নতুন চাল বাজারে এলেও বাড়ছে দাম
করপোরেট নিয়ন্ত্রিত সিন্ডিকেট সৃষ্টি করছে অস্থিরতা- নূরুল মোস্তফা কাজী, চট্টগ্রাম ব্যুরো
- ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
আমন মৌসুমের নতুন চাল বাজারে এসেছে। আবার আমদানি পর্যায়ে শুল্ক প্রত্যাহার করায় বিদেশ থেকেও আমদানিকৃত চাল দেশে এসেছে। কিন্তু কোনো কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না চালের বাজার। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছে, বিভিন্ন করপোরেট হাউজ নিয়ন্ত্রিত অটো চালকল মালিকদের সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট চালের বাজার অস্থির করে রেখেছে। ফলে চাল কিনতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস যেমনি উঠছে, তেমনি সরকারের বিরুদ্ধে জনমনে ক্ষোভ বাড়ছে।
ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, প্রতিদিনই হু হু করে বাড়ছে চালের দাম। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর হতে বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) ৩০০-৪৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মোটা ইরি চালও বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ টাকা দরে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি প্রচলিত মিনিকেট চালের ৫০ কেজি বস্তা ৩৪২০ টাকা, যা আগে ছিল ৩০০০ টাকা। বর্তমানে প্রতি কেজি ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ২৮ বেতি চাল প্রতি কেজি ৬৮ টাকা এবং ৫০ কেজি বস্তা ৩৪০০ টাকা, যা আগে ছিল ৩০০০-৩০৫০ টাকা, মোটা ইরি চাল ৫০ কেজি বস্তা ২৩৫০ টাকা, যা আগে ছিল ২০০০ টাকা, বিভিন্ন ব্রান্ডের কাটারি ভোগ চাল ৫০ কেজি বস্তা ৪১ শ’ টাকা যা আগে ছিল ৩৬৫০ টাকা, নবান্ন ও ডায়মন্ড ব্রান্ডের জিরা সিদ্ধ চাল ৫০ কেজি বস্তা ৩৮৫০-৩৯ শ’ টাকা যা আগে ছিল ৩৬ শ’ টাকা, নাজিরশাইল চাল ৫০ কেজি বস্তা ৪১ শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যা আগে ছিল ৩৮ শ’ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বৃহৎ অটোমেটিক রাইসমিলের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে দেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ছোট ও মাঝারি চালকলের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বড় অটোমেটিক চালকলগুলোর হাতে চলে যায় পুরো চালের বাজারের নিয়ন্ত্রণ। মূলত করপোরেট হাউসগুলোর সাথে যোগসাজশে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করছে তারা এমন অভিযোগ রয়েছে। এসব অটো চালকল মালিকরা যখন যে দাম ঠিক করে, সেই দামেই মিলগেইট, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে চাল বিক্রি হয় বলে সূত্র জানায়। গত আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরও চালকলগুলোর সেই সিন্ডিকেট এখন পর্যন্ত বহালতবিয়তে বলেই মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। ফলে বড় কোম্পানিগুলো ধান মজুদ করে রেখে সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষ সৃষ্টিতে তারা কলকাঠি নাড়ছেন বলেও সূত্রের দাবি। তাই মজুদদারদের বিরুদ্ধে এখনই সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ী দিদারুল আলমের মতে, বিগত ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময়ও সংঘবদ্ধ চক্র কারসাজি করে চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিয়ে তৎকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছিল। তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, আমদানি শুল্ক তুলে নিয়েছে, নতুন চাল বাজারে এসেছে, তার পরও কেন দাম বাড়ছে? এই ব্যবসায়ী মনে করেন, করপোরেট হাউসগুলোর প্যাকেটজাত চাল ব্যবসা বন্ধ করতে হবে, সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট ভাঙতে এখনই মনযোগী হতে হবে সরকারকে। নইলে ওয়ানইলেভেন সরকারের ন্যায় বর্তমান সরকারও জনসমর্থন হারাবে। সরকার চালের বাজার সামাল দিতে শুল্কমুক্ত সুবিধায় চাল আমদানির জন্য ইতোমধ্যে এক শ’র কাছাকাছি আমদানিকারককে অনুমতি দিয়েছে। প্রায় ৭৫ হাজার মে: টন চাল ইতোমধ্যে দেশেও এসেছে। কিন্তু দাম বরং উল্টো বাড়ছে।