রাষ্ট্র সংস্কারে কাজ করছে ১১ ছায়া সংস্কার কমিশন
- ঢাবি প্রতিনিধি
- ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:১৯
টেকসই রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ হিসেবে চার মাস ধরে কাজ করে যাচ্ছে ১১টি ছায়া সংস্কার কমিশন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এসব কমিশন কাজ করছে।
গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পলিটিক্যাল অ্যান্ড পলিসি সায়েন্স রিসার্চ ফাউন্ডেশন (পিএসআরএফ) এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আয়োজনে এসব ছায়া সংস্কার কমিশনগুলোর চতুর্থ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালা সঞ্চালনা করেন ছায়া সংস্কার কমিশনের আহ্বায়ক এবং ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাসিমা খাতুন।
ছায়া সংস্কার কমিশনের আহ্বায়ক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, টেকসই রাষ্ট্র সংস্কার উদ্যোগ হিসেবে ১১টি ছায়া কমিশন গঠন করা হয়েছে। এগুলো সরকারের সংস্কার কমিশনগুলোর বিকল্প হিসেবে কাজ করছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে যেন কতৃত্ববাদী এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে সে জন্য এই ১১টি কমিশন স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘ মেয়াদে বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরবে।এভাবে বাংলাদেশকে নাগরিকবান্ধব একটি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সচেষ্ট থাকবে।
সরকারি কমিশনের বিপরীতে ছায়া সংস্কার কমিশনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার যে ধরনের সংস্কার কমিশন গঠন করেছে সেগুলোতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের সংশ্লিষ্টতা কম থাকায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এপ্রোচের প্রতিফলনের সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। তাই এই ছায়া সংস্কার কমিশনগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এবং বিদেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অধ্যয়নরত বাংলাদেশী এক্সপার্টদের সমন্বয়য়ে গঠন করা হয়েছে, যাতে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে তাত্ত্বিক ও বাস্তব বিষয়ের আশা আকাক্সক্ষার সম্মিলন ঘটে। এ ছাড়াও সরকারের গঠিত কমিশনের সাথে ছায়া কমিশনের মৌলিক পার্থক্যের জায়গা হলো সরকারের গঠিত কমিশনগুলো পৃথক পৃথক ভাবে কাজ করছে এবং কমিশনগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা থাকতে পারে অপর দিকে ছায়া সংস্কার কমিশনের ১১টি কমিশন একটি অপরটির সাথে সমন্বয় করে গত চার মাস ধরে কাজ করছে।
ছায়া সংস্কার কমিশনগুলোতে সরকারের গঠিত সংস্কার কমিশনের বাইরেও কিছু কমিশন তৈরি করা হয়েছে। যেমন রাজনৈতিক দলব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। উদ্যোক্তারা বলছেন, রাজনৈতিক দলের মধ্যে জবাবদিহিতার বিষয়টা একটি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয়। এতে করে জবাবদিহিতামূলক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। এটি মূলত করা হয়েছে নাগরিকবান্ধব রাজনৈতিক দল ব্যবস্থা প্রণয়ন করার জন্য। এ ছাড়াও, দায়িত্বশীল শাসন বিভাগের জন্য কমিশন গঠন করা হয়েছে। দায়িত্বশীল শাসন বিভাগ রাষ্ট্রে সুশাসন নিশ্চিত করবে। সবগুলো কমিশনের শুরুতেই ‘টেকসই’ উল্লেখ করা হয়েছে যা বাস্তবায়িত হলে টেকসই উন্নয়নের স্বপ্ন নিশ্চিত হবে।
ছায়া সংস্কার কমিশনের স্থায়িত্বকাল সম্পর্কে বলা হয়েছে, যেহেতু যতদিন রাষ্ট্র থাকবে ততদিন সংস্কার থাকবে, সেহেতু কমিশনগুলোর অভিজ্ঞতা দীর্ঘ মেয়াদে কাজে লাগবে। তবে ছায়া সংস্কার কমিশনের স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা হলো কমিশনগুলো সমন্বিতভাবে সুপারিশ তৈরি করে জাতীয় সেমিনার ও প্রেস কনফারেন্সর মাধ্যমে জাতিকে অবহিত। এখন পর্যন্ত ৪টা কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পঞ্চম কর্মশালার পরে সংক্ষিপ্ত আকারে একটি জরিপ হবে। জরিপের উপর ভিত্তি করে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় পর্যায়ে সেমিনার মাধ্যমে চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি হবে। সেই রিপোর্টটি সরকারের ঐক্যবদ্ধ কমিশনের কাছে হস্তান্তর করা হবে। অতঃপর মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে সরকারের সংস্কার কমিশনগুলো এবং ছায়া সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ সরকার কতটা বাস্তবায়ন করেছে তা পর্যবেক্ষণ করা হবে।
কর্মশালায় উল্লেখ করা হয়, রাষ্ট্র সংস্কার যেহেতু দীর্ঘ মেয়াদি প্রক্রিয়া, তাই ছায়া কমিশনগুলোর দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনাও রয়েছে। দীর্ঘ সময়ে সংস্কার কমিশনগুলোর নিজস্ব এরিয়াতে জাতীয় প্রয়োজনে এবং সঙ্কটে এক্সপার্ট অপিনিয়ন দেবে। উদাহরণস্বরূপ, নির্বাচন নিয়ে জটিলতা দেখা দিলে ছায়া নির্বাচন সংস্কার কমিশন কাজ করবে। প্রাথমিকভাবে ২০ বছরের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে ছায়া সংস্কার কমিশন কাজ করছে।
ঢাবি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাসিমা খাতুন বলেন, রাষ্ট্র সংস্কার রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করা উচিত। বর্তমান সময়ে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য এ ছায়া সংস্কার কমিশনগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কর্মশালায় এক্সপার্ট হিসেবে বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাবি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, ড. এস এম আলী রেজা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মেজবা-উল-আযম সওদাগর, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী হাসান সোহাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ রেজওয়ান হোসাইন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সানভিন ইসলাম, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহনেওয়াজ এবং বপ্রন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাদিয়া আফরিন।