১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪ মাঘ ১৪৩১, ১৭ রজব ১৪৪৬
`

ব্লকভিত্তিক ভবন উন্নয়নে আগ্রহীদের সংখ্যা বাড়ছে

হাজারীবাগের রিজেনারেশন
-


রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকার রিজেনারেশন প্রকল্পে ছোট ছোট প্লট একত্রিত করে ব্লকভিত্তিক ভবন উন্নয়নে আগ্রহীদের সংখ্যা বাড়ছে। ছোট ছোট প্লটের মালিকরা একত্রিত হয়ে ন্যূনতম এক একর পরিমাণ জায়গায় ব্লক করে আবেদন করলে রাজউক সেই প্লটে ব্লকভিত্তিক উন্নয়নের জন্য প্ল্যান দেবে বলে জানিয়েছি। শর্ত পূরণ হলে রাজউক সেই ভূমিতে টেকসই প্ল্যান পাস করে দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। এই উদ্দেশ্যে ঢাকা মহানগরীর জন্য ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান ২০২২-২০২৫ এর আওতায় ‘হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকাকে হাজারীবাগ রিজেনারেশন সাইট’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ড্যাপে এই এলাকাকে একটি বিশেষ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে লিখেছে, ‘এই এলাকায় দীর্ঘ মেয়াদে কী ধরনের ভূমি ব্যবহার উপযোগী হবে তা সমীক্ষার মাধ্যমে ফলাফল প্রাপ্তি ও পর্যালোচনার পর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারণ করা হবে।’ ইতোমধ্যে রাজউক ও জিআইজেড কর্তৃক প্রস্তুতকৃত সিটি ক্লাইমেট ফাইন্যান্স গ্যাপ ফান্ডের সহায়তায় হাজারীবাগ ও লালবাগ এলাকায় পরিচালিত সমীক্ষার মাধ্যমে ঢাকা আরবান রিজেনারেশন প্রজেক্টের (ডুর্প) আওতায় ক্লাইমেট রিসিলিয়েন্ট অ্যান্ড গ্রিন অ্যাকশান প্ল্যান ফর হাজারিবাগ অ্যান্ড লালবাগের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে।

হাজারীবাগ ও লালবাগ এলাকায় ব্লকভিত্তিক প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তার কারণ হিসেবে রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো: আশরাফুল ইসলাম নয়াদিগন্তকে বলেন, ‘হাজারীবাগের অপরিশোধিত ট্যানারির বর্জ্যে এলাকাটি ইতোমধ্যে দূষিত হয়ে গেছে। এই এলাকার সমীক্ষায় পাওয়া গেছে, এই এলাকার মাটিতে সর্বোচ্চ মাত্রার ৪৬৩.৯৬ পিপিএম ক্রোমিয়াম আছে। ক্রোমিয়াম চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত হয়ে থাকে কিন্তু এটা একটি উচ্চমাত্রার বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ। এ রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হলে মানুষের মধ্যে ক্যান্সার হয়ে থাকে।’
জানা গেছে, হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকার দূষণের পরিমাণ ও গভীরতা নির্ণয় করে মাটির অবস্থান, মাটি সরিয়ে কোন স্থানে, কত পরিমাণ ভূমিতে, কত দিন এবং কি কি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এ বিষয়ে এবং একই সাথে প্রতি সাইটের কমপক্ষে পাঁচটি স্থানের প্রতিকার সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় যাচাইয়ের পর ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে একটি দূষণ পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে রাজউক। এজন্য এ কাজ করার আগে পরিবেশ অধিদফতর ও রাজউক থেকে অনুমতি নিতে হবে এবং সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি রাজউক পর্যবেক্ষণ করবে।

রাজউক বলছে, লালবাগ ও হাজারীবাগের বর্তমান আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকার রাস্তার প্রশস্ততা ৫ থেকে ১১ ফুট পর্যন্ত। ফলে এখানে সবসময় যানজট লেগেই থাকে। অগ্নিনির্বাপণের জন্য কোনো ব্যবস্থাপনা এখানে অনুপস্থিত এবং অধিক পরিমাণ আইন বহির্ভূত শিল্প কার্যক্রমের জন্য এলাকাটি অতিমাত্রায় দুর্ঘটনাপ্রবণ।
রাজউক সবুজায়ন বৃদ্ধির জন্য মিশ্র ভূমি ব্যবহার ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত জায়গায় ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে সবুজ ভবন নির্মাণে সবুজ উপকরণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায়। এই লক্ষ্যে কমপক্ষে এক একর জায়গায় পর্যাপ্ত উন্মুক্ত স্থান রাখা এবং সেখানে হাঁটা ও শিশুদের খেলার জন্য জায়গা রেখে ভবন উন্নয়নে অনুমতি দেবে। যারা যতটুকু জায়গা একত্রিত করে ব্লক উন্নয়নে আসবেন তিনি সে অনুপাতে হাইরাইজ ভবনে ফ্ল্যাট পাবেন। ব্লকভিত্তিক উন্নয়নে যত বড় আয়তনের জায়গা পাওয়া যাবে হাইরাইজ ভবনের পরিমাণও তত বাড়বে। একই সাথে আধুনিক ডিজাইন প্রয়োগ করে ভবন নির্মাণ করা হলে তা যেমন আকর্ষণীয় হবে তেমনি এটা আবাসিক ও বাণিজ্যিক কাজেও ব্যবহার করে ব্যক্তি অথবা গোষ্ঠী লাভবানও হতে পারে। একত্রিতকরণ ছাড়াও ব্যক্তি উদ্যোগেও কেউ এক একর অথবা এর বেশি আয়তনের জায়গা নিয়ে এলেও তাকে রাজউক সহায়তা করতে চায়। রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো: আশরাফুল ইসলাম এ ব্যাপারে বলেন, ‘পুন:উন্নয়ন এলাকায় অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলো কমপক্ষে ৪০ ফুট বা ১২.৯ মিটার প্রশস্ত থাকবে।’
জানা গেছে, আগে রাজউকের কর্মকর্তারা হাজারীবাগ ও লালবাগ এলাকায় গিয়ে বাড়ির মালিকদের বুঝাতে চাইলে তারা শুনতে চাইতেন না। কিন্তু ড্যাপে এ সম্পর্কিত অনুচ্ছেদ অন্তর্ভুক্ত করায় ওই দুই এলাকার ভূমি ও বাড়ির মালিকরা রাজউকে আসছেন এবং রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনুরোধ করছেন তারা যেন তাদের এলাকাটি উন্নয়নে সহায়তা করেন। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত কাজও শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।


আরো সংবাদ



premium cement