০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১, ৬ রজব ১৪৪৬
`
এসএসসিতে আবারো বাতিল হচ্ছে বিভাগ বিভাজন

শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে ৩ বিভাগের সব বিষয়

-

আগামী এক বা দুই বছরের মধ্যেই আবারো উঠে যাচ্ছে বিভাগ নির্বাচন প্রক্রিয়া। নবম শ্রেণীতে বিজ্ঞান বাণিজ্য কিংবা মানবিক নামে আলাদাভাবে এই তিন বিভাগ আর থাকছে না। এসএসসি পর্যন্ত মূল ছয়টি বিষয় আবশ্যিক রেখে বাকি চারটি বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিভাগের কোনো বাধ্যবাধকতাও থাকবে না। অর্থাৎ বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত, আইসিটি, বিজিএস ও ধর্ম বিষয় আবশ্যিক রেখে বাকি চারটি বিষয় যে কোনো বিভাগ থেকেই নির্বাচন করার স্বাধীনতা পাবে শিক্ষার্থীরা। বাকি বিষয়গুলোর মধ্যে তিনটি বিষয় তারা যেকোনো গ্রুপের (নৈর্বাচনিক) বিষয় থেকেই বাছাই করতে পারবে। এমনকি ঐচ্ছিক বা চতুর্থ বিষয় হিসেবেও উচ্চতর গণিত, কৃষি শিক্ষা কিংবা অন্য যে কোনো বিষয়ই যেকোনো শিক্ষার্থী নির্বাচন করতে পারবে।
অর্থাৎ নতুন এই নিয়ম চালু হওয়ার পর এসএসসি পর্যায়ে (নবম ও দশম শ্রেণীতে) তিন বিভাগের যেকোনো বিষয়ই যে কোনো শিক্ষার্থী পড়ার জন্য নির্বাচন করতে পারবে। একইভাবে উচ্চমাধ্যমিকেও অর্থাৎ একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট বিভাগের বাইরে গিয়ে তাদের পছন্দের যেকোনো বিষয়ই নির্বাচন করতে পারবে। এই পদ্ধতি প্রবর্তনের ফলে অনার্স পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থীকে শুধুমাত্র বিভাগের কারণে তার আগ্রহ বা পছন্দের বিষয়ে পড়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হবে না।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এর (এনসিটিবি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকেই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে। তবে যেহেতু বিষয়টি একেবারেই নতুন তাই এটি বাস্তবায়নের আগে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সাথে আলোচনা এবং সুবিধা -অসুবিধা মিলিয়ে কি কি সমস্যা সামনে আসতে পারে সেগুলো নিয়েও বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে নতুন এই বিষয়টি চালু হলে এ বছরের মতো বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ বলে আলাদা নামে বিভাগ থাকবে না। একজন শিক্ষার্থী তার ক্যারিয়ার পরিকল্পনা অনুযায়ী চাইলে বাধ্যতামূলক বিষয়গুলোর বাইরে পদার্থ, রসায়ন বিষয়ের পাশাপাশি অর্থনীতি বা অন্যান্য বিষয় বাছাই করে পড়তে পারবে।
সূত্র জানায়, ২০২২ এর নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে গত বছর (২০২৪) নবম শ্রেণী থেকে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ তুলে দেয়া হয়েছিল। তবে এই প্রক্রিয়ায় বিষয় নির্বাচনের কোনো স্বাধীনতা ছিল না। সব শিক্ষার্থীকে বাধ্যতামূলক ১০টি অভিন্ন বিষয় পড়তে হতো। পরিকল্পনা ছিল দশম শ্রেণী পর্যন্ত সবাইকে অভিন্ন বিষয় পড়িয়ে একাদশ শ্রেণীতে গিয়ে বিভাজন হবে। এ ক্ষেত্রে উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার বিষয়গুচ্ছ থাকবে। তবে কেউ বিভাগের বিষয়গুচ্ছকে প্রধান হিসেবে নিয়ে যদি মনে করে তার অন্য বিষয়েও আগ্রহ আছে, তাহলে সে রকম বিষয় নেয়ারও সুযোগ দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছিল। অবশ্য এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনাও ছিল।

অবশ্য গত বছরের ৫ আগস্টে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নতুন শিক্ষাক্রম বাদ দেয়া হয়েছে। পুরনো শিক্ষাক্রমের আলোকে গত বুধবার শুরু হওয়া নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকে আবারও নবম শ্রেণীতে বিভাজন চালু হয়েছে। এতে একজন শিক্ষার্থী সেই পুরনো ব্যবস্থার মতো বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পড়বে, যেখানে বাধ্যতামূলক বিষয়ের পাশাপাশি বিভাগভিত্তিক নৈর্বাচনিক তিনটি বিষয় নেবে। এর পাশাপাশি আরেকটি বিষয় ঐচ্ছিক হিসেবে নেয়ার সুযোগ আছে।
এ বিষয়ে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান নয়া দিগন্তকে বলেন নতুন এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু হলে এসএসসিতে পড়ার জন্য মোট বিষয় থাকবে ১০টি। এর মধ্যে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি), ধর্ম বিষয়ের মতো পাঁচ থেকে ছয়টি বিষয় বাধ্যতামূলক রেখে বাকি বিষয়গুলো উন্মুক্ত রাখা হবে। বাকি বিষয়গুলো থেকে পছন্দ করে নির্ধারিত সংখ্যক বিষয় বাছাই করবে শিক্ষার্থীরা। আর এই বিষয়গুলো শিক্ষার্থীরা যেকোনো বিভাগ থেকেই নির্বাচন করতে পারবে। এমনকি চতুর্থ বা ঐচ্ছিক বিষয়টি তারা যে কোনো বিভাগ থেকেই চয়েজ করতে পারবে।

অবশ্য নতুন বিষয়টি আলোচনায় আসে গত ১ জানুয়ারি ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে অন্তর্র্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছিলেন আমরা চিন্তা করছি কিছু বিষয় বাধ্যতামূলক রেখে অনেকগুলো বিষয়, যেগুলোকে বিজ্ঞান, মানবিক বা বাণিজ্য শাখা বলা হয়, এই শাখাগুলো তুলে দেয়া যায় কি না? তুলে দিয়ে সবগুলো বিষয়কে (শাখা বা বিভাগের বিষয়) ঐচ্ছিক করে দেয়া যায় কি না? যাতে শিক্ষার্থীরা মানবিকের বিষয়ের পাশাপাশি ইচ্ছা করলে বিজ্ঞানের বিষয় নিতে পারে। এতে ভবিষ্যতে সেই শিক্ষার্থী যেকোনো কিছু হতে পারবে। এর পর গতকাল এনসিটিবি থেকেই বিষয়টি নিয়ে পরিষ্কার করে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement