২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

একচেটিয়া ব্যবসায় টিকতে পারছেন না প্রান্তিক খামারিরা

পোলট্রি শিল্প
-


বাজারে সরকারনির্ধারিত দামে ডিম ও মুরগি বিক্রি না হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই। ভোক্তারা অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে ডিম ও মুরগি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন বা তারা ক্রয়ের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। প্রান্তিক খামারিদের অভিযোগ ফিড, মুরগির বাচ্চা এবং অন্যান্য উপকরণের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সরাসরি তাদের সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে কিন্তু তা দেখার কেউ নেই।
ডিম-মুরগির দাম বাড়লেই খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সরাসরি ভোক্তাদের ওপর প্রভাব ফেলে। মিডিয়া, সরকার এবং সাধারণ মানুষ এই বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। ডিম-মুরগির দামের পেছনের প্রকৃত কারণগুলো আলোচনায় আসে এবং তা অগোচরে থেকে যায়।
এর ফলে ৮ থেকে ১০টি কোম্পানির হাতে জিম্মি ফিড মুরগির বাচ্চাসহ পুরো পোলট্রি খাত ডিম মুরগির বাজারও নিয়ন্ত্রণ করেন এবং তাদের হাতে প্রান্তিক খামারিদের লাভের হিসাব-নিকাশ নির্ভর করে। করপোরেট গ্রুপগুলো চাচ্ছে প্রান্তিক খামারিদের হটিয়ে পোলট্রি বাজারকে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে আনতে। এ ধরনের অভিযোগ প্রান্তিক খামারিদের বহুদিনের।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অজুহাতে পোলট্রি ফিডের অন্যতম উপাদান ভুট্টা ও সয়াবিনের দাম বেড়ে গেছে বলে এবং নানা অজুহাত দিয়ে পোলট্রি ফিডের দাম গত দুই বছর আগে ৫০-৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়। বড় করপোরেট কোম্পানিগুলো আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাত দেখিয়ে দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু এই মূল্যবৃদ্ধির বোঝা সম্পূর্ণভাবে প্রান্তিক খামারিদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে পোলট্রি ফিড উৎপাদনের যত উপাদান আছে তার ভিতরে অন্যতম ভুট্টা ও সয়াবিন। ফিড উৎপাদনে ৬০ শতাংশ ভুট্টা ও ৩০ শতাংশ সয়াবিন প্রয়োজন হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে গত চার বছরে এ দু’টি উপাদানের দাম সর্বনিম্ন অবস্থান করলেও বাংলাদেশের বাজারে পোলট্রি ফিডের দাম কমেনি। করপোরেট কোম্পানিগুলো সবসময় সরকারসহ সব মহলকে অব্যাহত লোকসানের গল্প শোনালেও তাদের ফিডমিল হ্যাচারিগুলোর সংখ্যা ১০ থেকে ২০টি পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এগুলো সরকারের খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করে প্রান্তিক খামারিরা।

প্রান্তিক পোলট্রি শিল্পে চলমান অস্থিরতার অন্যতম কারণ হলো ফিড এবং মুরগির বাচ্চার অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি। যখন ডিম বা মুরগির দাম বাড়ে, তখন তা ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করে, কিন্তু ফিড ও বাচ্চার দাম বৃদ্ধির বিষয়ে কখনো কোনো আলোচনা হয় না। করপোরেট কোম্পানিগুলো ফিড এবং বাচ্চার দাম বাড়িয়ে সিন্ডিকেট তৈরি করে প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে, যার ফলে খামারিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বছরে ফিড ও মুরগির বাচ্চায় প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে, এবং এই লুটপাট সরকারের নজর এড়িয়ে যাচ্ছে। দেশের মোট ডিম ও মুরগি উৎপাদনের ৮০ শতাংশ সরবরাহ করেন প্রান্তিক খামারিরা।

২০২২ সাল থেকে পোলট্রি ফিডের দাম ৫০-৬০ শতাংশ বেড়েছে, যা খামারিদের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকার ডিমের ন্যায্যমূল্য ১০.৫৮ টাকা নির্ধারণ করলেও, খামারিরা বাজারে ৯-১০ টাকায় ডিম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন, এতে লোকসান দিয়ে তারা হয় খামার বন্ধ করছেন বা ঋণগ্রস্ত হচ্ছেন। বর্তমানে ১৫-২০ শতাংশ বড় করপোরেট কোম্পানির হাতে পুরো পোলট্রি শিল্প নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। ফিড মুরগির বাচ্চা উৎপাদনকারী শীর্ষ কোম্পানিগুলো মধ্যে ৮ থেকে ১০টি কোম্পানি। তারা ফিড এবং মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে মুনাফা করেছে, যার ফলে প্রান্তিক খামারিরা বাজারের চাপ সইতে পারছেন না। এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তারা প্রতি বছর হাজার কোটি টাকা মুনাফা করে।

ভোক্তাদের জন্যও ডিম ও মুরগির দাম বাড়ানো উদ্বেগজনক। যদি প্রান্তিক খামারিদের সঠিক মূল্য নিশ্চিত করতে সিন্ডিকেট ভাঙা যায়, তবে বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাবে এবং ভোক্তারা সাশ্রয়ী দামে মানসম্পন্ন পণ্য পাবেন। এজন্য দীর্ঘদিন ধরে খামারিদের দাবি হচ্ছে, ১. ফিড এবং মুরগির বাচ্চার দাম যৌক্তিক পর্যায়ে নামাতে হবে। ২. প্রান্তিক খামারিদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে এবং সরকারের ঘোষিত দাম বাস্তবায়ন করা নিশ্চিত করতে হবে। ৩. বড় করপোরেট কোম্পানির সিন্ডিকেট ভেঙে বাজারে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করতে হবে। ৪. প্রান্তিক খামারিদের সহজশর্তে ঋণ এবং ভর্তুকি সহায়তা প্রদান করতে হবে। ৫. ফিড এবং মুরগির বাচ্চার যৌক্তিক দাম বাস্তবায়ন করতে হবে। ৬. ডিম-মুরগির বাজারে অসাধু সিন্ডিকেট মুক্ত বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। ৭. সরকারিভাবে প্রান্তিক খামারিদের ডিম মুরগি ক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে ।

প্রান্তিক খামারিদের জন্য জামানতবিহীন ঋণসুবিধা প্রয়োজন, যা তাদের সহজে নতুন করে খামার চালু করতে সহায়তা করবে। এই ঋণের মাধ্যমে তারা উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্যনিরাপত্তা এবং পোলট্রি শিল্পের স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে পারবেন।
সরকারি নীতিনির্ধারণী মিটিংগুলোতে প্রান্তিক খামারিদের মতামত অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। যেখানে শুধুমাত্র করপোরেট কোম্পানির প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করে, সেখানে প্রান্তিক খামারিরা অংশগ্রহণ না করলে তাদের সমস্যাগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। সরকারের কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে সিন্ডিকেটের লাগাম টানতে হবে এবং প্রান্তিক খামারিদের রক্ষা করতে হবে।

বর্তমানে পোলট্রি শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে মূলত সিন্ডিকেটের কারণে, যা খামারিদের জন্য আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পোলট্রি শিল্পের এই বিশাল সঙ্কটে সরকারকে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে। সরকার যদি বাজারের অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়, তবে বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে এবং প্রান্তিক খামারিরা তাদের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবে। সরকারের উচিত সিন্ডিকেটের একচেটিয়া শক্তিকে ভেঙে বাজারে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা, যাতে পোলট্রি শিল্পের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা যায়। এই পদক্ষেপগুলো খামারি ও ভোক্তা উভয়ের স্বার্থ রক্ষায় সাহায্য করবে।

বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, আমরা সরকার এবং প্রান্তিক খামারিদের পাশে রয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্য পোলট্রি শিল্পে স্থিতিশীলতা আনা এবং প্রান্তিক খামারিদের জন্য সঠিক সহায়তা প্রদান করা। আমরা সরকারের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে প্রান্তিক খামারিরা তাদের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পারে। তিনি বলেন, সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘিত হলে, সব ফিড এবং মুরগির বাচ্চা উৎপাদনকারীদের কোম্পানির বিরুদ্ধে সরকারের উদ্বেগে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে, যাতে ডিম মুরগির বাজারসহ পোলট্রি শিল্পে স্থিতিশীলতা আসে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
অন্তর্বর্তী সরকারের উদারতা জাতিকে অনন্তকাল ভোগাবে : হাসনাত আব্দুল্লাহ সিরিয়ায় অতর্কিত হামলায় অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ কর্মকর্তা নিহত শিরোপা ধরে রাখতে প্রস্তুত শক্তিশালী বরিশাল মধ্য ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হাউছিদের সচিবালয়ের আগুন নেভাতে এত সময় লাগল কেন সচিবালয়ের আগুন নিয়ন্ত্রণে, এক গেট দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রবেশ কাপ্তাইয়ে ৪২ ঘণ্টা পর ভেসে উঠলো ২ বন্ধুর লাশ কুড়িগ্রামে খেজুর রসের ঐতিহ্যে ভাটা সচিবালয়ে আগুন : তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানালেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বান্দরবানে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগে সরকারের নিন্দা কুড়িগ্রামে আ.লীগ-ছাত্রলীগের ২ নেতা গ্রেফতার

সকল