খুলনার সাবেক কাউন্সিলর শেখ হাসানসহ গ্রেফতার ২
- কক্সবাজার অফিস
- ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০৫
কক্সবাজার সৈকতে দুর্বৃত্তের গুলিতে খুলনা সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপু (৫৫) নিহতের ঘটনায় সাবেক কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখারসহ দুইজনকে আটক করেছে র্যাব। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
আটক ব্যক্তিরা হলেন- খুলনা সিটি করপোরেশনের ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখার ওরফে সালু (৫৩)। তিনি ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তাকে রাত সাড়ে ১২টার দিকে হোটেল সিহিল থেকে আটক করে র্যাব। পরে ভোরে র্যাব কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ার বাসিন্দা মেজবাহ হক ভুট্টোকে আটক করে।
পুলিশ ও প্রত্যদর্শীরা জানায়, গোলাম রব্বানী টিপু সৈকত তীরের হোটেল সিগার্ল সংলগ্ন ঝাউবনের ভেতরে গত রাতে কাঠের তৈরি সেতুর পাশে হাঁটছিলেন। এ সময় মোটরসাইকেলে দুই ব্যক্তি এসে টিপুর মাথায় গুলি করে দ্রুত পালিয়ে যায়। পূর্বশত্রুতার জেরে এই হত্যাকাণ্ড বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপু, শেখ ইফতেখার গত বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজারে আসেন। তারা সকাল ৭টার দিকে শহরের কলাতলী এলাকার হোটেল গোল্ডেন হিলে ওঠেন। হোটেলের অতিথি লিপিবদ্ধ বইয়ে দেখা গেছে, আটক ইফতেখার নিহত গোলাম রব্বানী টিপুর সাথে রুমি (২৭) নামে এক নারীও ছিলেন। ওই নারী পলাতক রয়েছেন।
এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন আরো জানান, হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ৩১ মিনিটে ওই নারীসহ কাউন্সিলর টিপু হোটেল থেকে বের হন। এরপর রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত–সংলগ্ন হোটেল সিগার্লের সামনের ফুটপাথে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন গোলাম রব্বানী টিপু।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর হত্যার রহস্য উন্মোচনে পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর একাধিক টিম কাজ করছে। এর মধ্যে দু’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
খুন হওয়ার আগে স্ত্রী-সন্তানের খোঁজ নেন টিপু
খুলনা ব্যুরো জানায়, কক্সবাজারে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হওয়ার আগে স্ত্রী সাবিহা আক্তারকে হোটেল থেকে ফোন দিয়ে দুই সন্তানের খোঁজ নেন খুলনা সিটি করপোরেশনের অপসারিত কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি গোলাম রাব্বানী টিপু। গত বুধবার মাগরিবের নামাজের পর আমাকে (সাবিহা আক্তার) ফোন দিয়ে বলে, বাচ্চারা কোথায়? তখন আমি বললাম, বাচ্চারা আছে, চা খেয়ে আমি বাচ্চাদের পড়াতে বসাবো। আর কোনো দিন সে আর আমাদের খোঁজ নেবে না। বাচ্চাদের কথাও জানতে চাইবে না। আমার স্বামীকে গাজী কামরুল (সাবেক চরমপন্থী দল নেতা) প্রায়ই হত্যার হুমকি দিতেন। আমার স্বামীকে সুকৌশলে কক্সবাজারে নিয়ে সন্ত্রাসীদের দিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে খুলনা মহানগরীর দেয়ানার হোসেন শাহ রোডের ২১২ নম্বর রোডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি গোলাম রাব্বানী টিপুর বাড়িতে গেলে তার স্ত্রী সাবিহা আক্তার এসব কথা বলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত মঙ্গলবার ঢাকা থেকে কেসিসির সদ্য অপসারিত ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম রাব্বানী টিপু কেসিসির ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদ্য অপসারিত আরেক কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হাসান ইফতেখার চালুর সাথে কক্সবাজারে গিয়েছিলেন। বুধবার সকালে তারা কক্সবাজারে পৌঁছে একটি হোটেলে ছিলেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা সেই হোটেলে কাটান।
টিপুর পরিবার সূত্র জানায়, কক্সবাজারে অনেক আগে থেকেই গোলাম রাব্বানী টিপুর মাছের ব্যবসা ছিল। এর আগে লবণের ব্যবসাও ছিল। এ ব্যবসার কারণে টিপুর কক্সবাজারে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। তবে এখন তিনি জমিজমার ব্যবসা করতেন। তবে স্থানীয়দের ধারণা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে হত্যা করা হয়েছে গোলাম রাব্বানী টিপুকে। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে এলাকার অনেকেই জড়িত রয়েছে। কারণ টিপু সব সময় অস্ত্রসহ দলবল নিয়ে চলাফেরা করতেন। বিভিন্ন কারণে তার অনেক শত্রু ছিল।
টিপুর স্ত্রী সাবিহা আক্তার বলেন, তার স্বামীর এলাকায় অনেক জনপ্রিয়তা ছিল। তিনি মানুষের সালিস-দরবার করতেন। এটা ভালো চোখে দেখতেন না এক সময়ের শীর্ষ চরমপন্থী দল নেতা গাজী কামরুল। সে বিভিন্ন সময়ে আমার স্বামীকে হত্যার হুমকি দিতেন। গাজী কামরুলই মেইন। সেই আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। সে কারো ভালো চায় না।
টিপুর বড় ভাই গোলাম রসুল বাদশা বলেন, খুলনার দৌলতপুর, পাবলাকেন্দ্রিক শত্রুরাই আমার ভাইকে সুকৌশলে কক্সবাজারে নিয়ে হত্যা করেছে। তারা বহুদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে অবশেষে সফল হয়েছে।
খুলনা নগরীর দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর আতাহার আলী বলেন, গোলাম রাব্বানী টিপুর বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় আগে হত্যাকাণ্ডসহ ২টি মামলা ছিল। এ ছাড়া ৫ আগস্টের পরে খালিশপুর থানায় তার নামে মামলা হয়েছে বলে শুনেছি। তার লাশ এখনো (শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা) কক্সবাজারে রয়েছে। বাড়িতে পৌঁছেনি।