১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১, ১৩ রজব ১৪৪৬
`

পুলিশের ঘুষ নেয়ার অভিযোগ ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থীর, ভোগান্তির শিকার ৩৭ শতাংশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জরিপ
-


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের নিয়ে করা এক জরিপে ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা নিতে চায় না। এ ছাড়া ঘুষ নেয়ার মাধ্যমে সেবা প্রদানের অভিযোগ করেন ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী। আর সেবা নিতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হন ৩৭ শতাংশ শিক্ষার্থী। কখনো পুলিশ প্রশাসন থেকে সেবা নেননি এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১.২ শতাংশ।
জনবান্ধব, দায়বদ্ধ পেশাদার পুলিশি ব্যবস্থা বিনির্মাণে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা এবং প্রস্তাব সংক্রান্ত গবেষণা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের জননীতি এবং শাসনব্যবস্থা বিষয়ের একটি গবেষক দল। এই গবেষণায় পুলিশি ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষার্থীদের নানা অভিযোগ, পরামর্শ এবং প্রত্যাশা উঠে আসে।
গত রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী অডিটোরিয়ামে ‘জনবান্ধব, দায়বদ্ধ পেশাদার পুলিশি ব্যবস্থা বিনির্মাণ : শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা এবং প্রস্তাব’ শীর্ষক সেমিনারে গবেষণার ফলাফল জানানো হয়।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শাসন ও নীতিবিষয়ক গবেষণা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম। আলোচক হিসেবে ছিলেন ইংল্যান্ডের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইয়ান-হেনরিক মায়ার-শ্যালিং। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. তৈয়েবুর রহমান।
গবেষণার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাদরাসার ২০৪০ জন তরুণ শিক্ষার্থীর মতামত নেয়া হয়। এতে দেখা যায়, ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন থেকে তারা সঠিক সেবা পেয়েছে। ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী বলছেন রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা নিতে চান না। এ ছাড়া ঘুষ নেয়ার মাধ্যমে সেবা প্রদানের অভিযোগ করেন ৩১ শতাংশ। সেবা নিতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হন ৩৭ শতাংশ শিক্ষার্থী। কখনো পুলিশ প্রশাসন থেকে সেবা নেয়নি এমন শিক্ষার্থীর পরিমাণ ১১.২ শতাংশ।

সংস্কার প্রস্তাব দিতে গিয়ে ৬৮.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বলেন, পুলিশি ব্যবস্থায় জবাবদিহিতার জন্য এনোনিমাস পাবলিক অভিযোগ কেন্দ্র থাকা উচিত, যেখানে জনগণ পুলিশের বিপক্ষে অভিযোগ করতে পারবে। ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী পুলিশ প্রশাসনকে রাজনীতিমুক্ত রাখতে চান। ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী পুলিশের নিরাপত্তার জন্য আইন প্রণয়ন করার প্রয়োজনীয়তা জানিয়েছেন। নৈতিকতা শিক্ষা দেয়ার জন্য পুলিশ সদস্যদের জন্য প্রশিক্ষণ দরকার বলে জানিয়েছেন ৬৩ শতাংশ। ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পুলিশ প্রশাসনের জনশক্তি বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন। আর ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী পুলিশ প্রশাসনের কার্যক্রম নিয়ে সাপ্তাহিক জবাবদিহি এবং ২৫ শতাংশ মাসিক জবাবদিহির কথা জানান। ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী স্বাধীন পুলিশ প্রশাসন গঠনের এবং ৪২.৭৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পিএসসি কর্তৃক পরিচালনার পক্ষে মত দেন। ৪০.৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পুলিশ সদস্যদের বেতন বৃদ্ধির কথা জানান। ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী সেবা প্রদানকে ডিজিটাল করার প্রস্তাব দেন।

সেমিনারে অধ্যাপক ড. ইয়ান-হেনরিক মায়ার-শ্যালিং বলেন, জবাবদিহিমূলক পুলিশ প্রশাসন তৈরির জন্য এই গবেষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়ায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দেশের তরুণ নাগরিকদের অভিজ্ঞতা এখানে উঠে এসেছে। গবেষণায় উঠে আসা প্রস্তাবগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন জরুরি।
সভাপতির বক্তব্যে ড. তৈয়েবুর রহমান বলেন, ছাত্র-জনতার কাছ থেকে তাদের মতামত নিয়ে আমরা এই গবেষণা করেছি। পুলিশ আমাদের সমাজের অংশ। পুলিশকে নাগরিকের বন্ধু এবং আস্থার পাত্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সমাজের চাওয়া অনুযায়ী কাজ করতে হবে। স্বাধীন বাংলাদেশে পুলিশের লক্ষ্য হবে জনগণকে সেবা দেয়া। কিন্তু ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত পুলিশ ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী কেবল আইনশৃঙ্খলা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। এখন সংস্কারের সময়। পুলিশেরও নানা সীমাবদ্ধতা আছে। তাদেরকে আমাদের বোঝার চেষ্টা করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement