০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ পৌষ ১৪৩০, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৫
`

অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত ও অবসরে পাঠানো সামরিক সদস্যদের সড়ক অবরোধ

-


ঢাকা সেনানিবাসের জাহাঙ্গীর গেটে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে আওয়ামী সরকারের আমলে সামরিক বাহিনীর চাকরিচ্যুত ও জোর করে অবসরে পাঠানো সদস্যরা। গতকাল রোববার সকাল থেকে বিপুলসংখ্যক সদস্য চাকরি পুনর্বহাল, পেনশনসহ তিন দফা দাবি নিয়ে জাহাঙ্গীর গেটের সামনের অবরোধ পালন করেন। এ সময় ওই সড়কে সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে বিপুল পরিমাণ পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। এক পর্যায়ে তাদের দাবি পর্যালোচনা ও কমিটি গঠনের আশ্বাসে সড়ক ছাড়লে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত ও জোর করে অবসরে পাঠানো সেনা সদস্যরা সকাল থেকে জড়ো হতে থাকেন জাহাঙ্গীর গেটের সামনে। দুপুর ১২টার দিকে এ সড়ক অবরোধ শুরু করেন তারা। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চলা অবরোধে আশপাশের সব সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। তবে তাদের দাবি পর্যালোচনা করা হবে বলে সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা আশ্বাস দেন। এজন্য একটি কমিটিও গঠন করা হবে বলে জানান। এরপর দুপুর ১টার দিকে আন্দোলনকারীরা অবরোধ তুলে নেন।
বিক্ষোভকারীদের তিন দফা দাবিতে বলা হয় ‘সামরিক বাহিনী থেকে যাদের অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তাদের পুনর্বহাল করা। যাদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে না পারবে, তাদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা করা এবং সেনাবাহিনীর বিদ্যমান চাকরি বিধিমালা বা আইন সংস্কার করা।
অবস্থান কর্মসূচি পালন শেষে ‘সহযোদ্ধার’ প্রধান সমন্বয়ক মো: নাইমুল ইসলাম বলেন, তিন বাহিনীকে আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিতে হবে। বিগত সরকারের আমলে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আমাদের চাকরিচ্যু করা হয়েছিল। অনেককে জোরপূর্বক অবসরে পাঠানো হয়েছে। আমরা আমাদের দাবি আদায়ে সোচ্চার রয়েছি।

‘সহযোদ্ধার’ নৌবাহিনীর সমন্বয়ক মো: আব্দুল হাকিম বলেন, বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন অজুহাতে প্রায় ৩৫০ জন অফিসার, ৬০০ জন সৈনিককে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত ও অবসরে পাঠানো হয়েছে। এখন তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তিনি বলেন, সামরিক বাহিনীর নিয়ম রয়েছে- কাউকে চাকরিচ্যুত বা অবসরে পাঠানো হলে তিনি পুনর্নিয়োগের আবেদন করতে পারবেন না। এ নিয়ম ব্রিটিশ আইনে রয়েছে। আমরা আইনটির সংস্কারে আবেদন জানিয়েছে। পুলিশসহ সরকারের অন্য যেকোনো সংস্থা থেকে কাউকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হলে তার আবেদন বা আদালতে সুবিচার পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সামরিক বাহিনীতে এ সুযোগ নেই। মানবিক দিক বিবেচনা করে হলেও এ আইনের সংস্কার প্রয়োজন।
বক্তারা বলেন, আমরা আমাদের কষ্ট ও দাবিগুলো তুলে ধরতে গত ২১ আগস্ট ‘সহযোদ্ধা’ প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করি। আমরা গত ২৭ আগস্ট চাকরিচ্যুত সামরিক বাহিনীর সদস্যদের পক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা, সেনাপ্রধানের কাছে তিনটি দাবি জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। এ ছাড়া গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রায় সাড়ে তিনশো সদস্যের উপস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় নামের তালিকাসহ স্মারকলিপি জমা দিয়েছি। পরে আমরা ৫ অক্টোবর রাওয়া ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছি। এ সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ উপস্থিত ছিলেন।
তারা বলেন, সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে আমরা সব কার্যক্রম অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করেছি এবং অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানসহ তিন বাহিনী প্রধানকে অবগত করার পরও ওনারা আমাদের প্রতি দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেননি। তাই আমরা তিনদফা দাবি নিয়ে সপরিবারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি।

 


আরো সংবাদ



premium cement