২২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮ মাঘ ১৪৩১, ২১ রজব ১৪৪৬
`
নেপথ্যে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী

কেরানীগঞ্জে সওজের জমি গিলে খাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা

কেরানীগঞ্জে সওজের জমি গিলে খাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা -


কেরানীগঞ্জে সড়ক ও জনপদ বিভাগের ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের হাসনাবাদ জোনের বিপুল পরিমাণ জমি স্থানীয় মেম্বার এবং আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াহিদ এবং তার লোকজন দখল করে নিয়েছেন। তার নামে ছাত্র-জনতা হত্যা ও হত্যাচেষ্টাসহ চারটি মামলা থাকলেও সরকারি জমি এবং অবৈধভাবে জমি ভরাটের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগে জানা যায়, ওয়াহিদের দখল বাণিজ্যের নেপথ্যে ইন্ধনদাতা কেরানীগঞ্জ হাসনাবাদের সড়ক উপবিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ। এলাকাবাসী একাধিক অভিযোগ দিলেও কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো মৌখিকভাবে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ আওয়ামী লীগের সদস্য ওয়াহিদকে অবৈধভাবে বালু ভরাটের জন্য কাজ করার অনুমোদন দিয়েছেন। এতে করে স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওয়াহিদ মেম্বার কেরানীগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শাহীনের হাত ধরে সরকারি জমি ব্যবহার করে জোরপূর্বক বালু ভরাট, খাল, নালা ও বিল ভরাট করে আসছিলেন। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে সরকারি বিলসহ সাধারণ মানুষের জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দিন হামলা ও গুলি চালিয়ে ছাত্র-জনতা হত্যা করেন ওয়াহিদ মেম্বার ও তার লোকজন। পরে নিহত ও আহতদের স্বজনরা তার বিরুদ্ধে হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। মামলার পর ওয়াহিদ মেম্বার আত্মগোপনে থাকলেও প্রকাশ্যে তার ভাতিজা রুবেল ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতা বালু ভরাটের জন্য সওজের জমিতে লোহার ভারী পাইপ স্থাপন করে বালু ভরাটের জন্য পুরো দমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে স্থানীয়রা পুলিশ ও সওজের দারস্থ হলে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

গতকাল হাসনাবাদ সওজের অফিসে গিয়েও ভুক্তভোগীরা উপপ্রকৌশলীকে অফিসে পাননি। সেখানে এক পিয়নের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্যার সপ্তাহে দুই-এক দিন অফিসে আসেন’।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সওজের কেরানীগঞ্জ হাসনাবাদের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ হারুন অর রশিদের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করলে তিনি তা রিসিভ করেননি। তার ওয়াটসঅ্যাপে যোগোযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। পরে তাকে না পেয়ে মুন্সীগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমনের মোবাইলে একাধিকবার চেষ্টা করা হলে তিনিও কল রিসিভ করেননি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, কেরানীগঞ্জে সড়ক ও জনপদ বিভাগের ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেস ওয়ের হাসনাবাদ জোনের (এন-০৮) বাম পাশের সার্ভিস সড়কের চেইনেজ। সেখান থেকে অন্তত দুই একর জমির সমপরিমাণ সড়ক ঘেঁষে দখল করে বালু ভরাটের জন্য রাস্তার জমি কেটে পাইপ স্থাপন করা হয়েছে।

এর আগে স্থানীয় জহিরুল ইসলামের জমিতে ও স্থানীয় মক্বীনগর মাদরাসার মাঠে পাইপ স্থাপন করে মাদরাসার শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আসছে দখলদাররা। পরে কেরানীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দেন মাদরাসার অধ্যক্ষ। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ গিয়ে পাইপ সরিয়ে নেয়ার জন্য ১২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। কিন্তু ওই সময় পাইপগুলো কে স্থাপন করেছেন তা কেউ স্বীকার করেনি। এমনকি ভুক্তভোগী জমির মালিক জহিরুল ইসলামের জমিতে কারা পাইপ স্থাপন করেছেন তা কেউ স্বীকার করেননি। পরবর্তীতে মাদরাসার শিক্ষার্থীদের চাপে সওজের লোকজন ও থানা পুলিশের সহযোগিতায় পাইগুলো গুঁড়িয়ে দিয়ে আসেন।
ভুক্তভোগী জহিরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, মাওয়া মহাসড়কের রাস্তাটি তৈরি হয় ১৯৮৬ সালে। তখন এই এলাকায় শুধু বর্ষার সময় নৌকা দিয়ে মানুষ যাতায়াত করত। কোনো গাড়ি যাতায়াত ছিল না। ওই সময় পানি প্রবাহের জন্য এখানে কালভার্টের প্রয়োজন ছিল। বেশ কিছুকাল যাবৎ এই এলাকায় কোনো খাল বিল ও নদী নালার অস্তিত্ব নাই। কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় জেলখানা হওয়ার পর রাস্তার দক্ষিণ পাশে এই এলাকায় মিল, ফ্যাক্টরি, হাসপাতাল, পেট্রোল পাম্প, দোকানপাটসহ লোকজনের ঘনবসতি হয়। উত্তর পাশে ঢাকা মাওয়া সড়ক তৈরি হওয়ার সময় রাস্তার প্রয়োজনে মাটি কাটার কারণে সেখানে অল্প একটু জায়গা অর্থাৎ কেন্দ্রীয় জেলখানা হতে আনোয়ারা পেট্রোল পাম্প পর্যন্ত প্রায় ২০০০ মিটার লম্বা জায়গায় বদ্ধ অবস্থায় কিছু পানি দেখা যায়। যার গভীরতা ২ থেকে ৩ ফুট হতে পারে। তিনি বলেন, হাসনাবাদ হতে ধলেশ্বরী ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তার সাথে কোনো পানি বা খাল বিল ছিল না। সেই জায়গায় শিংদরী নদীর মাটি ভরাট করে ইতোমধ্যে প্লট বানানো হয়েছে।

