আলিফ হত্যার তদন্ত সঠিক পথে এগোচ্ছে না
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১২
চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডের শুরু থেকে মামলা দায়ের, তদন্ত- কোনোটিই সঠিক পথে এগোচ্ছে না এবং এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আগের মতোই সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি।
গতকাল রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত ‘চট্টগ্রামে আইনজীবী আলিফ হত্যাকাণ্ড পরবর্তী পরিস্থিতি সরেজমিন পরিদর্শন : পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাব’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করে তারা।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। তিনি বলেন, মামলা দায়ের ও তদন্ত প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালিত না হওয়ায় আমরা বিস্মিত। মামলাগুলোতে গণহারে আসামি করা ও তদন্ত পরিচালনা পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ করে আমাদের মনে হয়নি, এই হত্যার সঠিক বিচারের প্রশ্নে এর সাথে যুক্ত বিভিন্ন বিভাগ আন্তরিক।
তিনি বলেন, আমরা চট্টগ্রামে পরিদর্শন শেষে ঢাকায় ফেরার পরে স্থানীয় থানার একজন এসআই সেবক পল্লীতে গিয়ে হরিজনদের হুমকি দিয়ে এসেছেন এবং বলেছেন যে, তারা যদি প্রকৃত অপরাধীদের ধরিয়ে দেয় তবে যে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তিনি তাদের ছাড়ানোর ব্যবস্থা করবেন। হিন্দুধর্মাবলম্বী সাধারণ মানুষজনও গ্রেফতার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের শুরু থেকে মামলা দায়ের, তদন্ত কোনোটিই সঠিক পথে এগোচ্ছে না এবং এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আগের মতোই সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরো সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে বলে কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, হরিজনদের মধ্যে কেউ যদি হত্যাকাণ্ডের সাথে যুক্ত থাকে, যদি তা তদন্তে প্রমাণিত হয়- তাহলে বিচার হতে হবে। কিন্তু যেভাবে গোটা সেবক কলোনিকেই হত্যাকারী হিসেবে দেখা হচ্ছে, সেবক কলোনি উচ্ছেদের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, কোর্ট বিল্ডিংয়ে চাকরিরত সেবকদের (হরিজনদের) ছাঁটাই করা হচ্ছে, সিটি করপোরেশনের বাইরে যারা বিভিন্ন ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তাদেরও একই অজুহাতে ছাঁটাই করা হচ্ছে- তা গোটা সম্প্রদায়কেই হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে।
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া পাঁচ দফা প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, আইনজীবী আলিফ হত্যার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে স্বার্থান্বেষীদের ফায়দা লুটতে দেয়া চলবে না। কোর্ট প্রাঙ্গণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও ভাঙচুরের ঘটনার সঠিক তদন্ত করতে হবে। এই ঘটনায় উসকানিদাতাদের খুঁজে বের করতে হবে। হরিজনদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। যথাযথ প্রক্রিয়ায় তদন্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, ঘটনার সময়ের সিসিটিভি ফুটেজগুলো পরীক্ষা করতে হবে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। গণগ্রেফতার ও গ্রেফতার বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে এবং চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ সব অভিযুক্ত এবং আটক ব্যক্তির বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা ও তাদের আইনজীবীরা যাতে আদালতে জামিনের আবেদনসহ সব ধরনের আইনি পদক্ষেপ নির্বিঘেœ নিতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।
আলিফ হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, কিছু গোষ্ঠীর স্বার্থ বা পরিস্থিতি তৈরির কিছু শঙ্কা দেখতে পাচ্ছি। অজ্ঞাতনামা আড়াই হাজার ব্যক্তির নামে মামলা দেয়া হয়েছে, ব্যাপক একটা হয়রানি চলছে। পুলিশের গ্রেফতার বাণিজ্য, হয়রানি এখনো চলছে। এতে সাম্প্রদায়িক একটা দিকও আছে। এর পেছনে একটা গোষ্ঠীও আছে।
নতুন বাংলাদেশে সুষ্ঠু বিচার হতে হবে জানিয়ে আইনজীবী মানজুর আল মতিন বলেন, শুধুমাত্র হরিজন হওয়ার কারণে বা ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে কারো বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত নয়। সুষ্ঠু তদন্তের অনেক উপাদান রয়েছে। শহীদ আলিফের মৃত্যুকে যেন রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার না হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল বৈষম্য বিলোপ করা। কিন্তু পাঁচ মাস পরে এসে দেখছি, শুধু ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে অনেকেই বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বৈষম্যকে ব্যবহার করে নতুন করে নাগরিকদের অধিকার হরণ করা হোক তা চাই না। এখনো যারা বিচার পাচ্ছেন না তাদের বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করাই হবে নতুন বাংলাদেশের রাজনীতি।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির হারুনুর রশীদ, সীমা দত্ত প্রমুখ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা