১০০ নয়, ৫টি অর্থনৈতিক জোনে গুরুত্ব দেবে বেজা
গণমাধ্যমকে আশিক চৌধুরী- বিশেষ সংবাদদাতা
- ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া পরিকল্পনা অনুযায়ী এক শ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল নয় বরং ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল দাঁড় করানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে শুরুতে পাঁচটিতে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। আগামী এক বা দুই বছরে এর বাইরে কাজ করবে না বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এ তথ্য জানিয়েছেন বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। তিনি বলেন, ২০২৬ সালের মধ্যে আরো ১৩৩ বিনিয়োগকারীর মাধ্যমে সাড়ে পাঁচ শ’ কোটি ডলার বিনিয়োগ আনার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে প্রায় ২ লাখ ৩৮ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আমরা আশা করছি।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বেজা অডিটোরিয়ামে আয়োজিত মিট দ্য প্রেসে গতকাল তিনি এসব তথ্য জানান। বেজার এ পর্যন্ত নেয়া কার্যক্রম ও অগ্রগতির ওপর তিনি একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনের মাধ্যমে এইসব তথ্য তুলে ধরেন।
নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, এক শ’ অর্থনৈতিক জোনের এখন দরকার আছে কি না সন্দেহ। পাশাপাশি সরকারের ক্ষমতাও আছে কি না সেটা দেখতে হবে। আমরা অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়ন করেছি, যেখানে প্রাথমিকভাবে পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চল হলো, জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল, জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল, মহেশখালীর অর্থনৈতিক অঞ্চল ও জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল। অবকাঠামো ও ইউটিলিটি সেবা নিশ্চিত করতে সময়সীমার পরিকল্পনা করেছি। তিনি বলেন, পাশাপাশি আরো পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চলকে অর্থাৎ সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, চাইনিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল, চাঁদপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল, কুড়িগ্রাম অর্থনৈতিক অঞ্চল ও কুষ্টিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলকে সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় রাখা হয়েছে, যা বিভিন্ন সমীক্ষা শেষে পর্যায়ক্রমে উন্নয়ন করা হবে।
তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, বেজার আওতাধীন ১৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং ১২২টি শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কার্যক্রম বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। বেজা ইতোমধ্যে সাত হাজার একরের বেশি জমি বিনিয়োগকারীদের অনুকূলে বরাদ্দ প্রদান করেছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার। এ পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকার সমমূল্যের পাঁচটি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এসব প্রকল্পে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ২৭ শ’ কোটি টাকা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক অঞ্চলের জমি অধিগ্রহণের কাজে ব্যয় হয়েছে। তিনি বলেন, অবশিষ্ট টাকা অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে ব্যয় হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ৮৩টি বিনিয়োগকারী ছাড়া বাইরের সবচেয়ে বেশি চীনের ১১টি। এরপর জাপান ছয়টি ও যুক্তরাজ্যের চারটি। এ ছাড়াও ৯টি দেশের বিনিয়োগকারী রয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, নীতিমালার দফায় দফায় পরিবর্তন, সরকারি সেবার মান কম, মিরসরাই জোনে পানির সমস্যা, বিভিন্ন সেবা সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। মিরসরাইয়ে শ্রমিক সঙ্কট রয়েছে। কারণ সেখানে আবাসনের সমস্যা। তিনি বলেন, সব বিনিয়োগকারী জমি নিয়েছে কিন্তু যেকোনো কারণেই হোক কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। তাদের শিল্প নির্মাণে উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে এবং তাদের বিনিয়োগ পরিকল্পনা বেজাকে অবহিত করার জন্য বলা হয়েছে। যদি এসব বিনিয়োগকারীরা আমাদের পরিকল্পনার সাথে মিল রেখে শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণে উন্নয়নকাজ শুরু করতে অপারগ হন, তাহলে তাদের জমি বেজার নিকট ফেরত দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমরা সফলতা পেতে শুরু করেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, এক শ’টি অর্থনৈতিক জোন বন্ধ বা বাতিল করার কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। আমরা অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে কাজ করছি। তিনি বলেন, বেজার মালিকানাধীন অব্যবহৃত জমিতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগের অংশ হিসেবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ শুরু করেছি। এ ছাড়া জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল শ্রমিকদের আবাসিক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ফেনী নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।