গাজীপুরে খাদ্য বিষক্রিয়ায় শতাধিক শ্রমিক হাসপাতালে
৫ জন আইসিইউতে- গাজীপুর মহানগর প্রতিনিধি
- ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৪৬
গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে বেকারির নিন্মমানের খাবার খেয়ে শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে টঙ্গী পশ্চিম থানার বড় দেওড়া শিংবাড়ি মোড়ে অবস্থিত বারাকা ফ্যাশন লিমিটেড কারখানায় এ ঘটনা ঘটে। রাতেই অসুস্থ শ্রমিকদের স্থানীয় গুটিয়া ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও টঙ্গী সরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ পাঁচজনকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। খাবারের বিষক্রিয়ায় শতাধিক শ্রমিকের আকস্মিক অসুস্থ হওয়াকে কেন্দ্র করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে স্বজনরা হাসপাতালে গিয়ে ভিড় জমান। এতে হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এ সময় পুলিশকে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে দেখা যায়।
শ্রমিকরা জানান, নির্ধারিত কর্মঘণ্টার বাইরে রাতে অতিরিক্ত সময়ে (ওভারটাইম) কারখানায় সহস্রাধিক শ্রমিক কাজ করছিলেন। রাত ৮টার দিকে শ্রমিকদের জন্য টিফিন সরবরাহ করা হয়। টিফিনে ছিল স্থানীয় একটি বেকারির কেক, ড্যানিস এবং চেরাগআলী আড়ৎ থেকে নেয়া কলা ও ডিম। এসব টিফিন খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই শ্রমিকরা অসুস্থ বোধ করতে থাকেন। অসুস্থ শ্রমিকদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কারখানার ভেতর প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর অবস্থার আরো অবনতি হলে তাঁদের হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বারাকা ফ্যাশন লিমিটেডের শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো: হাসান আলী বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে ওভারটাইমের জন্য শ্রমিকদের কারখানায় থাকতে বলা হয়। রাত ৮টার দিকে টিফিন খাওয়ার পর শ্রমিকরা একে এক অসুস্থ হতে থাকে। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ বলেন, ঘটনার পরপরই কারখানার ভেতরে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। পরিস্থিতির অবনতি হলে রাতেই তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়। অবস্থার উন্নতি হওয়ায় রাতেই কিছু শ্রমিক বাসায় ফিরে আসেন। তবে এখনো অনেকে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। শ্রমিকদের অসুস্থতার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের কারখানার পানি সম্পূর্ণ নিরাপদ। আমরা ধারণা করছি, বেকারির খাবার থেকে ফুডপয়জনিং হয়েছে। টঙ্গী চেরাগআলী মার্কেটের স্টার নামীয় বেকারি থেকে এসব খাবার সরবরাহ করা হয় বলে তিনি জানান।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের টঙ্গী জোনের পরিদর্শক মো: ইসমাইল হোসেন জানান, গুটিয়া ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রাতে ১১০ জন শ্রমিককে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ ৫ জনকে আইসিইউতে নেয়া হয়। অবস্থার উন্নতি হওয়ার পর রাতেই তাদের সাধারণ বেডে দেয়া হয়। এর মধ্যে অনেক শ্রমিক প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। অসুস্থতার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, বেকারির নিম্নমানের খাবার থেকে বিষক্রিয়া ছড়িয়েছে। আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অসুস্থতার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকদের স্বজন ও ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানার সামনে অবস্থান নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাতেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এদিকে টঙ্গী সরকারি জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক শাহরিয়ার লোনা বলেন, ‘রাতে এ হাসপাতালে ছয়জন অসুস্থ শ্রমিককে আনা হয়েছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।’ অসুস্থতার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের ফুড পয়জনিং হয়েছে। খাবারে মাইল্ড (সামান্য) পয়জন (বিষ) মেশানো হয়েছে, যার ফলে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হয়নি। বেশি পয়জন মেশালে হয়তো অনেকে মারা যেত।’
এদিকে আলোচিত বেকারির মালিক ইব্রাহিম জানান, তারা শুধু কেক ও ড্যানিস সরবরাহ করে থাকেন। কলা ও ডিম কারখানা কর্তৃপক্ষ নিজেরা সংগ্রহ করে। বেকারির খাবার থেকে বিষক্রিয়া হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, আমরা গরম খাবার সরবরাহ করে থাকি, এতে পয়জনিং হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ডিম, কলা অথবা কারখানার পানি থেকে বিষক্রিয়া ছড়াতে পারে বলে তার দাবি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা