকাল শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক মো: শওকত হোসেন মোল্যা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- গণপূর্ত ক্যাডারের মো: জামিলুর রহমান, স্বাস্থ্য ক্যাডারের ডা: মোহাম্মদ নেয়ামত হোসেন, শিক্ষা ক্যাডারের ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান, প্রাণিসম্পদ ক্যাডারের ড. মুহাম্মদ আহসান হাবীব, কৃষি ক্যাডারের মো: মমিনুল হক, কৃষি ক্যাডারের ফাতেহা নূরসহ বিভিন্ন ক্যাডারের সদস্যরা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সম্প্রতি প্রশাসন ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন ঢাকাতে সমাবেশের আয়োজন করে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনকে আলটিমেটাম দেয় এবং সে সময়ে ও পরবর্তী তারা অন্য ক্যাডারের সদস্যদের উদ্দেশে বিভিন্ন ধরনের কটূক্তি করেন। এর আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ঘেরাও করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ২৫টি ক্যাডারের সদস্যদের সাথে প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য শুরু হয়।
গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়াধীন দফতর/সংস্থায় কর্মরত আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের অন্তর্ভুক্ত বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় মত প্রকাশের জন্য ঢালাওভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হচ্ছে। কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ ব্যতিরেকে সামান্য অজুহাতে এ ধরনের প্রজ্ঞাপন জারি অত্যন্ত অনভিপ্রেত ও অনাকাক্সিক্ষত। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা মৌলিক অধিকার ও চাকরিবিধির পরিপন্থী। যাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তা। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে এভাবে বরখাস্ত করায় পরিষদ সদস্যরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
পরিষদ মনে করে, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রত্যয় নিয়ে ছাত্রজনতার স্বতঃস্ফূর্ত গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ সরকারের আমলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও অধিকার ক্ষুণœ করায় পরিষদ তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। জনবান্ধব সিভিল সার্ভিস গঠনসহ বর্তমান সরকার যেসব সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তা যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে সরকারকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে পরিষদ। এভাবে সাময়িক বরখাস্ত অব্যাহত থাকলে সিভিল সার্ভিসে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, যা সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে পারে। এমতাবস্থায়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় হতে ইতোমধ্যে জারিকৃত সাময়িক বরখাস্তের আদেশগুলো প্রত্যাহারপূর্বক অভিযোগ হতে অব্যাহতিদানের অনুরোধ জানাচ্ছি।
প্রশাসন ক্যাডারের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ থাকলেও, সে বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। প্রশাসন ক্যাডার কর্তৃক এরূপ অন্যায় আগ্রাসনের বিষয়ে ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ ও সংশ্লিষ্ট ক্যাডার অ্যাসোসিশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মহোদয়সহ বিভিন্ন পর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে এবং এই অন্যায় আদেশ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে। মাননীয় উপদেষ্টারা আমাদেরকে আশ্বস্ত করলেও এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করে এখনো সাময়িক বরখাস্ত চলমান রয়েছে।
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এসব অন্যায় বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করা না হলে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদভুক্ত সব ক্যাডার কর্মকর্তারা কর্মবিরতিসহ ধারাবাহিক কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবে। এ সময় আরো বলা হয়, সেবামূলক সিভিল সার্ভিস তৈরিতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনসহ কয়েকটি কমিশনের নিকট আমাদের সুস্পষ্ট দাবিগুলো, ক্যাডার যার মন্ত্রণালয় তার, ডিএস পুলে কোটা বাতিল এবং সব ক্যাডারের সমতা উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের উপস্থাপিত রিপোর্টে ২৫ ক্যাডারের দাবির প্রতিফলন ঘটেনি।
আমরা আগেই উল্লেখ করেছিলাম গঠিত পক্ষপাতমূলক জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন দ্বারা বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব উপস্থাপন করা সম্ভব নয়। আমাদের আশঙ্কাই সঠিক হয়েছে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের অস্পষ্ট রিপোর্ট ও জনবিরোধী প্রস্তাবগুলো প্রত্যাখ্যান করছি। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের রিপোর্টে সব ক্যাডারের নামের সাথে ক্যাডার শব্দটির পরিবর্তে সার্ভিস শব্দটি ব্যবহার করা হলেও অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস শব্দটি ব্যবহার করে প্রশাসন ক্যাডারকে আরো বেশি ক্ষমতাধর করার চেষ্টা করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট পর্যালোচনায় প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে, কিছু প্রস্তাব সংবিধান ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সাথে সাংঘর্ষিক। তা ছাড়া রিপোর্টের কিছু প্রস্তাব একে অপরের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব পেলে, খুঁটিনাটি যাচাই করে লিখিত প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে।