নীরব ঘোষণার পরও কমেনি বিমানবন্দর এলাকার শব্দদূষণ
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
নীরব ঘোষণার পরও হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় শব্দদূষণ কমেনি। উল্টো কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেড়েছে। গতকাল ঘোষিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে শব্দদূষণ একটি গুরুতর পরিবেশগত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, বিশেষ করে ঢাকা শহরের অধিকাংশ এলাকায় শব্দ গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি। শব্দের প্রধান উৎস হলো যানবাহন (হর্ন, ইঞ্জিন ও চাকার কম্পন), নির্মাণকাজ (ইট ও পাথর ভাঙার মেশিন, কলকারখানা, জেনারেটর এবং সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাইকিং। এসব কারণে দীর্ঘদিন রাজধানী ঢাকা মাত্রাতিরিক্ত শব্দ দূষণে ধুঁকছে। এরমধ্যে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণার পরও তাতে সফলতা আসেনি।
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার নয়া দিগন্তকে জানান, চলতি বছরে তারা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় চারটি স্থানে দুই ধাপে গবেষণা চালান। নীরব এলাকা ঘোষণার পর এ পরীক্ষা চালানো হয়। যার মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল প্রবেশ পথ, এয়ারপোর্ট মূল প্রবেশ পথ, লা মেরিডিয়েন হোটেল ও স্কলাস্টিকা স্কুল।
তার ভাষ্য তাদের ১০ সদস্যের একটি গবেষণা দল হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকা নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা কার্যকর হওয়ার আগের পাঁচ দিন অর্থাৎ ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে ঘোষণা কার্যকর হওয়ার পরের ৫ দিন ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিমানবন্দর এলাকায় বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিতে নির্ধারিত চারটি স্থান থেকে প্রথমবার শব্দ দূষণের ডেটা সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে ২৮ নভেম্বর ও ২ থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত পৃথক ৫ দিনে দ্বিতীয়বার একই স্থানে শব্দ দূষণের ডেটা সংগ্রহ করে। পরীক্ষার প্রথম ধাপ চলতি বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর এবং ১ অক্টোবর থেকে ৫ অক্টোবর। দ্বিতীয় ধাপ গবেষণা চালানো হয় ২৮ নভেম্বর ও ২ থেকে ৫ ডিসেম্বর।
স্বয়ংক্রিয় সাউন্ড লেভেল মিটারের সাহায্যে বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে প্রতিটিতে স্থানের দৈনিক ১৩ ঘণ্টার উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছিল। অর্থাৎ ৪টি স্থানে ১৫ দিনে সর্বমোট প্রায় ৫০০০ সংখ্যক উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে।
এতে দেখা যায়, নীরব এলাকা কার্যকরের আগের পাঁচ দিনের গড় শব্দমাত্রা ছিল ৮৭.৮১ ডেসিবল। কার্যকরের পরবর্তী পাঁচ দিনে এটি কমে ৮৬.৪৯ ডেসিবল হয়, অর্থাৎ ১.৩৩ ডেসিবল (১.৫১%) শব্দদূষণ হ্রাস পায়। আবার দুই মাস পর শব্দমাত্রা কার্যকরের আগের পাঁচ দিনের তুলনায় ০.৫১ ডেসিবল (০.৫৮%) কমে।
অপর দিকে নীরব এলাকা কার্যকরের পরবর্তী পাঁচ দিনে লা মেরিডিয়ান হোটেলের সামনে ৬.০১% এবং স্কলাস্টিকা ক্যাম্পাসে ১.৮৫% শব্দদূষণ কমেছে। আর বিমানবন্দরের মূল প্রবেশপথে ০.৯৪% এবং অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল প্রবেশপথে শব্দদূষণের মাত্রা ছিল ১.১৯%।
দ্বিতীয় দফায় দুই মাস পর দেখা যায়, লা মেরিডিয়ান হোটেলের সামনে শব্দদূষণ ৪.৪৬% এবং স্কলাস্টিকা স্কুল পয়েন্টে ১.০৫% হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু বিমানবন্দরের মূল প্রবেশপথে ০.৫৪% এবং অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল প্রবেশপথে বাড়তি মাত্র ছিলো ২.৯৭%।
যদিও নীরব এলাকা কার্যকরের পর প্রথম দিনে লা মেরিডিয়ান হোটেলের শব্দমাত্রা ছিল ৮৯.৩৫ ডেসিবল, যা আগের গড় ৯২.০৩ ডেসিবল থেকে ২.৯১% কম। আর স্কলাস্টিকা স্কুল পয়েন্টে শব্দমাত্রা ছিল ৮৪.৮৬ ডেসিবল।
যা পূর্বের গড় ৮৬.৩২ ডেসিবল থেকে ১.৬৯% কম। এর বাইরে দুই মাস পর লা মেরিডিয়ান হোটেলে শব্দমাত্রা ছিল ৮৪.৩৫ ডেসিবল, যা কার্যকরের পূর্বের গড় থেকে ৮.৩৪% কম।
দূষণের উৎস বলতে গিয়ে তিনি জানান, প্রধানত যানবাহন (হর্ন, ইঞ্জিন ও চাকার কম্পন), নির্মাণকাজ (ইট ও পাথর ভাঙার মেস, কলকারখানা, জেনারেটর এবং সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাইকিং থেকে তা গুরুতর পরিবেশগত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা শহরের অধিকাংশ এলাকায় শব্দ গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি। ফলে মানুষ হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ততা, বয়স্কদের শ্রবণশক্তি হ্রাস এবং পরিবেশ ও বন্যপ্রাণীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এর আগে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, বিআরটিএ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ডিএমপির সহযোগিতায় গত ১ অক্টোবর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়। যার আয়তন ছিল ১.৫ কিলোমিটার উত্তর থেকে ১.৫ কিমি. দক্ষিণ পর্যন্ত মোট ৩ কিলোমিটার।
এর আগেও সরকার বাংলাদেশ সচিবালয় এলাকাকে ২০১৯ সালে, শিশুমেলা, গণভবন, বিজয় সরণি, স্পারসো, বোকেয়া সরণি, পরিসংখ্যান ভবনের সম্মুখে, শহীদ শাহাবুদ্দিন সড়ক, বীরউত্তম খালেদ মোশারফ এভিনিউ এবং সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ সড়ক ২০২০ সালে নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা