১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০২ মাঘ ১৪৩১, ১৫ রজব ১৪৪৬
`
কক্সবাজারে খুলনার কাউন্সিলর খুন

আধিপত্য বিস্তার ও অতিতের প্রতিশোধ নিতে এই হত্যা

-

কক্সবাজারে পরিকল্পিতভাবে এনেই গুলি করে হত্য করা হয়েছে খুলনার সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপুকে। গত ৯ জানুয়ারি রাতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত সংলগ্ন হোটেল সিগালের সামনে রাস্তার ফুটপাথে টিপুকে গুলি করে হত্যা করে শেখ শাহরিয়ার ইসলাম পাপ্পু নামে খুলনার এক যুবক। সে খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চরমপন্থী নেতা শহিদুল ইসলাম ওরফে হুজি শহীদের ভাতিজা। হুজি শহীদকে ২০১৫ সালের অক্টোবরে দৌলতপুরের খান এ সবুর রোডে ইসলামী ব্যাংকের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়। আর সে হত্যা মামলার আসামি ছিলেন গোলাম রব্বানী টিপু।
হুজি শহীদ হত্যার পরিশোধসহ স্থানীয় দ্বন্দ্বের জেরে টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। আর পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে গ্রেফতার ঋতু নামে ওই নারী। হত্যার সময় পুরোদমে সহযোগী ভূমিকায় ছিলেন গোলাম রসুল নামে খুলনার অপর যুবকসহ কয়েকজন।
ঘটনার পাঁচ দিন পর মৌলভীবাজার থেকে সরাসরি জড়িত এই তিন আসামিকে গ্রেফতারের পর গতকাল দুপুরে কক্সবাজার জেলা পুলিশ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার তিনজনই এই তথ্য জানিয়েছে বলে পুলিশ সুপার উল্লেখ করেন।
নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ। মৌলভীবাজার জেলার জিরি থানাধীন কাপনা পাহাড় এলাকা থেকে মঙ্গলবার বিকেলে গ্রেফতার হওয়া তিনজন হলেনÑ
খুলনা সিটি করপোরেশনের দেয়ানা মোল্লাপাড়ার সেলিম আকনের মেয়ে ঋতু (২৪), একই এলাকার মো: জামাল শেখের ছেলে শেখ শাহরিয়ার ইসলাম পাপ্পু (২৭) ও মধ্য কারিগরপাড়ার হায়দার সরদার অদুদের ছেলে গোলাম রসুল (২৫)।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, গত ৮ জানুয়ারি ঋতুকে সাথে নিয়ে কক্সবাজার আসেন গোলাম রব্বানী টিপু। ৯ জানুয়ারি গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন তথ্যে পুলিশ ঘটনায় জড়িত নারীসহ তিনজনকে মৌলভীবাজার থেকে গ্রেফতার করে। এরপর তিনজনের দেয়া তথ্যমতে কক্সবাজার পৌরসভার কলাতলীর সৈকত বহুমুখী সমবায় সমিতি আবাসিক এলাকার কক্স কুইন রিসোর্টের ২০৮ নম্বর কক্ষের চিলেকোঠা হতে হত্যায় ব্যবহৃত পিস্তল ও চার রাউন্ড গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন জব্দ করা হয়।

পুলিশ সুপার মো: রহমত উল্লাহ বলেন, গ্রেফতার তিনজনই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিল। এর মধ্যে ঋতু কক্সবাজার ঘুরতে এসে কাউন্সিলর টিপুর সাথে হোটেলে উঠেছিলেন।
জেলা পুলিশের দেয়া তথ্য বলছে, হত্যাকাণ্ডের পর থেকে ঋতুর কোনো হাদিস পাওয়া না গেলেও হোটেল কক্ষে বাসের একটি লাগেজ টেগ পায় তদন্তসংশ্লিষ্টরা।
সেটি ছিল ইম্পেরিয়াল এক্সপ্রেসের একটি বাসের। মূলত সেই বাসেই কক্সবাজার আসে হত্যাকারীরা। এটির সূত্র ধরেই কাজ শুরু করে তারা। এই বাসের অন্যান্য যাত্রীসহ নম্বর তল্লাশি হয়।
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় একপর্যায়ে ঋতুর নাম উঠে আসে। তারপর থেকে ঋতুর অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা করা হয়। একপর্যায়ে মৌলভীবাজার জেলার জিরি থানার কাপনা পাহাড় এলাকা থেকে ঋতুসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ সুপার।
ঋতু খুলনার দৌলতপুরের সেলিম আকন্দের মেয়ে। তার স্বামী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হন। দীর্ঘ দিন ধরে কাউন্সিলর টিপুর সাথে সখ্য তৈরি করে পুরো হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে সে।
পাপ্পু শহীদের ভাতিজা। আর একাধিক মামলার আসামি পাপ্পুকে শুটার নামে চেনেন এলাকাবাসী। মূলত হুজি শহীদ হত্যার প্রতিশোধ নিতেই এই হত্যা সংঘটিত হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচন ও অন্যান্য কারণও রয়েছে।
গত ৯ জানুয়ারি রাতে কক্সবাজার সমুদসৈকতসংলগ্ন হোটেল সিগালের সামনে রাস্তার ফুটপাথে গোলাম রব্বানী টিপুকে গুলি করে হত্যা করার ঘটনায় র‌্যাবের অভিযানে টিপুর সাথে বেড়াতে আসা কেসিসির আরেক সাবেক কাউন্সিলর শেখ ইফতেখার হাসান সালু ও কক্সবাজারের বন্ধু মেজবাহ উল্লাহ ভুট্টো গ্রেফতারের তথ্য জানিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, গ্রেফতার সবাইকে রিমান্ডের অবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালতে আদেশ পেলে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করে অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করা হবে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement