ছাত্রসংগঠনগুলোর কাছে দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা ছাত্রশিবিরের
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:২৪
ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যকার অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক আরো দৃঢ় করতে সব পক্ষের কাছে আন্তরিক, বন্ধুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, একটি বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা রাখতে হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি ছাত্রসংগঠনের সাথে ঐক্য করতে প্রস্তুত রয়েছে ছাত্রশিবির।
গতকাল সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের অবাধ গণতন্ত্র ও মুক্তবুদ্ধির চর্চার বিকাশ ঘটানোর জন্য ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করার দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম, দফতর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ, প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্যে শিবির সভাপতি বলেন, আওয়ামী স্বৈরাচারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুণগত যে পরিবর্তন হওয়ার কথা ছিল, তা অনেকাংশে অনুপস্থিত। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে না ওঠা, সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, কিছু রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের চাঁদাবাজি, ছিনতাই, বিভিন্ন অনলাইন ক্যাম্পেইন ও প্রোপাগান্ডা, ট্যাগিংয়ের রাজনীতিসহ নানাবিধ প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রমের ফলে দেশে নতুন সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে, যা জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটপরিপন্থী।
তিনি আরো বলেন, গত শনিবার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবির সেক্রেটারি রিয়াজুল ইসলামের সাথে যে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার উদ্রেক হয়েছে, সেটি খুবই দুঃখজনক। এ ধরনের কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে ছাত্রসংগঠনগুলোর ঐক্যের পথকে সঙ্কুচিত করে দিতে পারে। এর আগে আমরা লক্ষ করেছি, সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) একটি ছাত্রসংগঠনের একজন কর্মী নিজ বিভাগের কয়েকজনকে ছুরিকাঘাতের চেষ্টা করে ছাত্রশিবিরের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করে। যদিও বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ায় তিনি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। আমরা লক্ষ করেছি, গত শনিবার গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় আমরা গভীর উদ্বিগ্ন। অবিলম্বে আমরা এ ঘটনায় দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। এ ছাড়া সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন ঘটনায় কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ কর্তৃক বিভাজন সৃষ্টিকারী কিছু বক্তব্য আমাদের নজরে এসেছে। এ অবস্থায় ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যকার অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক আরো দৃঢ় করতে সব পক্ষের কাছে আমরা আন্তরিক, বন্ধুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করি।
শিবির সভাপতি বলেন, একটি ছাত্রসংগঠনের একজন শীর্ষ নেতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাল সন্ত্রাসের ডাক দিয়ে বলেছেন, ‘লাল সন্ত্রাসই মুক্তির একমাত্র পথ’। অতীতে আমরা দেখেছি যে সমাজতন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য লাল সন্ত্রাসের মাধ্যমে স্বাধীনতা-পরবর্তী ব্যাংক লুট, থানায় হামলা, নির্বিচারে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, কেড়ে নেয়া হয়েছে মৌলিক মানবাধিকার। আবার যদি সেই লাল সন্ত্রাস মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে চায়, তবে দেশের ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে তা প্রতিহত করবে। এ ধরনের বক্তব্য ছাত্রসংগঠন তথা জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করা ও সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছি।
জাহিদুল ইসলাম আরো বলেন, চব্বিশে যারা এই গণহত্যার সাথে জড়িতদের অতিদ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী লীগ দোসরদের চাকিরচ্যুত করে বিচার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি বিগত ১৫ বছরে দায়েরকৃত সব রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলা প্রত্যাহার ও রাজবন্দীদের মুক্তি প্রদান করতে হবে।
এ সময় তিনি শাহবাগে ইবতেদায়ি শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলার নিন্দা, বাংলাদেশের সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া প্রদান এবং বাংলাদেশের এক নারীকে ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যায় চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
শিবির সভাপতি দেশের জনসাধারণকে জনশক্তিতে পরিণত করতে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের দাবি জানিয়ে অবিলম্বে শিক্ষাবিদ, গবেষক, আলেম-ওলামা এবং বিশেষজ্ঞ নীতিনির্ধারক নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বাধীন শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করার জোর দাবি জানান। একই সাথে যাদের ত্যাগের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, সেসব শহীদ পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণ, আহতদের চিকিৎসা ও স্বীকৃতি প্রদানের জন্য সরকার বিশেষ পদক্ষেপ দাবি করেন তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা