১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ৯ রজব ১৪৪৬
`
টেন্ডার ক্রয় ও দাখিল আজ

সুমন ভূঁইয়ার দখলে সদরঘাটের লেবার হ্যান্ডেলিং ও একাধিক পার্কিং ইয়ার্ড

-


বিআইডব্লিউটিএর ঢাকার সদরঘাট লেবার হ্যান্ডেলিং ও একাধিক পার্কিং ইয়ার্ড দখলে রেখেছে ঘাট শ্রমিক নেতা সুমন ভূঁইয়া। রয়েছে ফুটপাথের পাঁচ শতাধিক দোকান থেকে অবৈধ চাঁদা আদায়ের অভিযোগ। গতকাল ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে, বিআইডব্লিউটিএর কার্যালয়, শ্যামবাজার, লালকুঠি ও সিমসন ঘাট পার্কিং ইয়ার্ড এলাকায় ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন সদরঘাট পোর্ট অফিসারের দায়িত্বরত বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান।
বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসায় ওপেন টেন্ডারের আহ্বান করছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। আজ ৯ জানুয়ারি সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত বন্দর ও পরিবহন বিভাগ টার্মিনাল ভবন, সদরঘাট, ঢাকা বন্দর ও পরিবহন বিভাগ, বিআইডব্লিউটিএ মতিঝিল, ঢাকা, সচিবালয় ভবন নং ৬, নবম তলা, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় কক্ষ নম্বর ৮০১ এবং জেলা প্রশাসক ঢাকার কার্যালয় থেকে টেন্ডার ক্রয় ও দাখিল করা যাবে।

গতকাল বুড়িগঙ্গার নদীর তীরে সদরঘাট এলাকায় অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সদরঘাট বিআইডব্লিউটিএ ভবনের পূর্ব পাশ থেকে শুরু করে লালকুঠি শ্যামবাজার পর্যন্ত এবং ভবনের পশ্চিম পাশে সিমসন ঘাট ৩ পন্টুন পর্যন্ত একাধিক পার্কিং ইয়ার্ড রয়েছে। পার্কিং ইয়ার্ডে সিএনজি, অটোরিকশা, ট্রাক, পিকআপ, প্রাইভেট কার, মাইক্রো বাস পার্কিং অবস্থায় আছে। এসব গাড়ি থেকে ঘণ্টা হিসেবে ২০ থেকে ১০০ টাকা করে আদায় করছে দখলদারের লোকজন। পার্কিং ইয়ার্ডের বাইরে ঢাকা শহর রক্ষা বাকল্যান্ড বাঁধের শ্যামবাজার থেকে ওয়াইজঘাট পর্যন্ত দেড় কিলোমিটারজুড়ে রয়েছে পাঁচ শতাধিক ভাসমান দোকান। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পান-সিগারেটের দোকান, চায়ের দোকান, জুতার দোকান, পুরনো বস্ত্র কেনাবেচার দোকান, চোরাই বস্ত্র ও অন্যান্য সামগ্রী বিক্রির দোকান, পিঠার দোকান, শরবতের দোকান, ফলের দোকান, নিম্নআয়ের লোকজনের ভাতের হোটেলসহ নানাবিধ দোকান। এসব দোকানে সকাল থেকে শুরু করে রাত ১২টা পর্যন্ত বেচাবিক্রি চলে। দোকানের প্রকারভেদে চাঁদা দিতে হয় ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। কে নেয় এই চাঁদা জানতে চাইলে নাম না বলার শর্তে দোকান মালিক ও কর্মচারীরা জানান, তারা বর্তমানে ঘাট শ্রমিক নেতা সুমন ভূঁইয়াকে চাঁদা দিচ্ছেন। কে এই সুমন ভূঁইয়া- জানতে চাইলে তারা বলেন, সদরঘাটের লেবার হ্যান্ডেলিং, বাকল্যান্ড বাঁধ শুল্ক আদায় কেন্দ্র, সদরঘাট পার্কিং ইয়ার্ড, সদরঘাটের গেইট ও গ্যাংওয়ে সবই চলে সুমন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে।

সদরঘাট পোর্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পরে সুমন ভূঁইয়ার আবির্ভাব ঘটে। এর আগে সদরঘাট লেবার হ্যান্ডেলিং ইজারাদার ছিল সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রীর ভাগিনা আলমগীর। লালকুঠি পার্কিং ইয়ার্ডের ইজাদার ছিল মীর মো: জাভেল হোসেন পাপন।
৫ আগস্টের পর শাজাহান খানের ভাগ্নে আলমগীর পালিয়ে যায়। এর পর থেকে সুমন ভূঁইয়া স্পট কোটেশন হিসেবে শুধু বাণিজ্যিক মালামাল ওঠানামার লেবার হ্যান্ডেলিং পয়েন্ট তার লোকজনের মাধ্যমে আদায় করছেন। ৯ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে ওই লেবার হ্যান্ডেলিং পয়েন্ট পাঁচ মাসের জন্য ইজারা আহ্বান করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।

এতে ১৫১ দিনের জন্য ইজারার মূল্য ধরা হয়েছে এক কোটি ৪৮ লাখ ৯৩ হাজার ১৫১ টাকা।
অন্য দিকে শ্যামবাজার ওয়াটার বাস পন্টুনের পশ্চিম প্রান্ত হতে পার্কিং ইয়ার্ডের কার্গো গেট পর্যন্ত এবং পুরনো টার্মিনাল ভবনের পশ্চিম প্রান্ত থেকে বীণা স্মৃতি ঘাটসংলগ্ন ডাবঘাট সীমানায় পরিবাহিত মালামালের লেবার হ্যান্ডেলিং চার্জ আদায়ের জন্য ইজারা মূল্য ধরা হয়েছে দুই কোটি ৫০ লাখ ২৮ হাজার ৭৬৭ টাকা; যা এর আগে ইজারা ছিল বার্ষিক মূল্য ছয় কোটি ছয় লাখ টাকা। একটি বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, এই টেন্ডার নিয়ন্ত্রণেও সুমন ভূঁইয়ার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
সদরঘাটের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদা আদায় সম্পর্কে শ্রমিক নেতা সুমন ভূঁইয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির কোনো অভিযোগ নেই। চাঁদা আদায় অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি বলেন, সদরঘাটে লেবার হ্যান্ডেলিং পয়েন্ট আমার নামে বৈধ ইজারা রয়েছে। শুধু লেবার হ্যান্ডেলিং পয়েন্ট আমি নিয়ন্ত্রণ করি। এর বাইরে গুদারাঘাটগুলো নিপুন রায়ের লোকজন পরিচালনা করছে। পার্কিং ইয়ার্ডের ইজারাদার যুবলীগ নেতা মীর মো: জাবেল হোসেন পাপন। তিনি তার আত্মীয়স্বজন দিয়ে এগুলো পরিচালনা করছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement