০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ পৌষ ১৪৩০, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৫
`

ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ৫৯ হাজার টন চাল আমদানি তবুও বাড়ছে দাম

-

দেশের ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে শুল্কমুক্ত সুবিধায় পাশের দেশ ভারত থেকে চাল আমদানির সুযোগ দেয় সরকার। গত দেড় মাসে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ৫৯ হাজার ৬৫ দশমিক ৮৮ মেট্রিক টন চাল আমদানি হলেও সাতক্ষীরার বাজারে দামের ওপর কোনো প্রভাব পড়েনি। বরং গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সাতক্ষীরার বাজারে প্রকারভেদে চালের দাম কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। এতে করে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের ক্রেতারা।
গতকাল সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড়বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকারভেদে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম কেজিতে চার-পাঁচ টাকা বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগে ২৮ জাতের যে চালের দাম কেজিতে ৬২-৬৪ টাকা ছিল, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৬৬-৬৮ টাক দরে। একইভাবে ৪৮-৫০ টাকার মোটা চাল ৫২-৫৪ টাকা, ৬৭-৬৮ টাকার মিনিকেট ৭২-৭৩ এবং ৮০ টাকার বাসমতি চাল বিক্রি হচ্ছে ৮৮-৯০ টাক কেজি দরে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত মাস দুয়েক আগে থেকে দেশে চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরের মতো সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে শুল্কমুক্ত সুবিধায় চাল আমদানির সুযোগ দেয় সরকার। দেশের ৯২টি প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে চাল আমদানির অনুমতি পায়। প্রতিষ্ঠানগুলো গত ১৩ নভেম্বর থেকে চাল আমদানি শুরু করে। এরপর ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক হাজার ৬২০টি গাড়িতে ভারত থেকে ৫৯ হাজার ৬৫ দশমিক ৮৮ মেট্রিক টন বিভিন্ন প্রকারের চাল আমদানি হয়। তারপরও বাজারে কমেনি দাম। বরং কেজিতে চার-পাঁচ টাকা বেড়েছে। চালের দাম না কমার পেছনে আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা একে-অপরকে দুষছেন।

বন্দরসংশ্লিষ্ট আমদানিকারকরা জানান, দেশের প্রায় ৪০টি প্রতিষ্ঠান ভোমরা বন্দর ব্যবহার করে ভারত থেকে চাল আমদানি অব্যাহত রেখেছে। শীর্ষ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো ১ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক হাজার ১৪৪টি গাড়িতে ভারত থেকে ৪১ হাজার ৯৯৭ দশমিক ৬৯ মেট্রিক টন চাল আমদানি করে।
সুলতানপুর বড়বাজারের খুচরা চাল ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন জানান, ভারতীয় আমদানিকৃত চাল আসার পরও বাজারে দেশী জাতের বিভিন্ন প্রকার চালের দাম কেজিতে চার-পাঁচ টাকা বেড়েছে। এক একসপ্তাহ ধরে চালের বাজার বাড়তি। বর্তমানে মোটা চাল প্রকারভেদে ৫২-৫৪ টাকা, ২৮ চাল ৬৬-৬৮ টাক, মিনিকেট ৭২-৭৩ টাকা ও বাসমতি চাল বিক্রি হচ্ছে ৮৮-৯০ টাক কেজি দরে। গত এক সপ্তাহ আগে এসব চালের দাম কেজিতে চার-পাঁচ টাকা কম ছিল। আমরা পাইকারি বাজার থেকে চাল কিনে এনে কেজিতে এক-দুই টাকা লাভে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি। কিন্তু সপ্তাহের ব্যবধানে হঠাৎ করে দাম বাড়ায় আমরা ক্রেতাদের কাছে কৈফিয়ত দিতে পারছি না। অনেকে চাল কিনতে এসে ঝগড়াও করছেন। কিন্তু আমাদেরতো কিচু করার নেই। কেনার ওপর সামান্য লাভে আমরা চাল বিক্রি করে থাকি।
এ দিকে সুলতানপুর বড়বাজারে চাল কিনতে আসা ক্রেতারা বলছেন, দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে মাসিক আয়ের বড় অংশ খাবার কিনতে ব্যয় হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটি চালের দাম কেজিতে চার/পাঁচ টাক বেড়েছে। বাজারে সবজির দাম কমলেও বাড়ছে চালের দাম। ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণ চল আমদানির পরও বাজারে তার কোনো প্রভাব পড়ছে না; বরং দিনে দিনে দাম আরো বাড়ছে।

তারা বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
শহরের পলাশপোল এলাকার সিরাজুল ইসলাম বলেন, শুনছি ভারত থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল এসেছে; কিন্তু বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই। চালের মূল্য এখনো অস্বাভাবিক। কোনো পরিবর্তনও দেখা যাচ্ছে না। বরং দাম আরো বাড়ছে। প্রতিটি চালের দম কেজিতে চার/পাঁচ টাকা বেড়েছে।
তবে বড়বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্যাসহ নানা কারণে ধানের উৎপাদন কম হওয়ায় চালের সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। বাজারে ধানের দাম বেশি। মিলের মালিকরা চালের দাম না কমালে আমরাও কমাতে পারব না। ভারত থেকে আমদানি করা চাল ৫০ টাকার ওপরে কেনা পড়ছে। তাহলে পরিবহনসহ নানা খরচ যুক্ত করে কত টাকায় বিক্রি করব?
মিলের মালিক অব্দুল গফুর সরদার বলেন, ধানের দাম বেশি হওয়ায় আনুপাতিক হারে চালের দামও বেশি। এ ছাড়া ভারতীয় আমদানি করা চাল সব ক্রেতা কিনছে না। বাজারে বর্তমানে যে পরিমান চাহিদা সে তুলনায় চালের আমদানিও কম। মজুদ না বাড়লে বাজারে চালের দাম কমবে না।
ভোমরা স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু হাসান বলেন, ভোমরা বন্দর দিয়ে নিয়মিত চাল আমদানি অব্যাহত রয়েছে। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী চাল আমদানি করছেন আমদানিকারকরা। তবে দেশের বাজারে ধানের দাম বৃদ্ধি ও স্থানীয় সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে চালের দাম কমছে না। এ জন্য প্রশাসনের বাজার মনিটরিং করতে হবে।
ভোমরা স্থলবন্দর কাস্টমের এআরও রাসেল বলেন, শুরু থেকেই ভোমরা বন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি অব্যাহত আছে। গত ১৩ নভেম্বর থেকে চলতি ডিসেম্বর মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত এক হাজার ৬২০টি গাড়িতে ভারত থেকে ৫৯ হাজার ৬৫ দশমিক ৮৮ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ডিসেম্বর মাসের ১ তারিখ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত এক হাজার ১৪৪ গাড়িতে ৪১ হাজার ৯৯৭ দশমিক ৬৯ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়। বন্দর খোলা থাকলে প্রায় প্রতিদিন ভারত থেকে চালের গাড়ি আসছে।
কাস্টমের ডেপুটি কমিশনার আবুল কালাম আজাদ জানান, সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দর থেকে ভারতের কলকাতার দূরত্ব কম হওয়ায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এ বন্দর ব্যবহার করে থাকেন। এতে করে পণ্য পরিবহনে খরচ সাশ্রয় হয়। প্রায় প্রতিদিনই আমদানি হচ্ছে বড় পরিমাণের চালের চালান।

 


আরো সংবাদ



premium cement