বিলম্বে বিমানের ফ্লাইট গুনতে হচ্ছে জরিমানা

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অভ্যন্তরীণ রুট ও ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এবং সিলেট হয়ে আন্তর্জাতিক রুটের বিভিন্ন গন্তব্য ছেড়ে যাওয়া ফ্লাইট প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ের অনেক বিলম্বে ছেড়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে এক দিকে বিমানবন্দরে গিয়ে যাত্রীদের যেমন চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে তেমনি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিমানকে আর্থিকভাবে ডলারে জরিমানাও গুনতে হচ্ছে।
এভিয়েশন এক্সপার্টরা বলছেন, ঢাকা থেকে আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইটগুলো বিলম্বে ছেড়ে যাওয়ার কারণে ওই ফ্লাইটগুলো গন্তব্যে পৌঁছছেও বিলম্বে। এতে বিমানের জন্য নির্ধারিত থাকা স্লটগুলো প্রায় বাতিল হয়ে যাচ্ছে। তখন ওই দেশের এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ তাদেরকে ডলারে জরিমানা করে বিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছে। প্রতিনিয়ত বিমান কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের জরিনামা করা হলেও অদ্যাবধি কর্তৃপক্ষ নীরব রয়েছেন।
গতকালও ঢাকা থেকে অভ্যন্তরীণ রুটের ৯টি ফ্লাইট ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ৫টি ফ্লাইট ছেড়ে যায়। তার মধ্যে শুধু রাজশাহীগামী ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ে ছেড়েছে। বাকি ৪টি অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট বিলম্বে ছেড়েছে। অপর দিকে জেদ্দা, মদিনা ও দুবাইগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৩টি ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ের আধা ঘণ্টা পর ছেড়ে যায়। শুধু গতকাল নয়, এর আগের শিডিউল অনুযায়ী অধিকাংশ ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যেতে পারেনি বলে সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গতকাল দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সেরই মোট ৯টি ফ্লাইট ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঢাকা থেকে অভ্যন্তরীণ রুটের মোট ৫টি ফ্লাইট ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ফ্লাইটটি ৩০ মিনিট বিলম্বে, সিলেটের ফ্লাইটটি ২০ মিনিট বিলম্বে, বরিশালের ফ্লাইটটি ৪০ মিনিট বিলম্বে, কক্সবাজারের ফ্লাইটটি ১৫ মিনিট বিলম্বে ছেড়ে যায়। তবে রাজশাহীগামী ফ্লাইটটি বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটের নির্ধারিত সময়েই ছেড়ে গেছে। বাকি যে ৪টি অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট ছেড়ে যাওয়ার শিডিউল রয়েছে তার মধ্যে সৈয়দপুরের ফ্লাইটটি সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে, কক্সবাজারটা ৬টা ৪৫ মিনিটে, চট্টগ্রামে রাত ৭টায় এবং সিলেটের উদ্দেশে রাত সোয়া ৮টায় ছাড়ার কথা শিডিউলে ছিল। অপর দিকে গতকাল ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেট হয়ে যাত্রী নিয়ে যেসব ফ্লাইট ছেড়ে গেছে তার মধ্যে সৌদি আরবের জেদ্দায় ৪০ মিনিট বিলম্বে এবং মদিনা রুটে ৩৫ মিনিট বিলম্বে ছেড়ে যায়। দুবাইগামী ফ্লাইটটি রাত পৌনে ৭টায় ঢাকা থেকে ছাড়ার শিডিউল ছিল। সেটি নির্ধারিত সময়ে ছাড়তে পেরেছে কি-না তা জানা সম্ভব হয়নি।
গতকাল বৃহস্পতিবার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টার্মিনালের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে নিজেদের নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, আমাদের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে বিমানের কাউন্টার রয়েছে মাত্র ৪টি। কিন্তু সেখানে যাত্রী হচ্ছে হাজার হাজার। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইটের যাত্রীরা বড় ফ্লাইটে চট্টগ্রাম ও সিলেট হয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। প্রতিদিন বেলা ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিমানের যতগুলো ফ্লাইট ঢাকা থেকে ছেড়ে যাচ্ছে তার অধিকাংশ ফ্লাইট ঠিক সময়ে ছাড়ছে না। সঠিক সময়ে না ছাড়ার কারণে সেগুলো গিয়ে বিলম্বে পৌঁছছে। এতে আমাদের আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইটগুলোর সøট (নির্দিষ্ট সময়) বাতিল হচ্ছে। তখন এর জন্য বিমান কর্তৃপক্ষকে লাখ লাখ ডলার ওই সব দেশের এয়ারপোর্ট অথরিটি জরিমানা করছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এই সমস্যা চলতে থাকলেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে একেবারেই নির্বিকার। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে আমাদের বিমানের চেকিং কাউন্টার আছে মাত্র ৪টি। যাত্রীর তুলনায় স্পেস অনেক কম। এ ছাড়া দেশের শীর্ষ বিমান পরিবহন সংস্থা ইউএস বাংলা, নভোএয়ার ও এয়ার এ্যাস্ট্রার অসংখ্য ফ্লাইট একই দিন অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল থেকে প্রতি দিন ছেড়ে যাচ্ছে। যাত্রীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় প্রতিটি ফ্লাইট ছাড়তে দেরি হচ্ছে। ফ্লাইট অপারেশনের সাথে জড়িত ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বলছেন, বিমানের কাউন্টার না থাকলে আমরা কী করবো? মোট কথা স্পেস ও চেকিং কাউন্টার স্বল্পতার কারণে ফ্লাইট ছাড়ার ব্যবস্থা করতে আমাদের বিলম্ব হয়। কর্তৃপক্ষ যাতে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। নতুবা বিমানের যাত্রীদের ভোগান্তি সারা বছর চলতেই থাকবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৭টা ২৫ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা: সাফিকুর রহমানের সাথে এসব সমস্যার বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোন রিসিভ করেননি।