ওমরাহ যাত্রীর নাম ছাড়াই টিকিট বুকিং, অসাধুদের রমরমা বাণিজ্য
- আরফাত বিপ্লব চট্টগ্রাম ব্যুরো
- ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
চট্টগ্রামে বিমানের টিকিটের বাজার এখন সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে, যার ফলে ওমরাহ যাত্রীসহ অনেক যাত্রীকেই টিকিটের জন্য চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিভিন্ন বিমান সংস্থা টিকিটের দাম দ্বিগুণ করে ফেলেছে। এই পরিস্থিতিতে ট্রাভেল এজেন্সিগুলোও বিপাকে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে যে, বিমানের কিছু অসাধু কর্মকর্তা টিকিট আটকে রেখে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করেছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশী-বিদেশী বিমান সংস্থাগুলোর টিকিটের দাম সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত না হওয়ায় দাম অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে বিদেশী বিমান সংস্থাগুলো ওমরাহ টিকিটের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে যাচ্ছে।
রমজান মাসে সৌদি আরবে ওমরাহ পালনকারী মুসলমানদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি থাকে। আগামী মার্চ মাসে রমজান শুরু হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু অসাধু কর্মকর্তা বিভিন্ন বিমান সংস্থার টিকিটের দাম ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অতিরিক্ত মুনাফা লুটছে। বাংলাদেশ বিমান ও সৌদিয়া এয়ারলাইন্স ছাড়াও অন্যান্য বিমান সংস্থাগুলোর ওমরাহ টিকিটের দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেছে।
নভেম্বর মাসে সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের টিকিটের দাম ছিল ৭৫ হাজার টাকা। এরপর ধাপে ধাপে দাম বাড়তে থাকে। ডিসেম্বরের টিকিট ৮০ হাজার, জানুয়ারির টিকিট ৮৫-৯০ হাজার এবং ফেব্রুয়ারির টিকিট ৯৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। মার্চ মাসের টিকিট পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। যারা মার্চে ওমরাহে যাওয়ার জন্য অগ্রিম টিকিট কিনতে চান, তাদের এক লাখ ১০-২০ হাজার থেকে শুরু করে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হচ্ছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ক্ষেত্রেও একই রকম চিত্র দেখা যাচ্ছে। মার্চ মাসের একটি রিটার্ন টিকিটের সর্বনি¤œ দাম ৯৮ হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন যে, সৌদিয়া এয়ারলাইন্স, এয়ার অ্যারাবিয়া, গালফ এয়ার, জাজিরা এয়ারলাইন্সসহ বিভিন্ন বিমান সংস্থার হাজার হাজার টিকিট কিছু কালোবাজারি চক্রের দখলে চলে গেছে। টিকিট বিক্রির ওয়েবসাইটে ঢুকলে দেখা যায় কোনো টিকিট নেই, সব বিক্রি হয়ে গেছে। কিন্তু আসল ঘটনা হলো, বিভিন্ন বিমান সংস্থার অসাধু কর্মকর্তারা এই টিকিটগুলো ব্লক বা আটকে রেখেছেন এবং কিছু নির্দিষ্ট এজেন্সির মাধ্যমে অনেক বেশি দামে বিক্রি করছেন।
এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট অব বাংলাদেশ (আটাব) চট্টগ্রামের সাবেক সেক্রেটারি ও হক ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক পেয়ারু নয়া দিগন্তকে বলেন, ৫ আগস্টের আগের সিন্ডিকেট নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা এখন আগের মতো সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করেছে। এর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ধর্মপ্রাণ ওমরাহ যাত্রীরা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চাইলে যেকোনো মুহূর্তে এই সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে স্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে। আমরা দাবি জানাচ্ছি অবিলম্বে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরকার একশনে যাক।
চট্টগ্রামের এম এইচ হজ গ্রুপের পরিচালক এম সাইফুর রহমান বলেন, বিদেশী বিমান সংস্থাগুলো যাত্রীর নাম ছাড়াই টিকিট বুকিং দিয়ে ওমরাহ টিকিট বিক্রি করছে। এই সুযোগে সিন্ডিকেট টিকিটের দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা লুটছে। এসব ব্যাপারে আমরা বলতে গেলে একেবারে অসহায়। অনেক ক্ষেত্রে ওমরাহ যাত্রীরা আমাদেরকেও ভুল বুঝছেন। বিমানের টিকিট নিয়ে সিন্ডিকেটের তেলসমাতি বন্ধে অবিলম্বে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠতে পারে।