বিদেশীসহ ৯ পাইলট বিমান ছেড়ে গেছেন
কক্সবাজার রুটে যাত্রীর সাথে বেড়েছে ফ্লাইটও- মনির হোসেন
- ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪১
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স থেকে বোয়িং ৭৭৭-এর অভিজ্ঞ দুইজনসহ মোট ৯ জন পাইলট চলে গেছেন। এর মধ্যে সাতজন ছিলেন বিদেশী। হঠাৎ করে তারা বিমান ছেড়ে যাওয়ায় অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক কয়েকটি রুটে ফ্লাইট অপারেশন নিয়ে বিমান কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বলাকা ভবন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি বিমানের বোয়িং-৭৭৭ ফ্লাইটের পাইলট ক্যাপ্টেন তাহমিদ ও ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ মারুফ চাকরি ছেড়ে দেন। তারা দুইজন বিমান ছেড়ে যাওয়ার পরপরই দেশের শীর্ষ বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে যোগ দেন। বিমান কর্তৃপক্ষের সাথে তাদের আর্থিক বিষয়ে বনিবনা না হওয়ার কারণেই তারা বিমান ছেড়ে চলে যান বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। শুধু বোয়িং ৭৭৭-এর পাইলটই নয়, এই সময়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুট সামাল দেয়া ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা সাতজন বিদেশী পাইলটও বিমান ছেড়ে চলে গেছেন। মূলত বেতন-ভাতা সংক্রান্ত বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে বনিবনা না হওয়ায় বিদেশী পাইলটরা চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে চলে গেছেন বলে জানা গেছে।
গত সোমবার দুপুরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাফিকুর রহমানের কাছে এ ঘটনার সত্যতা জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোন রিসিভ করেননি। পরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ কর্মকর্তা (মুখপাত্র) বোসরা ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে ৯ জন পাইলট বিমান থেকে চলে যাওয়ার বিষয়টি জানেন না বলে এই প্রতিবেদককে জানান। পরে তিনি জেনে বলেন, হ্যাঁ তারা বিমান থেকে চলে গেছেন। এর মধ্যে বোয়িং-৭৭৭-এর পাইলট তাহমিদ ও আব্দুল্লাহ মারুফ পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। অপরদিকে ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা সাত পাইলটের বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের সাথে বিমানের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় তারা চলে গেছেন। ৯ পাইলট হঠাৎ করে চলে যাওয়ায় ফ্লাইট পরিচালনায় সমস্যা হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিমানে তো পাইলটের সংকট আছেই। অনেক আগে থেকেই পাইলট সংকট সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে ৫৪ জন ক্যাডেট পাইলট নিয়োগে বিমান থেকে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। নিয়োগের কাজ চলমান আছে। তিনি বলেন, পাইলট সংকটের কারণে যারা অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করছেন তাদের ওভারটাইম দেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে ২১টি এয়ারক্রাফট রয়েছে। এর মধ্যে বোয়িং-৭৭৭ রয়েছে ৪টি, ড্রিমলাইনার রয়েছে ৬টি, কানাডার বোম্বাডিয়ার কোম্পানির তৈরি ড্যাশ-৮ ৫টি এবং বোয়িং-৭৩৭ রয়েছে ৬টি। এসব এয়ারক্রাফট দিয়ে অভ্যন্তরীণ রুটের কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেট, যশোর, রাজশাহী, সৈয়দপুর ছাড়াও আন্তর্জাতিক রুটের শারজাহ, আবুধাবী, দোহা, জেদ্দা, লন্ডন, ম্যানচেস্টার, কানাডা, রোম, জাপানসহ বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রকৌশল শাখা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ১৬২ সিটের ৬টি ৭৩৭-৮০০ বোয়িং এয়ারক্রাফটের মধ্যে ২টি এয়ারক্রাফট (লিজে আনার পর কিনে নেয়া এসটুএএফএম ও এসটুএএফএল) ৩-৪ মাস ধরে হ্যাংগারে পড়ে আছে। মেইনটেনেন্সের অজুহাতের কথা বলে এসব এয়ারক্রাফট সেখানে ফেলে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে বিমানের বহরে থাকা কানাডার বোম্বাডিয়ার কোম্পানির ৫টি ড্যাশ-৮-এর মধ্যে সব সময় একটি এয়ারক্রাফট হ্যাংগারে পড়ে থাকছে। যদিও অভ্যন্তরীণ রুটের মধ্যে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে যাত্রী সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়িয়ে এখন প্রতিদিন ৫টি করা হয়েছে।
গতকাল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অভিজ্ঞ একাধিক কর্মকর্তা (এভিয়েশন এক্সপার্ট) নয়া দিগন্তের কাছে নিজেদের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, আমাদের চাকরি জীবনের মধ্যে গত ২০ বছরে বিমান যেভাবে চলেছিল এখনো দেখছি সেভাবেই চলছে। কোনো পরিবর্তন নাই। স্বজনপ্রীতি যেন পিছু ছাড়ছে না। পুরনো বোর্ড আর নতুন বোর্ডের মধ্যে আমরা এখনো কোনো পার্থক্য দেখতে পারছি না। এক কথায় বলা চলে নতুনত্ব বলতে কিছু নেই। শুধু চেয়ারগুলোতে লোক পরিবর্তন হয়েছে। এখনো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বলাকা ভবন ও টার্মিনালে আওয়ামী লীগের তথা শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া প্রেতাত্মারা ঘাপটি মেরে রয়েছে। কোথাও কোথাও ছড়ি ঘুরাচ্ছে। অবাধে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। কমিশন বাণিজ্য চলছে। আর তারা কারা তা বিমানের বর্তমান বোর্ড চেয়ারম্যান এবং এমডির না জানার কথা নয়।