১০ কোটি টাকার বাড়িসহ জমি কিনলেন এলজিইডির হিসাবরক্ষক খোরশেদ
বিপুল পরিমাণ টাকা পাচারের অভিযোগ- আমিনুল ইসলাম
- ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
এলিজিইডির হিসাবরক্ষক খোরশেদ আলম বেতন পান সর্বসাকুল্যে ৩২ হাজার টাকা। অথচ সংসারখরচ চালানোর পরও রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ের জনতা হাউজিংয়ের মতো জায়গায় কিনেছেন সাড়ে চারতলা বাড়িসহ আড়াই কাঠা জমি। ওই এলাকার জমি ও বাড়ির মূল্য আসে প্রায় ১০ কোটি টাকা। এ ছাড়া একই এলাকায় কিনেছেন ফ্ল্যাটও। রয়েছে বিলাসবহুল প্রাইভেট কার। পড়াশোনার জন্য ছেলেকে পাঠিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া। অভিযোগ রয়েছে, ছেলের খরচের কথা বলে দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার করছেন তিনি। ৩২ হাজার টাকা বেতনের কর্মচারী এত টাকার মালিক হলেন কিভাবে, এমন প্রশ্ন অনেকের মনে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কম্পিউটার অপারেটর থেকে অবৈধ উপায়ে হিসাবরক্ষকের দায়িত্ব পান খোরশেদ। তাও আবার প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার সুপার ব্রিজ প্রকল্পের দায়িত্ব পান তিনি। এই প্রকল্পের অর্থ ছাড় দিতে হলে খোরশেদকে দিতে হয় মোটা অঙ্কের ঘুষ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৪-৫ পারসেন্ট হারেও ঘুষ দিতে হয় তাকে। যার কারণে খুব অল্প সময়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যান তিনি। টাকার গরমে বাড়িসহ জমি কিনতেও এদিক- সেদিক ভাবেননি তিনি।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, খুবই পরিপাটি জনতা হাউজিংয়ের এলাকা। পরিকল্পিত রাস্তার দুই পাশে সাজানো বিভিন্ন সাইজের বহুতল ভবন। কোলাহলমুক্ত আবাসিক এলাকার ৬/৬ নম্বর হালকা গোলাপির মধ্যে খয়েরি রঙের বর্ডার দেয়া বাড়িটিই খোরশেদ আলমের। একই রোডের ১১ নম্বর ভবনের দ্বিতীয় তলা কিনেছেন একটি ফ্ল্যাট।
৬/৬ এর পাশের একটি ভবনের বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভবনটির আগের মালিক ছিলেন গোলাম রাব্বানী নামে একজন। তিনি বিদেশ চলে যাবেন বলে নগদ অর্থের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। টাকার জন্য তিনি তার বাড়িসহ জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। তবে অল্প সময়ের মধ্যে টাকা লাগবে তার। প্রতিবেশী কয়েকজন খোঁজখবর নিলেও এত তাড়াতাড়ি এতগুলো টাকা ম্যানেজ করতে পারবেন না বলে পিছু হটেন। ঠিক ওই সময বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে হাজির হন খোরশেদ আলম। হুট করেই কিনে ফেলেন সাড়ে চার তলা বাড়িসহ জমি। তিনি বলেন, প্রথমে প্রতিবেশীরা ধারণা করেছিলেন খোরশেদ সাহেব বড় ধরনের কোনো ব্যবসায়ী। পরে জানতে পারেন তিনি এলজিইডির একজন হিসাবরক্ষক। এক প্রশ্নের জবাবে ওই প্রতিবেশী বলেন, গোলাম রাব্বানী বাড়িসহ ওই জমির দাম চেয়েছিলেন দশ কোটি টাকা। তবে খোরশেদ আলমের কাছে কত টাকায় বিক্রি করেছেন সেটা বলতে পারেনি । বাড়ির কাছে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির নিচতলায় গ্যারেজ, সিকিউরিটি গার্ডের থাকার জায়গা ও সিঁড়ি। দ্বিতীয় ও চতুর্থ তলা ভাড়া দেয়া। তৃতীয় তলায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন খোরশেদ। চতুর্থ তলার ছাদের ওপরে পেছনের দিকে রয়েছে চিলেকোঠা।
যার কারণে প্রতিবেশীরা এটাকে সাড়ে চারতলা ভবন বলে থাকেন। তবে বাড়িটি সম্পূর্ণ নিজের নামে দলিল করেননি চতুর খোরশেদ। নিজের সাথে স্ত্রীর নামও জুড়ে দিয়েছেন। যদিও তার স্ত্রী একজন গৃহিণী।
জানা গেছে, খোরশেদ আলমের ছেলে অস্ট্রেলিয়ায় লেখাপড়া করেন। অভিযোগ রয়েছে, ছেলের খরচ পাঠানোর নাম করে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার করছেন তিনি। বিশেষ করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সরকারি চাকরিজীবীদের সম্পদের হিসাব চাওয়ার পর থেকে দেশে থাকা বেশির ভাগ টাকা পাচার করে ছেলের কাছে পাঠাচ্ছেন তিনি। সেখানেই বাড়ি কেনার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে কল রিসিভ করেন খোরশেদ আলম।
এরপর সব অভিযোগ শোনার পর, পরে কথা বলবেন বলে জানান তিনি। কিন্তু পরে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্ট করা হলেও তিনি আর কল রিসিভ করেননি।