গণহত্যা-জনবিরোধী রাজনীতিতে জড়িতদের পুরস্কার বাতিল : ডিজি
বাংলা একাডেমি ঘেরাও- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:২৩
বাংলা একাডেমি পুরস্কারের তালিকায় নাম থাকা কারো বিরুদ্ধে গণহত্যা ও জনবিরোধী রাজনীতিতে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে পুরস্কার বাতিল করা হবে। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ আজম গতকাল সাংবাদিকদের এ কথা জানান। পুরস্কারের তালিকা প্রকাশের পর অভিযোগ ওঠায় তা স্থগিত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা পুরো ব্যাপারটা আমলে এনে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
গতকাল সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী উপস্থিত ছিলেন। বাংলা একাডেমি পুরস্কার ঘোষণায় ভুল স্বীকার করে সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, ভুল নিয়ে একগুঁয়েমি করে চলার চেয়ে সংশোধন করা ভালো।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, সম্প্রতি বাংলা একাডেমি পুরস্কার ঘোষিত হলেও আমরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে নানা ধরনের মনোভাব ও প্রতিক্রিয়া দেখেছি। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আমাদের ঘোষিত পুরস্কারের তালিকাটি সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলা একাডেমির সার্বিক পরিস্থিতি এবং সার্বিক পরিচালনা পদ্ধতি নিয়ে নানান পক্ষের কিছু অসন্তোষ আছে। অনেক দিন আগে আইন হয়েছে, বিধি হয়েছে, প্রবিধানমালা হয়েছে। সেগুলো আমাদের পুনঃনিরীক্ষার প্রয়োজন অনেক দিন ধরেই বোধ করছিলাম।
তিনি আরো বলেন, আমরা এই তালিকাটি রিভিউ করব। প্রধানত গণহত্যা ও জনবিরোধী রাজনীতির সাথে যদি কারো সরাসরি সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ পাই, যে অভিযোগ আমাদের সামনে এসেছে, আমরা সেটা একটু খতিয়ে দেখছি, অনুসন্ধান করছি। যদি এ ধরনের সরাসরি সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে নিশ্চয়ই আমরা সেটা বাতিল করব। এর পরিবর্তে সেখানে কী ব্যবস্থা নেয়া যায়, সে বিষয়ে আমাদের যেসব কমিটি কাজ করছে তারা সিদ্ধান্ত নেবে। আশা করছি, সেটা আমরা তিন কর্মদিবসের মধ্যেই করতে পারব।
মোহাম্মদ আজম বলেন, ব্যস্ততার জন্য আমরা ঠিক করেছিলাম এগুলো মার্চ থেকে শুরু করব। সেটা এখন আমরা একটু এগিয়ে এনে হয়তো খুব শিগগির একটা সংস্কার কমিটি গঠন করে, যেখানে মানুষের বুদ্ধিভিত্তিক ও সৃজনশীল কাজের যুক্ত বিভিন্ন পক্ষ যারা চিন্তা-ভাবনা করছেন বা এ বিষয়ে আগ্রহী তাদের একটা অংশগ্রহণ থাকবে। কমিটিটা অন্তর্ভুুক্তিমূলক করে পুরো ব্যাপারটা রিভিউ করতে চাইব। কী কী ভাবে বাংলা একাডেমিকে নতুন চিন্তা-ভাবনার সাথে সংশ্লিষ্ট করা যায়, আরো বেশি কর্মক্ষম করা যায়। শিগগিরই আমরা এ ধরনের একটি কমিটি করব। আমরা কর্মপরিকল্পনা করছি, কাজ শুরু করছি, শিগগিরই আপনাদের জানাতে পারব।
এ দিকে ফ্যাসিবাদের দোসরদের অপসারণ ও বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার কেলঙ্কারিতে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে বাংলা একাডেমি ঘেরাও করেছে বিক্ষুব্ধ লেখক-কবি সমাজ ও জাতীয় সাংস্কৃতিক বিপ্লব নামের দুটি সংগঠন। গতকাল দুপুরে বাংলা একাডেমির সামনে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন তারা। সমাবেশে বক্তারা ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলা একাডেমি গড়ার দাবি জানান।
এ সময় বিক্ষুব্ধ লেখক-কবি সমাজের আহ্বায়ক আবিদ আজাদ বলেন, ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদীদের পতন হয়েছে। এই বাস্তবতার মুখে দাঁড়িয়েও ফ্যাসিবাদীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে এখানে দাঁড়াতে হয়েছে। অবিলম্বে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বাতিল ও এই পুরস্কার কেলেঙ্কারির সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
কবি শামস মুসা বলেন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম ছাত্র জনতার রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে যে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি সেটি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি, সংস্কৃতিই সার্বভৌমত্ব। যদি এটার সাথে খেলতামাশা করেন, প্রহসনের খেলা খেলেন, আমরা অবশ্যই সেটি শক্ত হাতে প্রতিহত করব। যেভাবে আমরা স্বৈরাচারের সব দোসরদের প্রতিহত করেছিলাম।
কবি মাহবুব হাসান বলেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে ফ্যাসিবাদের দালালি করে এসেছেন তাদের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার দেয়া হয়। নাটকের ব্যক্তিকে সাহিত্য পুরস্কার দেয়া হয়। যারা শহীদদের রক্ত নিয়ে কটূক্তি করে আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন তাদের সেই পুরস্কার দেয়া হয়। তাই সেটি কেমন পুরস্কার তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কয়েকজনের পুরস্কার স্থগিত করা হয়েছে। আমরা চাই তাদের পুরস্কার বাতিল করা হোক।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা