ছাত্র ইউনিয়ন নেতার লাল সন্ত্রাসের ডাক, ঢাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা
মেঘমল্লার বসুর গ্রেফতার দাবিতে মধ্যরাতে বিক্ষোভ শাহবাগ থানায় জিডি- ঢাবি প্রতিনিধি
- ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০৫
প্রতিরোধমূলক সহিংসতার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু ‘লাল সন্ত্রাস’ এর আহ্বান করেছেন। তিনি বলেছেন, কমরেডদের সুরক্ষার জন্য লাল সন্ত্রাসই একমাত্র পথ। এ সময় সশস্ত্র যুদ্ধের ইঙ্গিত দেন তিনি।
গত শুক্রবার রাতে নিজের ফেসবুক পোস্টে এ ঘোষণা দেয়ার পরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নানাবিধ সমলোচনা শুরু হয়। যার দরুন মধ্যরাতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় সন্ত্রাসবাদ আহ্বানের অভিযোগে তাকে গ্রেফতারের দাবি জানায়।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে মেঘমল্লার বসু বলেন, একমাত্র পথ হলো লাল সন্ত্রাস। প্রান্তিক জনগণের সুরক্ষার জন্য প্রতিরোধমূলক সহিংসতা। যতদিন আমরা শুধু প্রার্থনা সভা এবং মিছিল করে যাবো, যা কখনো সহিংস হওয়ার ক্ষমতা রাখে না, ততদিন তুমি তোমার সাথীদের সুরক্ষিত করতে পারবে না। মানুষ তোমাকে পছন্দ করবে; কিন্তুকেউ অনুপ্রাণিত হবে না। আর কেউ আরেকটি ‘উদারপন্থী’ দলের প্রয়োজন অনুভব করে না। কেউ ইচ্ছাকৃত শহীদদের পরোয়া করে না। একমাত্র ভালো ফ্যাসিস্ট হলো মৃত ফ্যাসিস্ট।
তিনি বলেন, এই ডানপন্থী উন্মাদনার মধ্যে তোমাকে সার্বভৌমত্বের নামে হত্যা করা হবে এবং তারপর তোমার চরিত্র হনন করা হবে। মাতাল উদারপন্থী ও ‘কেন্দ্রপন্থীরা’, যারা ইতোমধ্যেই তাদের মন-প্রাণ ডানপন্থার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে, তারা দাবি করবে এটি ছিল একটি সাংস্কৃতিক যুদ্ধ এবং উভয়পক্ষই খারাপ। তোমার সাথী খুবই কম। তুমি একটিকেও হারানোর মতো অবস্থায় নেই। আর মানুষ ভেড়ার মতো। তুমি কি সারা জীবনের জন্য একজন রাখাল হওয়ার জন্য প্রস্তুত?
মেঘমল্লার আরো বলেন, পাবলিক ডেমোনস্ট্রেশন করা বন্ধ করো। কমিটির কার্যক্রম প্রকাশ্যে প্রচার করা বন্ধ করো। আমরা যদি সতর্ক না হই, তাহলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবো। দাঁত আর নখ বেরিয়ে আসছে। ট্রল আর মিম করে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব না। এবার এটি গোপনে নিয়ে যাও, কমরেড। অপেক্ষা করো। এর বেশি প্রকাশ্যে বলার প্রয়োজন নেই।
লাল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঢাবিতে বিক্ষোভ মিছিল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র -ইউনিয়ন নেতার লাল সন্ত্রাস আহ্বানের বিরুদ্ধে মিছিল করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গত শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়া থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে সমাবেশে মিলিত হন। সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীরা সেন্ট্রাল লাইব্রেরি এলাকায় সিরাজ সিকদারের গ্রাফিতিতে জুতা নিক্ষেপ করেন এবং গ্রাফিতি মুছে ফেলেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে ঢাবি শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ বলেন, এরা ’৮০ ও ’৯০-এর দশকের মতো আবারো সন্ত্রাসবাদ কায়েম করতে চায়, তারা ডাকসুকে এভাবেই ভণ্ডুল করেছিল ’৯০-এর দশকে। আজ ওই সন্ত্রাসীরা আবারো সন্ত্রাসবাদের ঘোষণা দিচ্ছে। এই সন্ত্রাসীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করতেই হবে।
আরেক শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ঢাবি ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি দেখলাম সরাসরি লাল সন্ত্রাসের হুমকি দিয়েছেন। এই বক্তব্য জঙ্গিবাদকে উসকে দেয়। এটি সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত। তাদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।
শাহবাগ থানায় জিডি : এ দিকে গতকাল বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে মেঘমল্লার বসুর দেয়া ‘লাল সন্ত্রাস ও সহিংসতা’ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে জীবন নিয়ে শঙ্কিত হওয়ায় নিরাপত্তার দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তারা আমাদের ওপর যেকোনো গুপ্ত হামলা করতে পারে, এ জন্য আমরা আইনি আশ্রয় নিতে চাচ্ছি। শাহবাগ থানায় আপাতত জিডি করা হবে। আমরা প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানাই ‘লাল সন্ত্রাস’ নামক সহিংসতার ডাক যারা দিয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হোক।
প্রসঙ্গত, উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী, লাল সন্ত্রাস বা রেড টেরর হলো সোভিয়েত রাশিয়ায় বলশেভিকদের মাধ্যমে পরিচালিত রাজনৈতিক নিপীড়ন এবং মৃত্যুদণ্ডের একটি প্রচারণা, যা প্রধানত চেকা নামক বলশেভিক গোপন পুলিশের মাধ্যমে করা হতো। এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯১৮ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয়েছিল এবং ১৯২২ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। ভøাদিমির লেনিনের হত্যা চেষ্টা এবং পেট্রোগ্রাদ চেকা নেতা মোইসেই ইউরিতস্কি ও পার্টি সম্পাদক ভি. ভলোদারস্কির সফল হত্যাকাণ্ডের পর, যা বলশেভিক গণপ্রতিহিংসার জন্য প্রতিশোধমূলক বলে অভিযোগ করা হয়। লাল সন্ত্রাস ফরাসি বিপ্লবের ত্রাসের শাসনের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে এবং এর লক্ষ্য ছিল বলশেভিক শক্তির বিপক্ষে রাজনৈতিক বিরোধিতা, প্রতিপক্ষ এবং অন্য যেকোনো ধরনের হুমকি নির্মূল করা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা