সিন্ডিকেটের কব্জায় ৬০ হাজার বিমান টিকিট
নাম-পাসপোর্ট ছাড়া টিকিট বিক্রির অভিযোগ আটাবের- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:২৫
মধ্যপ্রাচ্যগামী কয়েকটি এয়ারলাইন্স তাদের পছন্দের কিছু সংখ্যক এজেন্সির নামে কোনো পাসপোর্ট, ভিসা, ভ্রমণ নথিপত্র এবং প্রবাসগামী শ্রমিকদের কোনো বৈদেশিক ওয়ার্ক পারমিট, এমনকি যাত্রী তালিকা ছাড়াই শুধুমাত্র ইমেইলের মাধ্যমে বিভিন্ন রুটের গ্রুপ সিট ২-৩ মাস অগ্রিম তারিখের পিএনআর তৈরি করে সিট ব্লক করে রাখছে বলে অভিযোগ করেছেন আটাব নেতারা। তারা বলেন, এভাবে টিকিট মজুদদারি করায় সিন্ডিকেট তৈরি হচ্ছে এবং আসনসঙ্কট দেখা দিচ্ছে। এতে টিকিটের মূল্য ২০ থেকে ৫০ শতাংশ কখনো দ্বিগুণ তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিদেশগামী শ্রমিক, শিক্ষার্থী ও প্রবাসীরা চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নেতারা এ অভিযোগ করেন।
লিখিত বক্তৃতায় তারা বলেন, সাম্প্রতিক বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান পরিবহন খাতে চলমান অন্যতম বড় সমস্যা এয়ার টিকিটের অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধি। এই মূল্য বৃদ্ধির নেপথ্যে অন্যতম প্রধান কারণ নামবিহীন গ্রুপ টিকিট বুকিং।
সংবাদ সম্মেলনে আটাব সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান। এ সময় তিনি কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলোÑ ১. শিডিউল ফ্লাইট বৃদ্ধি করা, অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার ব্যবস্থা করা, দ্রুত অনুমোদন দেয়া ও ওপেন স্কাই ঘোষণা করা যেন সব দেশের এয়ারলাইন্স যাত্রী পরিবহন করতে আগ্রহী হয়, ২. নাম, পাসপোর্ট নাম্বার, ভিসা, ম্যানপাওয়ার ক্লিয়ারেন্স ছাড়া কোনো বুকিং করা যাবে না, সিট ব্লকের মাধ্যমে ফ্লাইটের ইনভেন্টরি ব্লক হয়ে যায়, যে কারণে মূল্য বাড়তে থাকে। এছাড়া কোনো ট্র্যাভেল এজেন্সির কাছে প্রকৃত চাহিদা না থাকলেও এয়ারলাইন্সের কাছে দুই লাইনের একটি ইমেইল করে কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করে। কৃত্রিম চাহিদার পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে এয়ারলাইন্সের এই পলিসির কারণে। ট্র্যাভেল এজেন্সিরা তার কাছে চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও পণ্য মজুদ করার মতো এয়ার টিকিট মজুদ করছে। এটা বন্ধ করতে হবে, ৩. বর্তমানে ৬০ হাজারেরও বেশি সিট এয়ারলাইন্সগুলো ব্লক করে রেখেছে। এই সিটগুলো এখনই ওপেন করে দিলে উদ্ভূত সঙ্কট দূর হয়ে যাবে, ৪. বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধান না করতে পারলে সমস্যা আরো প্রকট হবে এবং যাত্রীসাধারণ উচ্চমূল্যে টিকিট কিনতে বাধ্য হবে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয় হতে অতি দ্রুত সমাধানের নির্দেশনা প্রদান করতে হবে, ৫. এয়ারলাইন্সের ডিস্ট্রিবিউশন পলিসি ওপেন রাখতে হবে। জিডিএস/এনডিসি এ সিট সেল করার নির্দেশনা দিতে হবে এবং সব এজেন্সিকে বিক্রি করার সুযোগ দিতে হবে, ৬. বিভিন্ন রুটে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ভাড়া বাস্তবসম্মতভাবে নির্ধারণ করা, ৭. এয়ারলাইন্স কর্তৃক হিডেন ফেয়ার এ গ্রুপ টিকিট / প্রাইভেট ফেয়ার এ টিকিট বিক্রয় বন্ধ করার নির্দেশনা, ৮. লেবার ফেয়ার নির্ধারণ করা, ৯. ১০/ ২০ হাজার সিট/ টিকিট দিয়ে দেয়া হয় কোনো কোনো এজেন্সির কাছে।
এর মাধ্যমেই সিন্ডিকেটের উৎপত্তি। এজেন্সি-প্রতি সর্বোচ্চ সেল সিলিং নির্ধারণ করতে হবে, ১০. শ্রমিক ও ওমরাহ যাত্রীদের এয়ারলাইন্স ফরম্যাটে টিকিট প্রদান করতে হবে যেখানে ভাড়া, এজেন্সি বিবরণ উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। প্রকৃত মূল্য যাত্রীর দৃষ্টিতে আসবে এর ফলে নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত দাম নিতে পারবে না। মূল্য উল্লেখ ছাড়া টিকিট দেয়া যাবে না, ১০. জিএসএ কর্তৃক ভাড়া বৃদ্ধি ও কাউন্টার সেল বন্ধ করা, ১১. ১৯৮৪ সালের বেসামরিক বিমান চলাচল আইন ও বিধিমালা মেনে নিয়ন্ত্রণ করা, ১২. বাজেট এয়ারলাইন্সগুলো অল্প টাকায় যাত্রী পরিবহন করার ঘোষণা দিয়ে থাকলেও বাংলাদেশ থেকে তারা লিগ্যাসি ক্যারিয়ারের মতোই বেশি দামে টিকিট বিক্রি করে। বাজেট ক্যারিয়ার সংক্রান্ত বিধিমালা আছে কিনা না? না থাকলে সেটাও তৈরি করতে হবে, ১৩. এয়ারলাইন্স পরিচালনার যেই গাইডলাইন আছে সেখানে তাদের সেলস পদ্ধতি এবং মার্কেটিং পলিসি এদেশের জনগণের জন্য কোনো রকমের নেগেটিভ ইম্প্যাক্ট না করে সেজন্য বিধিমালা প্রস্তুত করা, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক), প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, আটাব/জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)/ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়/ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)/ বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে-তারা চাহিদা, ক্যাপাসিটি ও সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করবে, সমাধান করবেন। অসাধু ট্র্যাভেল এজেন্ট ও এয়ারলাইন্স স্টাফদের বিরুদ্বে অভিযোগ থাকলে তারা ব্যবস্থা নিবেন। প্রয়োজনে মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন আটাব মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ, সাবেক মহাসচিব জিন্নুর আহমেদ চৌধুরী দিপু, যুগ্ম মহাসচিব আতিকুর রহমান, উপমহাসচিব তোয়াহা চৌধুরী, অর্থসচিব মো: সফিক উল্যাহ্ নান্টু প্রমুখ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা