বসবাসের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না করেই জুনে শেষ হচ্ছে পূর্বাচল প্রকল্প
ইমারতের নকশা হয়েছে ৩৫১ প্লটের- হামিম উল কবির
- ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বসবাসের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই তবু আগামী জুনে সমাপ্ত হচ্ছে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প। নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর অংশ মিলে ছয় হাজার একরের এ প্রকল্পের ভেতরে বাসবাসের জন্য যেসব অবকাঠামো করে দেয়া হয়েছে সেগুলোর সবই শতভাগ সমাপ্ত হয়নি। যেমন ভেতরের রাস্তা ১০০ ফুট প্রশস্ত করার কথা থাকলেও এখন ৪০ ফুট পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেয়া হয়েছে কাজ চালানোর জন্য। পরে নতুন করে ডিপিপি করে বাকি কাজগুলো করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এগুলো ছাড়াও আরো কিছু কারণে প্লট গ্রহীতারা পূর্বাঞ্চলে এখনই ভবন নির্মাণে খুব বেশি আগ্রহী নন। প্রকল্পের ডিজাইন অনুযায়ী, পূর্বাচলে মোট ২৬ হাজার ২১৩টি বিভিন্ন রকমের প্লট রয়েছে, এর মধ্যে ২৪ হাজার ৫৬০টি প্লটের দখল হস্তান্তর করা হয়েছে। একই সাথে ১৯ হাজার ৪৯২টি প্লটের লিজ দলিল সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় এ প্রকল্পে মাত্র ৩৫১টি ইমারতের নকশা অনুমোদিত হয়েছে রাজউক থেকে। তবে পূর্বাচলে এখন পর্যন্ত ২০০ ইমারতও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।
কেন প্লট গ্রহীতারা তাদের প্লটে ইমারত নির্মাণ করে বসবাস করছেন না ? এ প্রশ্নের জবাব খুঁতে গিয়ে জানা গেছে, বসবাস করার মতো পূর্বাচল এখন পর্যন্ত উপযুক্ত হয়ে ওঠেনি। কারণ বসবাস করার জন্য যে কয়টা শর্ত থাকে এর মধ্যে শুধু দুইটা অথবা তিনটা পূরণ হয়েছে। প্রথমটি হলো পূর্বাচলের প্লটগুলো লটারি বিজয়ীদের মধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে, ইমারত নির্মাণ করার জন্য মাটি ফেলে উপযুক্ত করে দেয়া হয়েছে এবং নিজেদের ভবনে যাওয়ার জন্য রাস্তা তৈরি করে দেয়া হয়েছে।
একই সাথে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ব্যবস্থাও করে দেয়া হয়েছে কিন্তু বসবাস করার জন্য মানুষের যে নিরাপত্তা দরকার পূর্বাচল প্রকল্পে তা নেই। এখন পর্যন্ত পূর্বাচলে কোনো থানা গড়ে ওঠেনি যদিও রাজউক থানার জন্য জায়গা দিয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে থানার জন্য নির্ধারিত জায়গাটি দখলে নিয়েছে, থানা করার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলেনি, থানা করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এখন পর্যন্ত অনুমোদন নেয়া হয়নি। নিরাপত্তা না থাকায় প্লট গ্রহীতারা এগিয়ে আসছে না। ইতোমধ্যে যারা পূর্বাচলে ইমরাত নির্মাণ করেছেন তারা তাদের ভবনকে আবাসিক কাজে ব্যবহারের চেয়ে বাণিজ্যিক কাজে বেশি ব্যবহার করছেন।
রাজউকের উদ্যোগে ও অর্থায়নে পূর্বাচলে ইতোমধ্যে ১ নম্বর সেক্টরে ইউসুফগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ৪ নম্বর সেক্টরে জনতা স্কুল ভবন করে দেয়া হয়েছে এবং এগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এছাড়া প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয়, পলখান উচ্চ বিদ্যালয় ও পূর্বাচল আদর্শ কলেজ ভবনও গত বছর উদ্বোধন করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও এসব প্রতিষ্ঠানের লেখাপড়ার মান এখানে যারা বসবাস করতে আসবেন তাদের আকাক্সক্ষার সাথে মিল নেই। কোনো ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল নেই, কোনো নতুন বিশ্ববিদ্যালয় নেই অথবা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসও উদ্বোধন হয়নি পূর্বাচলে। সে কারণে পূর্বাচল এখনো বসবাসের উপযোগী হয়নি, ফলে প্লট গ্রহীতারা এখানে ব্যাপক সংখ্যায় ইমারত নির্মাণ করতে আগ্রহী নয়।
বসবাসের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই
এত নেতিবাচক দিকের পর পূর্বাচল প্রকল্পে আশান্বিত হওয়ার মতো কিছু উন্নয়নও ঘটেছে বলে জানালেন এই প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা সর্বশেষ অগ্রগতি তুলে ধরে বলেন, পূর্বাচল প্রকল্পের ভূমি উন্নয়নের ৯৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট ৪ শতাংশ বা প্রায় ২৫০ একর ভূমির উন্নয়নের কাজ চলমান আছে। প্রকল্পের অভ্যন্তরে সারফেস ড্রেনসহ প্রায় ৩৬৫ কিলোমিটার রাস্তার ৩৪৫ কিলোমিটার নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট ২০ কিলোমিটারের মধ্যে ১৬ কিলোমিটার রাস্তার কাজ চলমান আছে এবং ৪ কিলোমিটার রাস্তার প্রাক্কলন ও দরপত্র অনুমোদন প্রক্রিয়া চলছে। প্রকল্পের ভেতরে ৫২টি ব্রিজের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। তবে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে পূর্বাচলের ১৯ নম্বর সেক্টরে ১৪২ তলা পর্যন্ত একটি আইকোনিক ভবন হওয়ার কথা থাকলেও এর কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। বাংলাদেশের শিকদার গ্রুপের কনসোর্টিয়াম অব পাওয়ার প্যাক হোল্ডিংস এবং জাপানের কাজিমা করপোরেশনকে কাজটি করতে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রচুর ঢাক-ঢোল পেটানো হলেও এখনো কাজের কিছু হয়নি। পূর্বাচল প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, এই প্রকল্পের প্রাতিষ্ঠানিক ও বাণিজ্যক প্লটগুলো দ্রুত বরাদ্দকরণ ও তাতে অবকাঠামো নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবছে রাজউক।
পূর্বাচলের মতো বিশাল আকারের একটি নিউ টাউন প্রকল্প চালু করতে হলে প্রথমে জনপ্রিয় কিছু প্রকল্প হাতে নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যার্নার্সের সভাপতি পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান।
তিনি বলেন, প্রথমে এখানে কিছু বাণিজ্যিক প্রকল্প করতে হবে যেখানে বাইরে থেকে মানুষ কাজ করতে আসবে এবং এই প্রকল্পে থাকার জন্য ভাড়া সাশ্রয়ী করে দিতে হবে। এ ছাড়া ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করে দিতে হবে। এখান থেকে কাছাকাছি বড় শহর মানে রাজধানীতে আসা এবং যাওয়ার জন্য আধা ঘণ্টা পরপর বাস ও অন্যান্য গণপরিবহনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
এ ছাড়া পূর্বাচল প্রকল্পের অভ্যন্তরে যাতায়াতের জন্য থাকতে হবে কমিউটার সার্ভিস। । তিনি বলেন, পূর্বাচলে এসব কিছুই নেই, সে কারণে এই প্রকল্পে মানুষ এখনই বাস করতে চায় না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা