কেরানীগঞ্জে সবজির বাম্পার ফলনেও হাসি নেই কৃষকের
২ হাজার একর সবজির জমি দখলের অভিযোগ- ঢাকা জেলা প্রতিনিধি
- ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
ঢাকার কেরানীগঞ্জে শীতকালীন সবজির বাম্পার ফলন। মাচায় মাচায় ঝুলছে লাউ, শিম, পটোল, শসা, করলা, টমেটো। কোথাও আবার সারিসারি শোভা পাচ্ছে ওলকপি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেগুন লালশাকসহ নানা রকমের সবজি। এমন সবুজ ক্ষেতের দৃশ্য এখন হরহামেশাই চোখে পড়ছে কেরানীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে। তবে দাম কমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। হাসি নেই কৃষকের মুখে।
বেশ কয়েক বছর ধরে উপজেলার হজরতপুর, রোহিতপুর, কলাতিয়া, তারানগর, বাস্তা ও শাক্তা ইউনিয়নে বাণিজ্যিকভাবে সবজির চাষ হয়ে আসছে। এই সবজি কেরানীগঞ্জের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারেও বিক্রি হচ্ছে। এখানকার সবজির মান ভালো হওয়ায় ব্যবসায়ীরা জমি থেকে সবজি কিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে নিয়ে বিক্রি করছেন। রফতানি করছেন দেশের বাইরেও।
হজরতপুরের চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, বাম্পার ফলন হওয়ায় সবজি এখন আমাদের গলার কাঁটা। ক’দিন আগেও যে ফুলকপি বাঁধাকপি বিক্রি হতো ৩০ থেকে ৪০ টাকা তা এখন সাইজ অনুযায়ী ৮ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। মুলা বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ৫ টাকা কেজি দামে। একইভাবে শিমের কেজি ১০ থেকে ৩০ টাকা, শাকের আঁটি দুই থেকে ৫ টাকা, লাউ ২৫ থেকে ৩০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে।
কলাতিয়া ইউনিয়নের কৃষক হাসান বলেন, খুচরা বাজারে মুলার কেজি ৩০ টাকা, ফুলকপির পিস ৩০ থেকে ৪০ টাকা, শিমের কেজি ৪০ টাকা, শাকের আঁটি সর্বনিম্ন ১০ থেকে ২০ টাকা, অথচ আমরা এসব বিক্রি করতে পারছি না। এক মণ মুলা উৎপাদনে খরচ হয় ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা অথচ বিক্রি করতে হয় ১৫০ টাকায়। আবার অনেক সময় বিক্রি না করেই ফিরে আসতে হয়। তখন এই মুলা গরুকে খাওয়ানো ছাড়া উপায় থাকে না।
শিম চাষি ফজিলা বেগম বলেন, প্রতি বছর শিম বিক্রি করে গরু কিনি, সংসার চালাই, টাকা ব্যাংকে রাখি, কিন্তু এবার খরচ উঠানো দায় হবে।
রুহিতপুর ইউনিয়নের সোনাকান্দার কৃষক সুরুজ মিয়া টমেটোর চাষ করেছেন। ফলনও অনেক ভালো। ক্ষেতে দেখা যায়, টমেটো গাছে সারিবদ্ধ টমেটো ধরে আছে। কিছু টমেটো লালচে, পাকতে শুরু করছে। তার ক্ষেত থেকে পাইকাররা ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজিতে টমেটো কিনে নিয়ে যায়। সুরুজ মিয়া একজন জাত কৃষক। দাম নিয়ে তার আক্ষেপ নেই। জমিজমাও যথেষ্ট আছে। তার আক্ষেপ কৃষি ও সবজির জমি দখল নিয়ে। তিনি বলেন, তাদের এলাকায় জমিতে ১২ মাস সবজি উৎপাদন করা যায়। তিনি ছোট থেকে ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত সবজি উৎপাদন করে আসছেন। কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগের শাসনামলে জবরদখল করে ২ হাজার একর সবজির জমি দখলে নিয়েছে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহিন আহমেদ। তিনি জানান, সবজির জমি দখল করে সোনাকান্দা এলাকায় কেরানীগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক বানিয়েছেন।
এই জমি দখলে নিতে তার একটি বাহিনী রয়েছে। বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে রুহিতপুর ইউনিয়নের জমির দালাল মজিবর, সালাউদ্দিন, পিয়ার আলী, বাদশা, জহির, তালিম, বেলায়েত ও ফারুক লাঠিয়াল অন্যতম। এই বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্রের মুখে সবজি কৃষকদের জমি দখলে নিয়েছে।
যাদের জমি দখল করে নেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে একই ইউনিয়নের লিয়াকত আলীর ১৩ পাখি, আশরাফ আলীর ৩ পাখি, সুরুজ মিয়ার ১৪ পাখি, নুর আলীর ৩ পাখি, আহসান উল্লাহর ৭ পাখি সবজির জমি দখল নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ৩৩শ’ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে। এতে শীতকালীন সবজির উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৮ হাজার মেট্রিক টন। প্রতি হেক্টর জমিতে ২৩.৬৩ টন সবজি উৎপাদন হওয়ার আশা করছে কৃষি অফিস।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার মহুয়া শারমিন মুনমুন বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার শীতকালীন সবজি চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা আশা করছি কৃষকরা এ মৌসুমে শীতকালীন সবজির চাষ করে ভালো লাভবান হবেন। কিন্তু বর্তমান সময় ভরপুর মৌসুম হওয়ায় বাজারে সবজিতে পরিপূর্ণ আর মানুষেরও চাহিদা কমেছে, তাই সবজির দাম তুলনামূলক কম। গত বছর ভালো দাম পেয়েছে কৃষক তাই উচ্চমূল্যে বীজ কিনে অতিরিক্ত ফসল ফলিয়েছে। এ বছর সবজির বাম্পার ফলন হওয়ায় সবজির দাম কমে গেছে। তিনি বলেন, কৃষকরা কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ করে আবাদ করলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসবে। এ ব্যাপারে কৃষকদের বিভিন্ন রকমের সবজি আবাদেরও পরামর্শ দিচ্ছেন বলে তিনি জানান।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা