০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকদের ওপর হামলা

-

পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের ওপর বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে পাবনার ঈশ্বরদী এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীরা কর্তব্যরত সাংবাদিকদের ওপর এই হামলা চালান। হামলায় গুরুতর আহত এটিএন নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার জাবেদ আখতারকে রাজধানীর কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
১৯৯৪ সালে পাবনার ঈশ্বরদীতে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি ও বোমা হামলার অভিযোগে করা মামলায় মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের খালাসের রায় ঘোষণার পর বর্ধিত ভবনের সামনে গণমাধ্যমকর্মীরা আইনজীবীদের বক্তব্য নেয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবসহ পাবনা জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য অনুযায়ী, একপর্যায়ে এক যুবক সাংবাদিকদের ঠেলে সেখানে রাখা ডায়াসের সামনে চলে আসেন। এ নিয়ে তর্ক হয়। সেখানে উপস্থিত পাবনা থেকে আসা বিএনপির নেতাকর্মীরা সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন। তারা গণমাধ্যমকর্মীদের কিল-ঘুষি ও লাথি মারেন। এতে কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন। এর মধ্যে সেখানে উপস্থিত হয়ে বিএনপির আইন সম্পাদক কায়সার কামাল ও বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস পরিস্থিতি শান্ত করেন।
এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকরা ব্রিফিং বর্জন করে হাইকোর্ট বিভাগের বর্ধিত ভবনের সামনে ব্রিফিংস্থলে বসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও মারধরের ঘটনার প্রতিবাদ জানান।
জাবেদ আখতার বেসরকারি টিভি চ্যানেল এটিএন নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ও ল রিপোর্টার্স ফোরামের প্রশিক্ষণ ও কল্যাণ সম্পাদক।

এ দিকে হামলায় এটিএন নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার জাবেদ আখতারের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে আইন, বিচার ও মানবাধিকারবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ল রিপোর্টার্স ফোরাম। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসান জাবেদ ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মিশন এক বিবৃতিতে বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলা কোনোভাবে কাম্য নয়। জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা। এলআরএফের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম নূর মোহাম্মদ স্বাক্ষরিত এ বিবৃতি পাঠানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, বুধবার পাবনার ইশ্বরদীতে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার রায় হয় হাইকোর্টে। ওই রায়ের পর আইনজীবীদের বক্তব্য নেয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে অপেক্ষা করছিলেন গণমাধ্যমকর্মীরা। সে সময় ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর জন্য ধাক্কাধাক্কি করতে থাকেন পাবনার ইশ্বরদী এলাকার বিএনপির কয়েক শ’ নেতাকর্মী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব।
বিবৃতিতে বলা হয়, ধাক্কাধাক্কির সময় এটিএন নিউজের সিনিয় রিপোর্টার জাবেদ আখতারের সাথে কথাকাটাকাটি হয় বিএনপি নেতাকর্মীদের। একপর্যায়ে পাবনার ইশ্বরদী এলাকার বিএনপির ২০-২৫ নেতাকর্মী জাবেদ আখতারকে লাথি, কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। এ সময় তাকে রক্ষা করতে গিয়ে তাদের মারধরের শিকার হন সিনিয়র সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম পান্নু, সিনিয়র সাংবাদিক হাসান জাবেদসহ বেশ কয়েকজন। ভাঙচুর করা হয় টেলিভিশনের মাইক্রোফোনও। পাশাপাশি ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সাংবাদিক জাবেদ আখতারকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অ্যাম্বুলেন্সে করে কাকরাইল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে পাঠান।

এ দিকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকরা ব্রিফিং বর্জন করে অ্যানেক্স ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। আর হামলার ঘটনায় সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
হামলাকারীদের বিচার দাবি ডিআরইউর : সুপ্রিম কোর্টে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি-ডিআরইউ। পাশাপাশি এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানানো হয়েছে। গতকাল ডিআরইউ সভাপতি আবু সালেহ আকন ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল সাংবাদিকদের ওপর হামালার এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
ওই ঘটনাকে ন্যক্কারজনক উল্লেখ করে ডিআরইউ নেতৃবৃন্দ বলেন, সুপ্রিম কোর্টে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলা কোনোভাবে কাম্য নয়।


আরো সংবাদ



premium cement