চুমকি, জাকির ও সরওয়ারের বিরুদ্ধে দুদকের চার মামলা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো: জাকির হোসেন, সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এবং কুষ্টিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম সরওয়ার জাহান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পৃথক চারটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল মঙ্গলবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ এ মামলাগুলো দায়ের করা হয় বলে জানিয়েছেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো: আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অস্বাভাবিক সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য রয়েছে।
দুদক কর্মকর্তা জানান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো: জাকির হোসেন জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ১২ কোটি ৮১ লাখ ১৪ হাজার ৩৮৯ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। এ ছাড়া ৯টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে তিনি ৩০ কোটি ৪৫ লাখ ৩২ হাজার ৮৭ টাকার অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন।
অপরদিকে, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ পাঁচ কোটি ২৭ লাখ ৩১ হাজার ৩৫৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এ ছাড়া নিজ নামের ৯টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ২২ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ১৭৪ টাকার অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন।
এদিকে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কুষ্টিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম সরওয়ার জাহান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করে দুদক।
দুদক জানায়, কুষ্টিয়া-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম সরওয়ার জাহানের বিরুদ্ধে চার কোটি ২০ লাখ ৭২ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভুত সম্পদ অর্জন ও ছয়টি ব্যাংক হিসাবে ১১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে প্রথম মামলায়।
অন্যদিকে, তার স্ত্রী মাহমুদা সিদ্দিকার নামেও পৃথক মামলা করেছে দুদক। ওই মামলায় স্ত্রীর সাথে আসামি হয়েছেন সরওয়ার জাহান। মাহমুদার নামে এক কোটি ১৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভুত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আবাসন পরিদফতরের উচ্চমান সহকারী গ্রেপ্তার : ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করে প্লট বরাদ্দ ও অনিয়মের অভিযোগে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সরকারি আবাসন পরিদফতরের উচ্চমান সহকারী মো: তৈয়বুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে দুদক। গতকাল সকালে সচিবালয়ে তার কর্মস্থল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দিয়েছে কমিশন।
দুদক সূত্রে জানা যায়, প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করে প্লট বরাদ্দসহ বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন তৈয়বুর রহমান। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট থেকে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পরপরই তাকে আটক করার সিদ্ধান্ত আসে।
সাভারে বিআরটিএ অফিসে দুদকের অভিযান : গ্রাহক সেবায় হয়রানি ও দালালদের দৌরাত্ম্য এবং বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে সাভারের বিআরটিএ অফিসে ছদ্মবেশে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সাভারে পৌর এলাকায় উপজেলা চত্ত্বরের ভেতরে বিআরটিএ কার্যালয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-২-এর সহকারী পরিচালক ওয়াহিদ মঞ্জুর সোহাগের নেতৃত্বে এই এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়।
জানা যায়, সাভারের বিআরটিএ অফিসে মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন, গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট ও লাইসেন্স প্রদানসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও বিআরটিএ অফিসে দালালের কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-২-এর সহকারী পরিচালক ওয়াহিদ মঞ্জুর সোহাগ বলেন, ছদ্মবেশে সাভার বিআরটিএ অফিসে প্রবেশ করি। সেখানে দালালদের উপস্থিতি দেখতে পাই। দালালরা আমাদের কাছে গাড়ির ড্রাইভিং লাইন্সের পরীক্ষা ছাড়াই দেবে বলে জানান। তবে এর বিনিময়ে বাড়তি চার হাজার টাকা দাবি করে। এ ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন দেয়া হচ্ছে এবং গাড়ির ফিটনেস করানোর জন্য দালালের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ ছিল। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অফিসে এসে নথিপত্র ঘেটে দেখি ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন দেয়া হচ্ছে। আমরা এসব নথিপত্র নিয়েছি, এগুলো কমিশনে জমা দেবো এবং যাদের মাধ্যমে এসব কাজ হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে।