২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১, ২৩ রজব ১৪৪৬
`

গুদামে চাল না দেয়ায় ৬২ মিলের লাইসেন্স স্থগিত

-


বাধ্যবাধকতা থাকার পরও যশোরে সরকারি খাদ্যগুদামে চাল না দেয়ায় ৬২ রাইস মিল মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে জেলা প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগ। শাস্তি হিসেবে স্থগিত করা হচ্ছে ওই ৬২ রাইস মিলের লাইসেন্স। একইসাথে আগামী সপ্তাহের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বিদ্যুৎ বিভাগকে পত্র দেবে খাদ্য বিভাগ। যশোর খাদ্য বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, যশোরে ৬২ রাইস মিল মালিক আমন মৌসুমে চাল দেবেন না বলে চুক্তি করেননি। লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা থাকার পরও মিলাররা চুক্তি করেননি বলে উল্লেখ করেছেন খাদ্য কর্মকর্তারা।
এই ঊর্ধ্বমূল্যের সময়ে এসব মিল মালিক কেন চাল দিচ্ছেন না তা জানতে প্রথমে ব্যাখ্যা তলব করেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক। ব্যাখ্যায় ৬২ মিল মালিকের কেউই সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। সর্বশেষ, গত মঙ্গলবারের সভায় শাস্তি হিসেবে তাদের মিলের লাইসেন্স স্থগিত এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেফাউর রহমান। আগামী সপ্তাহ থেকে সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জানিয়েছেন, চুক্তিবদ্ধ মিলারদের যারা এখনো পুরো চাল সরবরাহ করেননি তারা দ্রুত সরবরাহ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর ফলে, সংগ্রহ বেশ খানিকটা বাড়বে বলে জানিয়েছেন তিনি।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দফতর থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, সরকারি খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহের জন্য আমন মৌসুমে যশোরে চুক্তিযোগ্য মিল রয়েছে ১৬৩টি। এর মধ্যে ১০১টি রাইস মিল চাল দেবে বলে চুক্তি করে। বাকি ৬২টি রাইস মিল মালিক চাল দেবেন না বলে গো ধরেন। এ কারণে বারবার বলার পরও তারা চুক্তি করেননি। তাদের অসহযোগিতার কারণে যশোরে চাল সংগ্রহ মুখ থুবড়ে পড়েছে। বিশেষ করে অটো মিল মালিকদের কারণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। আর যারা চুক্তি করেছেন তারা বাজারে দাম বেশি থাকার অজুহাতে পুরো চাল সরবরাহ করেননি।
খাদ্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, যশোর জেলায় ১৬৩ চুক্তিযোগ্য রাইস মিলের মধ্যে সদর উপজেলায় ২৬, মনিরামপুরে ২৮, কেশবপুরে ৩৪, অভয়নগরে ৮, ঝিকরগাছায় ৯, শার্শায় ২৩, বাঘারপাড়ায় ৭ ও চৌগাছায় ২৮টি রয়েছে। এর মধ্যে যেগুলো চুক্তি করেছে তা হচ্ছে, সদর উপজেলায় ১১, মনিরামপুরে ১৫, কেশবপুরে ২৬, অভয়নগরে ঝিকরগাছায় ৭, শার্শায় ১৮, বাঘারপাড়ায় ৫ ও চৌগাছায় ১৫টি। চুক্তি না করার মধ্যে ১০টি অটো এবং ৫২টি হাস্কিং রাইসমিল রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

যে ৬২ জন মিলমালিক চুক্তি করেননি তাদের কাছে ব্যাখ্যা চান জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেফাউর রহমান। গত ২ ডিসেম্বর ব্যাখ্যা তলব করে পত্র দেন তিনি। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যাখ্যার জবাব দিতে বলা হয় ওই পত্রে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক স্বাক্ষরিত পত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘লাইসেন্স পাওয়া মিল মালিকরা সরকারের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর এবং তদনুযায়ী চাল বা আটা সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবে।’ ওই পত্রে আইন উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘আদেশপ্রাপ্ত হইয়া চুক্তি স্বাক্ষর না করিলে বা চুক্তি স্বাক্ষর করিয়া চাল বা আটা সরবরাহ না করিলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল এবং তিনি বা তারা আইনের ধারা ৬ এর অধীন দণ্ডিত হবেন। যেহেতু আপনি সরকারি নির্দেশ বা সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছেন সেহেতু কেন আপনার মিলের লাইসেন্স বাতিল এবং আপনার মিলকে কালো তালিকাভুক্তসহ বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার যথাযথ লিখিত জবাব আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে জমা প্রদানের নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
খাদ্য বিভাগ জানিয়েছে, চলতি আমন মৌসুমে যশোরে সিদ্ধ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ২৪৭ মেট্রিক টন। এর মধ্যে চুক্তি হয়েছে মাত্র সাত হাজার ৭৭৯.৯৪৫ মেট্রিক টন। এ ছাড়া, আতপ চালের লক্ষ্যমাত্রা ৮০১ মেট্রিক টন নির্ধারিত রয়েছে। এবার ৪৭ টাকা কেজি দরে চাল কিনছে সরকার। মিল মালিকদের বক্তব্য, বাজারে চালের দাম অনেক বেশি। এ কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এ বিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেফাউর রহমান বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যারা লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করেছে তাদের লাইসেন্স স্থগিত এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। আগামী সপ্তাহ থেকে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু হবে।’

 

 


আরো সংবাদ



premium cement