ধলেশ্বরী নদীর ওপর দিয়ে বর্তমানে ‘ঢাকা-ভাঙ্গা’ রেললাইন চালু হওয়ার আগমুহূর্ত থেকে ‘বালু খেকো’ হিসেবে পরিচিত কিছু অবৈধ ব্যবসায়ী ও দুষ্কৃতকারী ভারী ড্রেজার ব্যবহার করে বিভিন্ন কৃষি জমির ওপর দিয়ে কালভার্টের পাশ ঘেঁষে ঢাকা মাওয়া সড়কের মক্কীনগর মাদরাসার সামনে দিয়ে মাটি কেটে পাইপ বসিয়েছে। জানতে পেরে এলাকার লোকজনসহ আমরা সওজ অধিদফতর ও এসিল্যান্ড অফিস, কেরানীগঞ্জ এবং দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাকে অবহিত করলে প্রশাসনের লোকজন এসে ড্রেজারের কাজ বন্ধ করে দেয়। প্রশাসনের লোকজন চলে যাওয়ার পর গভীর রাতে আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা ও স্থানীয় মেম্বারদের যোগসাজসে সন্ত্রাসীর ভারী ভেকু মেশিন দিয়ে ভোর পর্যন্ত কাজ করে পুনরায় পাইপ বসিয়ে যায়। পরদিন আমরা জানতে পেরে সাথে সাথে সওজ, কেরানীগঞ্জকে অবগত করি। তারা এসিল্যান্ডসহ এসে পাইপ বসানো লোকজনকে বসানো পাইপ উঠানোর জন্য নির্দেশ দিয়ে চলে যান। কিন্তু সেটি না সরিয়ে উল্টো পাকাপোক্ত করে সওজের জমি ও তার জমির ওপর বসিয়ে বালুভরাটের জন্য এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয় মেম্বার ওয়াহিদ ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা।
জহিরুল ইসলামের অভিযোগ, বিগত সরকারের লোকজনের চাঁদাবাজি ও মাস্তানির জন্য আমাদের ক্রয়কৃত জমি বিগত ১৬ বছর ভরাট করতে পারিনি। বর্তমানে আমাদের জায়গা ভরাট করতে গিয়ে আমাদের জায়গার পাশে অবস্থিত কালভার্টের কোনো ধরনের ক্ষতি বা প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করে আমাদের কাজ সম্পূর্ণ করি। ওই কাজ সম্পূর্ণ করার সময় কালভার্টের নিরপত্তার স্বার্থে সাময়িকভাবে মুখ বন্ধ রাখি। যাতে বালু ভেতরে না যেতে পারে। সেই সুযোগে কিছু ‘বালু খেকো’ দুষ্কৃতকারী ও ড্রেজার সাপ্লায়াররা সেখানে পাইপ স্থাপন করে রেখেছে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
হামাসের আক্রমণ প্রতিরোধে ব্যর্থতা : পদত্যাগের ঘোষণা ইসরাইলি সেনাপ্রধানের জামায়াতের সাবেক উপজেলা আমির কাশেম মণ্ডলের পিএইচডি অর্জন আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থার স্বীকৃতি চায় ময়মনসিংহ যুক্তরাষ্ট্রে আরো রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের আহ্বান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন ‘ছাত্রশিবিরের নামে নানারকম প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছিল’ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে সেবার মান বাড়াতে আইজিপির নির্দেশ নাইকো দুর্নীতি মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু কেয়া গ্রুপের আরো ২টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা গণতান্ত্রিক উত্তরণে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে জার্মানি গাজীপুরে ঝুটের ৩টি গুদামে আগুন

সকল