০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১, ৭ রজব ১৪৪৬
`
অবৈধ সম্পদ অর্জন

সস্ত্রীক দুদকের জালে মোস্তাফিজুর শিমুল ও ছাগলকাণ্ডের মতিউর

-


দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, শফিকুল ইসলাম শিমুল এবং কোরবানির ঈদে ছেলের ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান, তার স্ত্রী ও সন্তানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল দুদকের ঢাকার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে তাদের বিরুদ্ধে পৃথক সাতটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো: আক্তার হোসেন।
তিনি জানান, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে চট্টগ্রাম-১৬ আসনের সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও তার স্ত্রী শাহীন আক্তার চৌধুরী এবং নাটোর-২ আসনের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল ও তার স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান, তার স্ত্রী ও সন্তানের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
দুদকের মহাপরিচালক বলেন, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নিজ নামে ৯৮ লাখ ৬৭ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন করেছেন। এ ছাড়া ৯টি ব্যাংকের ২১টি হিসাবের মাধ্যমে ১৮ কোটি ৭৫ লাখ ৯৮ হাজার ৫৮০ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন।

এ ছাড়া শাহীন আক্তার চৌধুরীর নামে ২ কোটি ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন করেছেন। পাঁচটি ব্যাংকের ৬টি হিসাবের মাধ্যমে ৩ কোটি ১৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন।
গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর মোস্তাফিজুরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। গত ১ জানুয়ারি মোস্তাফিজুর ও শাহিন আকতারের চারটি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেয় আদালত।
অন্য দিকে, নাটোর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল ও তার স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুদক।
শিমুলের বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ৫ কোটি ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৯ টাকার সম্পদ অর্জন করে ভোগদখলে রাখা এবং নিজ নামীয় ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক ১১টি হিসাবের মাধ্যমে মোট ৮ কোটি ১১ লাখ ৭৮ হাজার ২০৫ টাকা জমা ও ৭ কোটি ৫০ লাখ ৫০ হাজার ৬০২ টাকা উত্তোলনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি মোট ১৫ কোটি ৬২ লাখ ২৮ হাজার ৮০৭ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন করেছেন বলে মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

পৃথক মামলায় শিমুলের স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতীকে আসামি করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ১১ কোটি ২২ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন করে ভোগদখলে রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া নিজ নামীয় ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক চারটি হিসাবের মাধ্যমে মোট ৫ কোটি ২৯ লাখ ২ হাজার ৬৬ টাকা জমা ও ৫ কোটি ১৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। তার বিরুদ্ধে মোট ১০ কোটি ৪৩ লাখ ৯১ হাজার ৪৯৬ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, শামীমা সুলতানা জান্নাতীর নামে ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি প্রায় ১৭ লাখ ২৫ হাজার কানাডিয়ান ডলারে কানাডার টরেন্টোর ৭৩, হেয়ারউড অ্যাভিনিউয়ে একটি বিলাসবহুল বাড়ি কেনা হয় বলে আমরা জানতে পেরেছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশী টাকায় একচেঞ্জ রেট অনুযায়ী বাড়িটির ক্রয়মূল্য আনুমানিক ১১ কোটি টাকা। ওই বাড়িটির মালিকানা সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র সংগ্রহের জন্য কার্যক্রম চলমান রয়েছে। শামিমা সুলতানা জান্নাতীর নামে কেনা বাড়ির কোনো তথ্য বা রেকর্ডপত্র সংগ্রহপূর্বক তা তদন্তকালে আমলে নেয়া হবে। তবে এ দম্পতির সম্পদ অর্জন ও ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের সময়কাল জানাননি তিনি। গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর সাবেক এমপি শিমুলের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক।

অপর দিকে কোরবানির ঈদে ছেলের ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান, তার স্ত্রী ও সন্তানের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের বিরুদ্ধে ১২৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ, ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণব ও মেয়ে ফারজানা রহমানের বিরুদ্ধে পৃথক আরো তিনটি মামলা করেছে দুদক।
দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো: আক্তার হোসেন বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে সম্পদের হিসাব চেয়ে দুদক থেকে নোটিশ করা হয়েছিল। পরে তাদের দেয়া সম্পদ বিবরণী যাচাই-বাছাই ও অনুসন্ধানে তাদের বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।
কয়েক দিন আগে মতিউর রহমান ও তার স্ত্রীর লায়লা কানিজের বিরুদ্ধে প্রায় ১৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এ ছাড়া মতিউর রহমান ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবলীর বিরুদ্ধে ১১ কোটি ১৮ লাখ ৮৬ হাজার ১২০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুই মামলা দায়ের করা হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement